অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানা রঙের দিন নাটকের প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা

অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানা রঙের দিন নাটকের প্রশ্ন ও উত্তর: প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন (HS Bengali Suggestion) থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সিলেবাসের অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের "নানা রঙের দিন" নাটকের সমস্ত প্রশ্নোত্তর। 

অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানা রঙের দিন নাটকের প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা

এখানে উচ্চমাধ্যমিক বাংলা ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের প্রশ্ন উত্তর যেমন বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল। যে গুলি পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন। নিচে ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের MCQ, SAQ প্রশ্ন উত্তর গুলি যত্ন সহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।


নানা রঙের দিন - অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়


‘নানা রঙের দিন’ নাটকটি আন্তন চেকভের ‘Swan Song’  নাটকের অনুকরনে রচিত। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় অনেকগুলি নাটক অনুবাদও করেছিলেন। যদিও অনুবাদের ক্ষেত্রেও তাঁর স্বকীয়তা চোখে পড়ার মতো। আলোচ্য নাটকেও নাট্যকারের নিজস্বতা মিশে রয়েছে। আলোচ্য পোস্টে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।


Google News এ আমাদের ফলো করুন


Gksolves Google News


অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানা রঙের দিন নাটকের প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা


নানা রঙের দিন নাটকের নাট্যকার পরিচিতি

অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৩৩-১৯৮৩): জন্ম: ১৯৩৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। সাবেক মানভূম জেলা, এখন বর্ধমানের রােপােগ্রামে। বাবা ভুবনমােহন বন্দ্যোপাধ্যায়, মা লক্ষ্মীরানী বন্দ্যোপাধ্যায়। কুলটি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক, বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে আই এস সি এবং কলকাতার মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজ থেকে বিএ। পরে ইংরেজিতে স্পেশাল অনার্স পাশ। শিক্ষকতা করেছেন প্রথম দমদমের মতিলাল বিদ্যায়তনে এবং পরে বাগুইহাটির হিন্দুবিদ্যাপীঠে। ছাত্রজীবন থেকে অজিতেশ নাটক রচনা ও অভিনয়ে আগ্রহী। ১৯৫৪ সালে লিখেছেন মৌলিক পূর্ণাঙ্গ নাটক ‘সংঘাত। ১৯৫৬ সালে ভারতীয় গণনাট্য সংঘে যােগ দেন। ১৯৬০ - এর ২৯ জুন প্রতিষ্ঠা করেন নান্দীকার’। এই নাট্যদলের ৩৪ টি নাটকে অজিতেশ রূপান্তর / নির্দেশনা / অভিনয়সূত্রে যুক্ত ছিলেন। নাটকগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রযােজনা অবিস্মরণীয়। যেমন, ‘সেতুবন্ধন’, ‘চার অধ্যায়’, ‘নাট্যকারের সন্ধানে ছটি চরিত্র’, ‘নানারঙের দিন’, ‘মঞ্জরী আমের মঞ্জরী’, ‘যখন একা’, ‘শের আফগান’, ‘তিন পয়সার পালা’, ‘নটী বিনােদিনী’, ‘ভালােমানুষ’, ‘আন্তিগােনে, ‘সওদাগরের নৌকা ইত্যাদি। ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭ ‘নান্দীমুখ’ নামে নতুন নাট্যগােষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন। এদের বিখ্যাত প্রযােজনা তলস্তয়ের পাওয়ার অফ ডার্কনেস অবলম্বনে রূপান্তরিত নাটক ‘পাপপুণ্য’। পেশাদারি মঞে অজিতেশ ‘থানা থেকে আসছি’, ‘বাঘিনী’ ও ‘এই অরণ্যে’ নাটকে অভিনয় করেছেন। বাংলা ও হিন্দি মিলে ৫০ টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। যেমন, ‘অতিথি’, ‘ছুটি’, ‘মহাবিপ্লবী অরবিন্দ’, ‘হাটেবাজারে’, সাগিনা মাহাতাে’, ‘এক আধুরী কহানি’ইত্যাদি। বেতারে ও দুরদর্শনে বহু নাটকের প্রযােজনা, নির্দেশনা ও অভিনয়ে ছিলেন অজিতেশ। যাত্রা করেছেন। সুর দিয়েছেন। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৌলিক ও রূপান্তরিত নাটকের সংখ্যা ২৬। এদের মধ্যে আছে ‘সওদাগরের নৌকা’, ‘মঞ্জরী আমের মঞ্জরী, ‘ভালােমানুষ’, ‘পাপপুণ্য’, ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ’, ‘মুদ্রারাক্ষস '। বাংলা নাটম প্রতিষ্ঠা সমিতির প্রযােজনায় মঞ্চস্থ হয় বিশাখদত্তের মুদ্রারাক্ষস’। নাটকের নির্দেশনা ও অভিনয়ে ছিলেন অজিতেশ। এই বিপুল ব্যস্ততার মধ্যেই তিনি লিখেছেন উপন্যাস ‘ভালাে লেগেছিল। বহু প্রবন্ধ ও ছােটোগল্প লিখেছেন, অনুবাদ করেছেন কবিতা। অজিতেশ পশ্চিমবঙ্গ সরকার ছাড়াও মস্কো নিউজ ক্লাব ক্রিটিক সার্কল অব ইন্ডিয়া, দিশারী, রঙ্গসভা ইত্যাদি বহু সংস্থা কর্তৃক পুরস্কৃত হন। লাভ করেন সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার। ১৯৮০ সালের ১৪ অক্টোবর তিনি আকস্মিকভাবে প্রয়াত হন। 


নানা রঙের দিন নাটকের নাটক প্রসঙ্গে

‘নানা রঙের দিন’ নাটকটি আন্তন চেকভের ‘Swan Song’  নাটকের অনুকরনে রচিত। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় অনেকগুলি নাটক অনুবাদও করেছিলেন। যদিও অনুবাদের ক্ষেত্রেও তাঁর স্বকীয়তা চোখে পড়ার মতো। আলোচ্য নাটকেও নাট্যকারের নিজস্বতা মিশে রয়েছে।


নানা রঙের দিন নাটকের চরিত্র ও প্রেক্ষাপট

‘নানা রঙের দিন’ নাটকের চরিত্র দুটি। একজন হলেন রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়(৬৮ বছর) এবং অপরজন কালীনাথ সেন (৬০বছর)। রজনীবাবু হলেন পেশাদারি থিয়েটারের একজন প্রাক্তন অভিনেতা এবং কালিনাথ সেই থিয়েটারের প্রম্পটার।  

নাটকের প্রেক্ষাপট- পেশাদারি নাটকের ফাঁকা রঙ্গমঞ্চ। নাটক শেষ হয়ে গেছে এবং সকল পাত্রপাত্রী, দর্শক চলে গেছে। সেই শুন্য মঞ্চে রজনীবাবুর আগমণ ঘটে। 


নানা রঙের দিন নাটকের কাহিনি সংক্ষেপ

নাটক শেষ হয়ে গেছে। সমস্ত কলাকুশলী, দর্শক সব পালিয়ে গেছে। এমন সময় ঘুম ভাঙল বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীবাবুর। মদ খেয়ে গ্রিনরুমেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি। তখন গভীর রাত এবং চারিদিক শুনশান। এতবড় থিয়েটার তখন খাঁখাঁ করছে।রজনীবাবুর বেশ ভয় ভয় করছিল। এই নিস্তব্ধ-গভীর রাতে শুরু হল আত্মকথন। তেইশ বছর বয়সে থিয়েটারের জগতে পা রেখেছিলেন তিনি। এখন তার বয়স আটষট্টি। তার পঁয়তাল্লিশ বছরের থিয়েটার জীবনের ইতিহাস খোলা পাতার মতো তার সামনে হাজির। এখন তিনি বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়। যতই তিনি চুলে হাফশিশি কলপ লাগিয়ে বা কমবয়সীদের সঙ্গে ঠাট্টা-তামাশা করে দিন কাটান, বয়স তো তার হয়েছে। দীর্ঘ আটষট্টি বছর একপা একপা করে তিনি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছেন। রাত্রির নির্জনতা আর মৃত্যু তার কাছে একরকম মনে হয়। এমনকি চিতার আগুনের তাপটাও তিনি অনুভব করতে পারেন।

এমন সময় তাদের প্রম্পটার কালীনাথ সেন এসে হাজির হয়। কালীনাথের নিজের ঘর নেই তাই থিয়েটারে শুয়েই রাত কাটায় সে। তাকে দেখে রজনীবাবু প্রথমে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। যাইহোক, কালীনাথের সামনে এবার রজনীবাবু তার জীবনের সংক্ষিপ্ত ইথিহাস তুলে ধরেন। যখন তার বয়স কম ছিল একটি মেয়ে তার অভিনয় দেখে প্রেমে পড়েছিল। বড়লোকের সুন্দরী সেই মেয়ে দীর্ঘদিন ধরে রজনীবাবুর সঙ্গে প্রেম করেও তাকে বিয়ে করতে রাজী হয়নি। এরপর রজনীবাবু সম্পুর্ন ভেঙ্গে পড়েছিলেন। জীবনকে নিয়ে তার সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছিল। এরপর থেকে শুধুই থিয়েটার আর অভিনয়- নিজের দিকে তাকাবার সময়ও তিনি পাননি। আজ যখন ফাঁকা মঞ্চে একা দাঁড়িয়ে ছিলেন তখন বুঝলেন যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। সেই মেয়েটির কোনো খবর তিনি পাননি, তবে রজনীবাবু আজ সম্পুর্ন একা।

তিনি প্রতিভাবান অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়, তাই বয়সে তার কী যায় আসে? এইজন্য তিনি কালীনাথের সামনে পুরনো দিনের একএকটা নাটকের সংলাপ গড়গড় করে বলতে থাকেন। তিনি যেন মনে প্রাণে প্রমাণ করতে চান যে বয়স বাড়লেও কিন্তু তার প্রতিভা মরেনি। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি স্বীকার করে নেন- “আমাদের দিন ফুরিয়েছে”। সময় সবথেকে বলবান। সে নিষ্ঠুরভাবে মানুষের নাম-যশ-প্রতিভা-যৌবন সব কিছু কেড়ে নিয়ে মানুষকে নিঃস্ব করে দেয়। জীবনের চরম সত্য যে মৃত্যু একথা তিনি মনে মনে স্বীকার করে নেন।


নানা রঙের দিন MCQ প্রশ্ন ও উত্তর (বহু বিকল্প ভিত্তিক)


1. “শাহজাদী ! সম্রাটনন্দিনী ! মৃত্যুভয় দেখাও কাহারে ?” – কোন নাটকের সংকল্প ?

(A) জনা 

(B) মেবার পতন

(C) রিজিয়া

(D) নূরজাহান

Ans: (C) রিজিয়া


2. “গ্রিনরুমে ঘুমায় …” কে ঘুমোন ?

(A) ককীনাথ সেন

(B) রামব্রীজ

(C) রজনীকান্ত সেন

(D) রামচরণ

Ans: (A) ককীনাথ সেন


3. “রাজনীতি বড় কুট” – বক্তা হলেন –

(A) মোরাদ 

(B) যশবন্ত

(C) ঔরঙ্গজেব

(D) শাহজাহান

Ans: (C) ঔরঙ্গজেব


4. “আমার শিরায় শিরায় কী জল বইছে ? রক্ত বইছে না ? বিক্তার শিরায় শিরায় বইছে –

(A) রাজরক্ত

(B) নেশার রক্ত

(C) সদবংশের রক্ত

(D) পবিত্র রক্ত

Ans: (C) সদবংশের রক্ত


5. “এক পা এক পা করে এগিয়ে চলেছে” – 

(A) গ্রিনরুমের দিকে

(B) মৃত্যুর দিকে

(C) অডিটোরিয়ামের দিকে

(D) বাড়ির দিকে

Ans: (B) মৃত্যুর দিকে 


6. “মাইরি এইনা হল অ্যকটিং !” – একথা বলেছে – 

(A) কালীনাথ 

(B) রজনী বাবু

(C) দর্শক

(D) রামব্রিজ

Ans: (B) রজনী বাবু


7. “Life is a walking shadow” – কোন নাটকে কথাগুলি আছে ?

(A) ম্যাকবেথ

(B) কিংলিয়র

(C) হ্যামলেট 

(D) ওথেলো

Ans: (D) ওথেলো


8. ‘নানা রঙের দিন' নাটকের অভিনেতা রজনীকান্তর বয়স –

(A) ৫০ বছর 

(B) ৬৮ বছর

(C) ৬০ বছর

(D) ৭০ বছর

Ans: (B) ৬৮ বছর


9.“তাহলে সে রাজনীতি আমার জন্য নয় ।” – সংলাপটি কার – 

(A) মিরজুমলা 

(B) সিরাজ

(C) কালীনাথ

(D) রজনী

Ans: (C) কালীনাথ


10 “শিল্পকে যে মানুষ ভালোবেসেছে” – তার – 

(A) একতিত্ত নেই

(B) বার্ধক্য নেই

(C) রোগ নেই

(D) মৃত্যু নেই

Ans: (B) বার্ধক্য নেই


11. “আর জীবনে, ভোর নেই, সকাল নেই, দুপুর নেই – সন্ধেও ফুরিয়েছে – এখন শুধু” – 

(A) মৃত্যুর অপেক্ষা

(B) মাঝরাত্রির অপেক্ষা

(C) বার্ধক্যর অপেক্ষা

(D) স্বপনের অপেক্ষা

Ans: (B) মাঝরাত্রির অপেক্ষা


12. “Farewell the tranquil mind! farewell content !” – কথাগুলো – 

(A) ওথেলের

(B) ম্যাকবেথের

(C) সিরাজের

(D) অন্টোনিয়োর

Ans: (A) ওথেলের


13. “এ সব থিয়েটারী ভাষায় কী বকছেন বলুন তো ?” 

(A) প্রলাপ

(B) বেতাল

(C) বেচাল

(D) আবোল – তাবোল

Ans: (D) আবোল – তাবোল


14. “তারপর একদিন চাকরিটা ছেড়ে দিলাম” – কারণ – 

(A) স্বাধীনতাভাবে জীবন চালাতে লাগলাম

(B) নাটক নিয়ে জীবন শুরু করলাম

(C) ভালো চাকরির আসায় তৈরি হতে লাগলাম

(D) ব্যাবসায়ী হওয়ার তালিম চলতে লাগল

Ans: (B) নাটক নিয়ে জীবন শুরু করলাম


নানা রঙের দিন SAQ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর


1. ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের প্রারম্ভে মঞ্চসজ্জার কীরকম বর্ণনা দেওয়া আছে?

Ans: পেশাদারি থিয়েটারের একটি ফাকা মঞ্জু। মঞ্চের পেছনে রাত্রে অভিনীত নাটকের দৃশ্যপট, জিনিসপত্র, যন্ত্রপাতি। মঞ্চের মাঝখানে একটি টুল ওলটানো চারিদিকে অন্ধকার। দিলদারের পোষাক পরে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় প্রবেশ করেন। তার হাতে একটা মোমবাতি। তিনি হাসছেন।


2. “বকশিশও দিলুম ওকে।”—কে, কাকে, কত বকশিশ দিয়েছিলেন?

Ans: রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় থিয়েটার হলের কর্মী রামব্রীজকে তিন টাকা বকশিস দিয়েছিলেন।


3. “সব মিলিয়ে যেন একটা শ্মশান।”—কোন্ স্থানকে শ্মশান বলে মনে হয়েছে?

Ans: অভিনয় শেষে দর্শকশূন্য থিয়েটার হলকে শ্মশান বলে মনে হয়েছে।


4. “যা করেছি ধর্মের জন্য”—‘সাজাহান’ নাটকে এই সংলাপটি কার?

Ans: ‘সাজাহান’ নাটকে এই সংলাপটি ঔরঙ্গজেবের।


5. “একটুও ভালো লাগে না বাড়িতে!”- বক্তার কেন বাড়িতে ভালো লাগে না।

Ans: বক্তা রজনীকান্তের বাড়িতে নিজের বলতে কেউ নেই। তিনি এই পৃথিবীতে একা। তাই বাড়িতে তাঁর ভালো লাগে না।


6. “এসব বাজে কথা আমি বিশ্বাস করি না।”— বক্তা কোন কথাকে বাজে কথা বলেছেন?

Ans: দর্শকদের ফাঁকা হাততালি, খবরের কাগজে প্রশংসা, মেডেলে, সার্টিফিকেট আর নাট্যভিনয় একটি পবিত্রশিল্পের মতো মন্তব্যকে বক্তা বাজে কথা বলেছেন।


7. “অভিনেতা মানে একটা চাকর—একটা জোকার, একটা ক্লাউন।”—বক্কার এমন কথা মনে হয়েছে কেন?

Ans: বক্তা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় স্বনামধন্য অভিনেতা। তাঁর অভিনয় দক্ষতা দেখে সকলেই মুগ্ধ। কিন্তু ‘নাটকওয়ালা’ অপবাদে একটি মেয়ে তাঁকে ভালোবেসেও বিয়ে করেনি। এই জন্যই বক্তার এমন কথা মনে হয়েছে।


8. “এই তো জীবনের সত্য কালীনাথ” – সত্যটি কী ?

Ans: প্রতিভা অমর। বয়সের ভারে মানুষ ভারাক্রান্ত হলেও প্রতিভার বার্ধক্য তুচ্ছ—এটাই জীবনের সত্য।


9. “ভোরের আলোর চেয়েও সুন্দর সে।”—সে বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?

Ans: রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে যে মেয়েটি তাঁকে ভালোবেসেছিল, এখানে তার কথাই বলা হয়েছে।


10. “হঠাৎ যেন আমার চোখ খুলে গেল।”—কীভাবে বক্তার চোখ খুলে গেল?

Ans: রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় দেখে একটি মেয়ে তাঁকে ভালোবেসেছিল| কিন্তু বড়ো লোকের সুন্দরী সেই মেয়েটি থিয়েটারের লোকের সঙ্গে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। এই ঘটনায় অভিনেতা সম্পর্কে মানুষের মনোভাবের কথা জানতে পেরে রজনীকান্তের চোখ খুলে যায়।


11. “যাবার আগে মজলিশি গল্পের আস্তাকুঁড়ে নির্বাসন দিয়ে গেল আমাকে।”—কার যাবার কথা বলা হয়েছে?

Ans: এখানে খ্যাতিমান অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিভার চলে যাওয়াকেই নির্দেশ করা হয়েছে।


12. “আমাকে কেউ চায় না কালীনাথ।” –বক্তা কেন একথা বলেছেন?

Ans: বৃদ্ধ রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় জীবন সায়াহ্নে উপনীত হয়ে উপলব্ধি করেছেন জীবনে হিসাবের খাতায় জমার দিকে পড়ে আছে শূন্য। মানুষ এখন আর তাঁকে আগের মতো কদর করে না। তাই নিজের পরিণামের কথা ভেবে তিনি আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।


13. “তোমার চোখে জল, কেন বলতো?”—শ্রোতার চোখে জল আসার কারণ কী?

Ans: বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের ট্র্যাজিক জীবনের কথা শুনে শ্রোতা কালীনাথের চোখে জল এসেছিল।


14. “রাজনীতি বড়ো কূট।”—এ কথা কে বলেছিলেন?

Ans: ‘সাজাহান’ নাটকে ঔরঙ্গজেবের উক্তি। তবে নানা রঙের দিন’ নাটকে উত্তিটি রজনীকান্ত চাটুজ্জের গলায় শোনা গেছে।


15. “সম্রাট নন্দিনী! মৃত্যুভয় দেখাও কাহারে?”—কোন্ নাটকে, কার সংলাপ?

Ans: দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘রিজিয়া’ নাটকে বক্তিয়ারের সংলাপ।


16. ’নানা রঙের দিন’ নাটকটি কোন্ বিদেশি নাটকের অনুকরণে রচিত?

Ans: ‘নানা রঙের দিন’ নাটকটি অন্তন চেকভের ‘দ্য সোয়ান সভ্ নাটকের অনুকরণে রচিত।


17. “কাম অন, কুইক! মহম্মদের ক্যাচটা দাও তো।”—কে মহম্মদের ক্যাচ দিয়েছিলেন?

Ans: প্রম্পটার কালীনাথ মহম্মদের ক্যাচ দিয়েছিলেন।


18. “চাকরিটি ছেড়ে দিলাম।” বক্তা কীসের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন?

Ans: বক্তা (রজনীকান্ত) পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন।


19. “কোনো জবাব আছে?”—কোন্ কথার জবাব?

Ans: ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় নিজেই নিজেকে বলেছেন—‘রজনীবাবু অনেক তো বয়েস হল, এবার মদ খাওয়াটা ছাড়ুন| এই জবাবের কথাই এখানে বলা হয়েছে।


20. “বুকটা ভীষণ কাঁপছে”—কার বুক, কেন কাপছিল? 

Ans: নানা রঙের দিন’ নাটকে অতিরিক্ত মদ্যপানে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় বেসামাল হয়ে পড়েছিলেন। তাই তাঁর বুক কাপছিল।


21. ’নানা রঙের দিন’ নাটকে প্রম্পটার কালীনাথের পোষাক কেমন ছিল?

Ans: কালীনাথের পরনে ছিল ময়লা পাজামা আর গায়ে কালো চাদর


22. “মরে যাব তবু ভুলব না।” –বা কী ভুলবেন না? Ans: যে মেয়েটি অভিনয় দেখে রজনীবাবুকে ভালোবেসেছিল, বক্তা তাঁর কথা ভুলবেন না বলে জানিয়েছেন।


23. “আমি ওকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।”—বক্কা কাকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলেন?

Ans: যে মেয়েটি অভিনয় দেখে রজনীবাবুকে ভালোবেসেছিল, বক্তা তাঁকেই স্মৃতির সরণিতে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন।


24. “সেই রাত্রেই জীবনে প্রথম মোক্ষম বুঝলুম…” –বক্তা কী বুঝেছিলেন?

Ans: ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় বুঝেছিলেন যে, ‘নাট্যাভিনয় একটি পবিত্র শিল্প’—এই কথা যারা বলে তারা সব গাধা, তারা সব মিথ্যা কথা বলে।


25. “মরা হাতি সোয়া লাখ।”—কার সম্পর্কে, কোন্ প্রসঙ্গে এমন প্রবাদ প্রয়োগ করা হয়েছে?

Ans: বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় তাঁর অভিনয়ে দর্শকদের প্রতিক্রিয়ার কথা বলতে গিয়ে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।


26. “দু-বার তো স্পষ্ট শুনেছি।”— বক্কা কী শুনেছিলেন?

Ans: বক্তা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় দিলদার চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের সাতটা হাততালি পেয়েছিলেন। তার মধ্যে দুবার তিনি সেই হাততালি শুনতে পেয়েছিলেন।


27. “আপনার পায়ে ধরছি।”—বক্তা কেন, কার পায়ে ধরেছিল?

Ans: বক্তা কালীনাথের শোয়ার জায়গা নেই বলে রাত্রিতে গ্রিনরুমে ঘুমায়। এ কথা মালিকের কানে না তোলার জন্য কালীনাথ রজনীবাবুর পায়ে ধরে অনুরোধ করেছিল।


28. “আমারও আর কিছু ভালো লাগত না” –বক্তার কিছু ভালো না লাগার কারণ কী?

Ans: অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের প্রধান চরিত্র রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের কিছু ভালো না লাগার কারণ হল যে, নাট্যশিল্পকে তিনি জীবনের মূল স্তম্ভ হিসেবে আঁকড়ে ধরেছেন সেই নাট্যশিল্পের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা মেকি বলে অনুভূত হওয়া।


29. ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের প্রারম্ভে মঞ্জুসজ্জার কীরকম বর্ণনা দেওয়া আছে?

Ans: ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের প্রারম্ভে মঞ্চের পিছনে ছিল অভিনীত নাটকের অবশিষ্ট দৃশ্যপট, জিনিসপত্র আর যন্ত্রপাতি। মঞের মাঝখানে একটি টুল ওলটানো অবস্থায় দেখা যায়। সময় ছিল অন্ধকারময় রাত্রি।


30. “কাম অন, কুইক। মহম্মদের ক্যাচটা দাও তো”– মহম্মদ কে? কে মহম্মদের ক্যাচ দিয়েছিলেন?

Ans: মহম্মদ এক ঐতিহাসিক চরিত্র, ঔরঙ্গজেবের পুত্র। মা। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘সাজাহান’ নাটকে চরিত্রটির উল্লেখ আছে। মহম্মদের ক্যাচ দিয়েছিলেন প্রম্পটার কালীনাথ সেন।


31. “তারপর সেসব দিনও যেন কবে—কেমন করে ফুরিয়ে গেল,”—এখানে কোন্ দিনের কথা বলা হয়েছে?

Ans: অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়ে অভিনয় জীবনে পদার্পণের পর প্রভূত খ্যাতি ও প্রতিপত্তি অর্জন করেন। অভিনয় জীবনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে যখন রজনীকান্ত এই মেকি মর্যাদা লাভ করেন, সেই সময়ের কথা, সেই দিনগুলির কথাই এখানে বলা হয়েছে।


32. রজনীকান্ত যে মেয়েটিকে ভালোবেসেছিলেন, সে কোন্ শর্তে তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল?

Ans: থিয়েটার ছেড়ে দেওয়ার শর্তে সে তাঁকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল।


নানা রঙের দিন সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর


প্রশ্নঃ “দিলুম, তোকে বকশিশ দিলুম,” —কে, কাকে বকশিশ দিয়েছিল?

উত্তরঃ গ্রিনরুমে ঘুমন্ত মদ্যপ রজনীকান্ত, রামব্রীজকে বকশিশ দিয়েছিল।


প্রশ্নঃ “মাতালের এই হচ্ছে বিপদ।” —মাতালের বিপদ কী?

উত্তরঃ মাতালের বিপদ হচ্ছে মদ ছাড়াতে চাইলেও ছাড়াতে পারে না। 


প্রশ্নঃ “রজনীবাবু ভয়ে চিৎকার করে পিছিয়ে যান” —কাকে কী  অবস্থায় দেখে রজনীবাবু ভয়  পেয়েছিলেন?

উত্তরঃ কালীনাথ সেন কে ময়লা পাজামা, গায়ে কালো চাদর ও এলোমেলো চুলে দেখে রাজনীবাবু ভয় পেয়েছিলেন।


প্রশ্নঃ “আপনি বামুন মানুষ, মিছে কথা বলব না।” —বক্তা কোন সত্যি কথাটি বলেছিল?

উত্তরঃ বক্তা কালীনাথ সেনের সত্য কথাটি হল যে, তিনি রোজ লুকিয়ে লুকিয়ে গ্রিনরুমে ঘুমোন। 


প্রশ্নঃ “আর একদিন তাকে দেখে মনে হয়েছিল” —কাকে দেখে কী মনে হয়েছিল?

উত্তরঃ রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের প্রেমিকাকে দেখে তাঁর মনে হয়েছিল, সে ভোরের আলোর চেয়েও সুন্দর। 


প্রশ্নঃ “সেই রাত্রেই জীবনে প্রথম মোক্ষম বুঝলুম” —বক্তা কী বুঝিয়েছিলেন?

উত্তরঃ থিয়েটারে অভিনয় দেখে প্রেমে পড়া মেয়েটি বিয়ের সময় রজনীকান্তকে অভিনয় ছেড়ে দিতে বললে সেই রাতেই রজনীকান্ত বুঝেছিলেন যে, যারা নাট্যাভিনয়কে পবিত্র শিল্প বলে তারা সব গাধা। 


প্রশ্নঃ “খুব খারাপ হচ্ছে না, কী বলো ?” —কী খারাপ হচ্ছে না?

উত্তরঃ দ্বিজেন্দ্রলালের ‘রিজিয়া’ নাটকের একটি সংলাপ বলেছেন রজনীবাবু, এখানে সেই সংলাপটি খারাপ না হওয়ার কথা বলা হয়েছে। 


প্রশ্নঃ ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে রজনীকান্ত, ঔরঙ্গজেব ও মহম্মদের যে দৃশ্যের কথা বলেছিলেন সেটি কোন নাটকের অংশ?

উত্তরঃ ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে রজনীকান্ত, ঔরঙ্গজেব ও মহম্মদের যে দৃশ্যের কথা বলেছিলেন সেটি ‘শাজাহান’ নাটকের অংশ। 


প্রশ্নঃ ‘রাজনীতি বড়ো কূট।’ —কেন?

উত্তরঃ রাজনীতিতে কোন সম্পর্ক বজায় থাকে না। সেখানে ধর্মের নাম চলে বিস্বাসঘাতকতা। তাই ‘রাজনীতি বড়ো কূট’। 


নানা রঙের দিন রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর


1. “আমার জীবনে পয়তাল্লিশটা বছর” –কার জীবনের কথা বলা হয়েছে? পয়তাল্লিশ বছরের জীবনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

Ans: প্রদত্ত উক্তিতে বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় তাঁর নিজের জীবন কথা ব্যক্ত করেছেন। তিনি অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের অন্যতম চরিত্র।

এই নাটকে রজনীকান্তকে আমরা পাই ৬৮ বছরের এক বৃদ্ধ অভিনেতা রূপে, যাঁর অভিনয় জীবন ৪৫ বছরের। অভিনয় শেষে মাতাল অবস্থায় ‘দিলদারের’ বেশে তাঁকে দেখা যায়।

একাকিত্ব তার জীবনযন্ত্রণার অন্যতম কারণ। তার নিজের বলতে কেউ নেই, সেজন্য থিয়েটার শো-এর পরে তাঁর বাড়ি ফেরার তাড়া নেই। এমনকি—তিনি মরে গেলেও তাঁর জন্য ভাবার কেউ নেই, এমন আক্ষেপ তাকে কুরে কুরে খায়।

নিজের বংশমর্যাদা সম্পর্কে রজনীকান্ত সচেতন—“রাঢ়ের সবচেয়ে প্রাচীন ভদ্র ব্রাহ্মণ বংশে জন্মেছিলুম।” অভিনয় জীবনে প্রবেশ করার আগে পুলিশের চাকরি পেয়েছিলেন, কিন্তু নাটকের প্রতি গভীর আকর্ষণ তাঁকে টেনে আনে থিয়েটারে। আর এই থিয়েটারকে কেন্দ্র করেই আসে যৌবনের প্রথম প্রেম ৷ দুজনেই দুজনকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন, কিন্তু তাদের সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়াল শেষ পর্যন্ত থিয়েটার।

দীর্ঘ অভিনয় জীবনের শেষে রজনীকান্ত তাঁর জীবনের চাওয়া পাওয়ার হিসাবনিকাশে পূর্ণ করে চলেছেন ব্যর্থতার ঝুলি। যে থিয়েটারকে তিনি মনে করতেন ‘পবিত্র শিল্প’ সেই থিয়েটার থেকে তিনি পাননি যথার্থ সম্মান। বরং, অবহেলা আর অবজ্ঞা যেন আজ তাঁর সম্বল। নিজের প্রতি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবকে স্বীকার করেন “হায়রে প্রতিভা! কোথায় গেল বলো তো?”— এভাবেই পরাজিত নায়কের মতো রজনীকান্ত বিদায় নিতে চান নাট্যমঞ্চ —থকে এবং জীবনের রঙ্গমঞ্চ থেকে।


2.‘নানা রঙের দিন’ নাটক অবলম্বনে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

Ans: অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের অন্যতম চরিত্র হল বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় ৷ এই প্রৌঢ় অভিনেতা তার দীর্ঘ অভিনয় জীবনে থিয়েটার শিল্পের প্রতি নিষ্ঠাবান থেকেও প্রতিদানে কোনো সম্মান পাননি বরং পেয়েছেন একাকিত্বের যন্ত্রণা। এই যন্ত্রণাবোধ থেকেই বাস্তবতার কঠিন সত্যকে মেনে নিয়ে রজনীকান্ত চরিত্রের নানাবিধ বিচিত্র দিক প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে।

মাদকাসক্ত আটষট্টি বছর বয়সের প্রৌঢ় অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় চরিত্রের একটি অন্যতম দিক হল থিয়েটার জগতের প্রতি ভালোবাসা ও আকর্ষণ। তাই তিনি থিয়েটারকে বলেছেন ‘পবিত্র শিল্প’। থিয়েটার জগতের প্রতি আত্মমগ্ন হয়ে তিনি পুলিশ ইনস্পেকটরের চাকরিকেও ছেড়ে দিতে দ্বিধাবোধ করেননি। এমনকি এই থিয়েটার কেড়ে নিয়েছে তাঁর প্রথম যৌবনের প্রেমকেও। একাকী জীবনের পথে তাই থিয়েটারই হয়েছে তার সর্বস্ব।

নিজের বংশ পরিচয় তথা বংশমর্যাদা সম্পর্কে রজনীকান্ত ছিলেন বিশেষ সচেতন। তিনি তাঁর বংশমর্যাদা সম্পর্কে অবগত করতে বলেছেন-“রাঢ়ের সবচেয়ে প্রাচীন ভদ্র ব্রাহ্মণ বংশে জন্মেছিলুম।”

সেসময় থিয়েটার জগতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিচরিত্রের একটি সাধারণ চারিত্রিক দোষ ছিল মাদকাসক্তি। সেই দোষে রজনীকান্তও আসক্ত ছিলেন। তাই তাঁকে অভিনয় শেষে মদ্যপ অবস্থায় গ্রিনরুমে ‘দিলদারের’ বেশে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

একজন অভিনেতা হিসেবে রজনীকান্তের উপলব্ধি, থিয়েটার দর্শকবৃন্দের কাছে কেবলমাত্র আনন্দ-বিনোদনের মাধ্যম। অভিনেতার অভিনয়ে হাততালি দেওয়া ছাড়াও তাঁকে। যে সামাজিক মর্যাদাটুকুও দেওয়া প্রয়োজন তা তারা মনে করে না। যদিও প্রম্পটার কালীনাথ সেন রজনীকান্তকে তাঁর প্রতিভার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছে—“আপনার প্রতিভা এখনও মরেনি চাটুজ্জেমশাই।” তবে এক সময় পরাজিত নায়কের মতো বাস্তবকে স্বীকার করে নেন রজনীকান্ত—“হায়রে প্রতিভা। কোথায় গেল বলো তো?” এইভাবেই রজনীকান্ত চরিত্রটি অন্তিম পরিণতি প্রাপ্তির পথে নাট্যমঞের জগৎ থেকে বিদায় নিতে চেয়েছে।


3.“শিল্পকে যে-মানুষ ভালোবেসেছে—তার বার্ধক্য নেই কালীনাথ,”—’নানা রঙের দিন’ নাটক অবলম্বনে মন্তব্যটির তাৎপর্য লেখো।

Ans: একাধারে মঞাভিনেতা-নির্দেশক নাট্যকার অজিতেশ। বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত একাঙ্ক নাটক ‘নানা রঙের দিন’। প্রতিভাবান। নাট্য অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের জীবনকাহিনি অবলম্বনে। নাট্যকাহিনি আবর্তিত হয়েছে। অভিনয় শিল্পকে আজীবন তিনি ভালোবেসে গেছেন। আপন জীবনাভিজ্ঞতার পারাবার মন্থন করে তার নির্যাস সহকর্মী কালীনাথের সামনে রেখে বলেছেন— “শিল্পকে যে-মানুষ ভালোবেসেছে—তার বার্ধক্য নেই”। রজনীকান্তের আড়ালে এখানে যেন নাট্যকার অজিতেশেরই কণ্ঠ শোনা যায়।

যথার্থ শিল্পী কখনও তার শিল্পীসত্তা থেকে সরে আসতে পারে না। সাধারণ মানুষের মতো দৈহিক বার্ধক্য, দৈহিক দুর্বলতার কাছে সে হার মানে না—এই সত্যই অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় নাটকটিতে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। নাটকের মূল চরিত্র রজনীকান্ত দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে থিয়েটার করছেন। থিয়েটারকে ভালোবেসে তিনি সবকিছু বিসর্জন দিয়েছেন। বিশ্বসংসারে তাঁর আপনজন বলতে নাটক, নাটকের মঞ। তবে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে রক্তমাংসের মানুষ হিসেবে তাঁরও মনে হয়েছে ঘর বলতে তার কিছু নেই—“পৃথিবীতে আমি একা। আমার আপনজন কেউ নেই—”। কিন্তু যখনই আবার নিজের শিল্পী সত্তায় ফিরে এসেছেন শরীরে অনুভব করেছেন উত্তেজনা। রক্তে মিশে থাকা অভিনয় প্রতিভা তাঁকে নতুন উজ্জীবিত করেছে। অভিনয়ের জন্য উদ্দীপনাই তাঁর কাছে জীবনের আর এক নাম। তাঁর শিল্পী সত্তাই তাঁর বার্ধক্য ভুলিয়ে দিয়েছে, একাকিত্ব ভুলিয়ে দিয়েছে, ভুলিয়ে দিয়েছে মৃত্যু ভয়। একজন যথার্থ শিল্পীর আসল জোরের জায়গাটি কোথায় সেটাই নাট্যকার রজনীকান্ত চরিত্রের মধ্য দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।


4. একাঙ্ক নাটক বলতে কী বোঝো? একটি সার্থক একাঙ্ক নাটক হিসেবে ‘নানা রঙের দিন’-এর সার্থকতা বিচার করো।

Ans: বাংলা নাটকের ধারায় একাঙ্ক নাটক বা একাঙ্কিকা নিতান্ত আধুনিক কালের সংযোজন। সাধারণভাবে পঞ্চ অঙ্কে সমাপ্ত, একাধিক চরিত্র ও বেশ কিছু উপকাহিনি বিশিষ্ট এবং দীর্ঘ আয়তন বিশিষ্ট নাটককে আমরা পূর্ণাঙ্গ বা পাঙ্ক নাটক বলি। কিন্তু একাঙ্ক নাটকের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। একটি অঙ্কের মধ্যে বেশ কিছু দৃশ্যের সমাবেশে স্বল্প সংখ্যক চরিত্রের সমবায়ে যে নাটক গড়ে ওঠে তা একাঙ্ক নাটক বা একাঙ্কিকা। এই ধরনের নাটকে ক্ষুদ্র সময় পরিসরে জীবনের এক বৃহত্তর সত্য প্রতিভাসিত হয়। কোনো একটি কেন্দ্রীয় বিষয়ই এর উপজীব্য হয় এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটিমাত্র চরিত্রের একক কথনও সমগ্র নাটকে বিস্তার লাভ করে। স্বল্পায়তনে, ছোটোগল্পের কিছু বৈশিষ্ট্যকে উপজীব্য করে একাঙ্কিকা পূর্ণতার আস্বাদ বহন করে আনে। স্বল্প পরিসরে আকস্মিকভাবে দ্বন্দ্বমূলক বিষয়টির সূচনা, দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত রূপ বা Climax ও রেজোলিউশন ঘনীভূত হয়।

অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানা রঙের দিন’ নাটকটির মধ্যেও প্রায় সর্বাঙ্গীণভাবেই একাঙ্ক নাটকের স্বাদ পাওয়া যায়। নাটকটির সমগ্র ঘটনাবলি একটি রাত্রের কিছু সময়ের মধ্যে এবং একটিই ‘পেশাদারি থিয়েটারের একটি ফাকা মঞ্জু’-এ সীমাবদ্ধ। সমগ্র নাটকে না দৃশ্যান্তর ঘটেছে না অঙ্ক ভেদ এক্ষেত্রে লক্ষিত। কয়েক ঘণ্টার বর্ণনায় নাট্যকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় জীবনের উত্থানপতনের কাহিনি উপস্থাপিত করেছেন। এক সময়ের প্রখ্যাত অভিনেতার প্রৌঢ়ত্বে উপনীত হওয়ায় জনপ্রিয়তায় ঘাটতি আসা, তাঁর একাকিত্ব, বর্তমানকে গ্রহণ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে মানসিক দ্বন্দ্বের প্রকাশ—সবই নাট্যকারের লিখনকৌশলে অনুপুঙ্খ ভঙ্গিতে ফুটে উঠেছে। সেই সঙ্গে নাট্যকার নাট্যাভিনয়কারীদের জীবনের করুণ পরিণতিকেও তুলে ধরেছেন। নাটকের প্রতি দুর্নিবার প্রেম অভিনেতা রজনীকান্তর জীবনে সাংসারিক সুখ লাভের পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে ওঠে। প্রথম জীবনে প্রেম-সংসারকে নিতান্ত ক্ষুদ্র বলে মনে হলেও জীবনের অন্তিম স্তরে পৌঁছে যখন ক্রূর-কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন হন তখন শুধুই বিদায় সংগীত ধ্বনিত হতে থাকে তাঁর অন্তরে। নাটকের ক্ষুদ্র পরিসরে, সংলাপের তীক্ষ্ণবাণে বিদ্ধ করে, ঔরঙ্গজেবের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে যেভাবে নাট্যকার শুধু অভিনেতা রজনীকান্তর জীবনের চরম সত্যকে উপস্থাপিত করতে গিয়ে ক্ষুদ্রত্বের মধ্য দিয়ে বৃহদের ব্যঞ্জনা প্রদান করেছেন তার মাধ্যমে নাটকটি একটি সার্থক একাঙ্কিকা হয়ে উঠেছে।


5. “আমাদের দিন ফুরিয়েছে।”—কে, কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন? বক্তার এই উপলব্ধির কারণ ব্যাখ্যা করো।

Ans: বিখ্যাত নাট্যকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ একাঙ্কিকাটিতে বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের জীবনকথা তাঁরই জবানিতে ব্যক্ত হয়েছে। জীবনসায়াহ্নে উপনীত হয়ে মদ্যপ অবস্থায় খালি স্টেজে মধ্যরাত্রে তিনি তাঁদের নাটকের প্রম্পটার কালীনাথ সেনকে নিজের জীবনের দুঃখাবহ কথা শোনাতে থাকেন। দীর্ঘ এই কথোপকথনের শেষে কালীনাথকে অশ্রুসজল অবস্থায় প্রত্যক্ষ করেই রজনীকান্ত শিল্পীর জীবনের চরম পরিণতির কথা বর্ণনা প্রসঙ্গে আলোচ্য কথাটি বলেছেন।

রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় একজন প্রৌঢ় নাট্যাভিনেতা যিনি তার দীর্ঘ আটষট্টি বছরের জীবনে নাট্যাভিনয়ের প্রতি তীব্র প্রগাঢ় আবেগানুভূতির কারণে বহু দুর্মূল্য ধন হারিয়েছেন। পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি নাট্যাভিনয়ের অঙ্গ হয়ে ওঠেন, প্রেমের দুর্নিবার হাতছানিকেও তিনি নাটক ত্যাগ না করার শর্তে অস্বীকার করেন। জীবনের আলোকময় মুহূর্তে তাঁর যৌবনোদ্দীপ্ত প্রতিভার তেজে অগ্নিময় হয়ে উঠেছে বহু ভক্তের হৃদয়াবেগ কিন্তু নাট্যশিল্পীর আবেদন ভক্তের হৃদয়ে জাগ্রত থাকে শুধুমাত্র তার দেহকান্তি ও শিল্পের উৎকর্ষকে কেন্দ্র করে। দার্শনিক ধারণা অনুযায়ী শিল্পী অমর, তাঁর কর্মকে অবলম্বন করেই তিনি জনমনে চিরজাগ্রত থাকেন। রজনীকান্ত নিজেই বলেছেন—“শিল্পকে যে-মানুষ ভালোবেসেছে— তার বার্ধক্য নেই কালীনাথ, একাকিত্ব নেই, রোগ নেই, মৃত্যুভয়ের ওপর সে তো হাসতে হাসতে ডাকাতি করতে পারে—”। কিন্তু বাস্তব স্পষ্টতই ভিন্ন। জীবনের দীর্ঘসময় অতিবাহিত করার পর তিনি লক্ষ করেছেন প্রতিভা রক্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেও যৌবন ভিন্ন তা অর্থহীন। জীবনে যখন রাত্রি ঘনিয়ে আসে তখন জীবনের পাত্রকে রিক্ত করে দিয়ে প্রতিভা চিরতরে সঙ্গ ত্যাগ করে। জীবন বস্তুতপক্ষে চলমান ছায়ামাত্র, কিছু সময়ের জন্য সে দর্পিত পদক্ষেপে দাপিয়ে বেড়ায় রঙ্গমঞে, কিন্তু তারপর আর তার খোঁজ পাওয়া যায় না। প্রভূত আত্মবিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও যখন রজনীকান্ত কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন হন তখনই তিনি এই উপলব্ধিতে পৌঁছোন।


6. “এখন শুধু মাঝরাত্তিরের অপেক্ষা—এখানেই গল্প শেষ।” –বক্তা মাঝরাত্রির জন্য অপেক্ষা করছেন কেন? ‘এখানেই গল্প শেষ’ বলতেই বা নাট্যকার কী বোঝাতে চেয়েছেন?

Ans: নাট্যকার-মঞাভিনেতা অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় তার নানা রঙের দিন’ নাটকের প্রধান চরিত্র রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের জীবনযন্ত্রণা রূপায়িত করেছেন আলোচ্য একাঙ্কিকাটিতে। প্রৌঢ় অভিনেতার দীর্ঘ ৪৫ বছরের অভিনয়ের প্রতি নিষ্ঠার পরিণতি ব্যাখ্যাত হয়েছে এ নাটকে। মাদকাসক্ত রজনীকান্তর প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল থিয়েটারের প্রতি অদম্য ভালোবাসা ও আকর্ষণ। কিন্তু ক্রমে ক্রমে জীবনে ভোর, সকাল, দ্বিপ্রহর ও সন্ধ্যা অতিক্রম করে এসে তিনি উপলব্ধি করেন তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তে শুরু করেছে। শিল্পীর জীবনে জনপ্রিয়তার অভাব তাকে ক্রমে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়। তাই শুধু জীবনে রাত্রির হাতছানি প্রত্যক্ষ করে নয় তাঁর অভিনয় জীবনের শেষ পাদে উপনীত হয়ে তিনি মাঝরাত্রির অনন্ত নিদ্রার জন্য অপেক্ষমান।

নাট্যকার রজনীকান্তর কাছে অভিনয় তার জীবন তুল্য। পেশাদারি মঞ্চে অভিনয় করাকে তিনি শুধু পেশা হিসেবে নয় জীবনের বিশিষ্ট অধ্যায় হিসেবে গণ্য করেছেন। ক্রমে তাঁর জীবনে অধ্যায় থেকে অধ্যায়ান্তর ঘটেছে, কিন্তু অভিনয়কে অবলম্বন করে সামাজিক সম্মান লাভে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তার প্রেমিকাও তাঁকে বিয়ে করতে রাজি হন মঞঞ্চ ত্যাগের শর্তে। ফলত, রঙ্গমঞ্ঝকে প্রাধান্য দেওয়ায় জীবন থেকে তাঁর প্রেমও হারিয়ে যায়। ক্রমে রজনীকান্তর আত্মবিশ্লেষণে প্রকট হয়ে ওঠে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিও। সমাজের চোখে থিয়েটারওয়ালারা যে শুধুমাত্র ভাঁড় বা নকলনবিশ ছাড়া আর কিছুই নন তা তিনি বুঝতে পারেন। ধীরে ধীরে অভিনয় জগতে তাঁর প্রয়োজন কমতে শুরু করে। যে খ্যাতি, যে সম্মান, যে অমরত্ব তিনি লাভ করতে চেয়েছিলেন সেগুলিই বৃহৎ প্রশ্নচিহ্নের সম্মুখীন হয়। তাই তিনি স্পষ্টতই বুঝেছেন যৌবনান্তে যখন তাঁর খ্যাতিতে ঘাটতি ঘটবে, জীবনের চরম পরিণতি যখন মধ্যরাত্রের কালো ছায়া রূপে তার জীবনে ঘনিয়ে আসবে তখনই ইতি ঘটবে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের জীবনের। শিল্পীর মরণোত্তর জনপ্রিয়তা তাকে যে চিরস্থায়িত্ব প্রদান করে এই মরজগতে তা রজনীকান্তর পক্ষে লাভ করা সম্ভবপর হবে না। এই উপলব্ধিতে উপনীত হয়েই রজনীকান্ত একটি সহজ সত্য অনুধাবন করেছেন যে, জীবনের মধ্যরাত্রি ঘনীভূত হলে তিনি যখন চিরনিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়বেন তখনই শেষ হয়ে যাবে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের গল্প, কেউ তাকে মনে রাখবে না। এ কথা স্পষ্ট করে তোলার জন্যই তিনি গল্প শেষ হওয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন।


7. “… প্রাক্তন অভিনেতা রজনী চাটুজ্জের প্রতিভার অপমৃত্যুর করুণ সংবাদ।”—কে বলেছেন? এই অপমৃত্যু কীভাবে ঘটে বলে বক্তা মনে করেন?

Ans: বক্তা: অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের উল্লিখিত অংশি। বক্তা হলেন বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়।

প্রতিভার অপমৃত্যু: গভীর রাতে মঞের উপরে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় শূন্য অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহের দিকে তাকিয়ে জীবনের ফেলে আসা দিনগুলিকে মনে করেছেন। তীব্র হতাশা এবং কষ্টবোধে ভুগেছেন তিনি। নিজের যৌবনে পুলিশ ইনস্পেকটরের চাকরি ছেড়ে নাটকের জগতে এসেছিলেন তিনি। নাটকের কারণেই তাঁর নামডাক হয়েছিল। ধনী মানুষের একমাত্র মেয়ের সঙ্গে জীবনের একমাত্র প্রেম সম্পর্কটিও হয়েছিল এই অভিনয়ের সূত্রেই। কিন্তু সেই সম্পর্ক ভেঙেও গিয়েছিল এই অভিনয়কে ছাড়তে না পারার জন্যই। আর তখন থেকেই রজনীকান্ত উপলব্ধি করেছিলেন অভিনেতার জীবনের অর্থহীনতাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভিনেতা হিসেবে তাঁর কদরও কমল। গলার কাজ নষ্ট হল, চরিত্রকে বোঝার এবং ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতাও নষ্ট হয়ে গেল। আর এ কারণেই হতাশ রজনীকান্তের মনে হল থিয়েটারের দেওয়ালে কেউ অদযশ্য কালো হাতে যেন লিখে দিয়ে গেছে তাঁর প্রতিভার অপমৃত্যুর করুণ সংবাদ।


Google News এ আমাদের ফলো করুন


Gksolves Google News


ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুকWhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Ads Area