ধ্বনিতত্ত্ব রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ

ধ্বনিতত্ত্ব রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF: প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ধ্বনিতত্ত্ব রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি ধ্বনিতত্ত্ব রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF

ধ্বনিতত্ত্ব রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ

নিচে ধ্বনিতত্ত্ব রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF টি যত্নসহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন। ধ্বনিতত্ত্ব রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন।


ধ্বনিতত্ত্ব রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ


আলোচ্য পোস্টে ধ্বনিতত্ত্বর গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।


ধ্বনিতত্ত্ব রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ


প্রশ্ন: বাংলা অবিভাজ্য ধ্বনি সম্পর্কে আলোচনা কর।

Ans: মানুষ কথা বলার সময় ধ্বনির পর ধ্বনি জুড়ে বাক্য তৈরি করে। এই ধ্বনিসত্তার স্বরূপ বিচার করে ধ্বনিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়- ১) বিভাজ্য ধ্বনি আর ২) অবিভাজ্য ধ্বনি। বিভাজ্য ধ্বনি বলা সেই সব ধ্বনিগত উপাদানগুলিকে যেগুলি পৃথক পৃথক এককে ভাগ করা সম্ভব। আর যেসব ধ্বনিগত উপাদানকে কোনোভাবেই খণ্ড খণ্ড করে প্রকাশ করা যায় না সেগুলিকে অবিভাজ্য ধ্বনি বলে। যেমন- ‘রাম আসবে?’ এই বাক্যটির বিভাজ্য ধ্বনিগুলি হল- র্+ আ+ ম্+ আ+ স্+ ব্+ এ। আর এই বাক্যে অবিভাজ্য ধ্বনি যেগুলি মিশে রয়েছে সেগুলি একমাত্র মুখের কথায় পাওয়া সম্ভব। বাংলা ভাষার কয়েকটি অবিভাজ্য ধ্বনি হল- 

১। শ্বাসাঘাত: উচ্চারনের সময় কোনো একটি বিশেষ ধ্বনি বা অক্ষরের উপর জোর দেওয়াকে বলে শ্বাসাঘাত। সাধারণত বহুদল শব্দের প্রথম দলে শ্বাসাঘাত পড়ে। যেমন, ‘বিদ্যাসাগর’ শব্দের ‘বিদ্’ দলটিতে শ্বাসাঘাত পড়েছে। 

২। দৈর্ঘ্য: কোনো দল উচ্চারণের সময় স্বরধ্বনির দীর্ঘতাকেই বলে দৈর্ঘ্য। গবেষণায় প্রমানিত যে, একদল শব্দের দৈর্ঘ্য তুলনামুলকভাবে বেশি। ‘জাম’ আর ‘জামা’ শব্দদুটির মধ্যে ‘জাম’ শব্দে ‘আ’ স্বরধ্বনিটির দৈর্ঘ্য বেশি। 

৩। যতি: দল বা শব্দের সীমায় অপেক্ষাকৃত লম্বা ছেদকে যতি বলে। যতি বাক্যের অর্থ পরিস্ফুটনে সহায়তা করে। 

৪। সুরতরঙ্গ: বাক্যে সুরের ওঠানামাকে সুরতরঙ্গ বলে। এই সুরতরঙ্গের ফলেই বক্তার মনের বিশেষ ভাব অর্থাৎ বাক্যটি উক্তি, জিজ্ঞাসা নাকি বিস্ময় ইত্যাদি প্রকাশ পায়। যেমন, ‘রাম আসবে?’ এই প্রশ্নবোধক বাক্যে সুর ক্রমশ উর্ধমুখী হবে। 

পরিশেষে বলা যায় যে, অবিভাজ্য ধ্বনিগুলি মুখের ভাষার অপরিহার্য অংশ। তবে এগুলির উপস্থিতিতে অর্থের পরিবর্তন হয় না বলে এগুলি বাংলাভাষায় ধ্বনিমূলের ভুমিকা পালন করে না।


প্রশ্ন: দু’টি করে উদাহরণ সহ গুচ্ছধ্বনি এবং যুক্তধ্বনির পরিচয় দাও।

Ans: ধ্বনিতত্ত্বের অন্যতম কাজ হল ধ্বনিমূলের অবস্থান এবং ধ্বনির সমাবেশ নিয়ে আলোচনা করা। ধ্বনি সমাবেশের অন্তর্গত দুটি বিষয় হল- গুছধ্বনি এবং যুক্তধ্বনি।

গুচ্ছধ্বনি: পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ব্যাঞ্জনধ্বনি যে যুগ্মধ্বনি তৈরি করে তাকে গুচ্ছধ্বনি বলে। অর্থাৎ, যে দুটি ব্যাঞ্জনধ্বনির মাঝখানে কোন স্বরধ্বনি নেই সেই ব্যঞ্জন দুটির যুগ্মধনিকে গুচ্ছধনি বলে।

গুচ্ছধ্বনির দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল এতে দলসীমা বর্তমান থাকে অর্থাৎ গুচ্ছধ্বনির অন্তর্গত ধ্বনিগুলি পৃথক দল।

বাংলায় দুটি ব্যঞ্জন ধ্বনিতে তৈরি ধ্বনিগুচ্ছের সংখ্যা-২০০, তিনটি ব্যাঞ্জনধ্বনি দিয়ে তৈরি গুচ্ছধ্বনির সংখ্যা-৪ এবং চারটি ব্যঞ্জনধ্বনি দিয়ে তৈরি গুচ্ছধ্বনির সংখ্যা-১ টি।

ধ্বনিগুচ্ছের উদাহরন:

অজন্তা= অ+জ+অ+ন+ত+আ (এখানে ‘ন্ত’ হল গুচ্ছধ্বনি)

শ্রদ্ধা=শ্+র্+অ+দ্+ধ+আ (এখানে ‘দ্ধ’ হল গুচ্ছধ্বনি)

যুক্তধ্বনি: যে ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশগুলি শব্দের আদিতে উচ্চারিত হতে পারে সেগুলিকে যুক্তধ্বনি বলে। এখানে দলসীমা থাকে না।

দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশে যুক্তধ্বনি তৈরি হলে প্রথম ব্যঞ্জনধ্বনিটি [স] অথবা দ্বিতীয় ব্যঞ্জনটি [র] বা [ল] হবে। বাংলায় এই রকম ২৪ টি যুক্তধ্বনি রয়েছে। এছাড়া ইংরাজি থেকে আমদানি করা ১৪ টি যুক্তধ্বনি রয়েছে। তিনটি ব্যঞ্জনধ্বনি দিয়ে তৈরি যুক্ত ধ্বনির সংখ্যা- ২টি।

যুক্তধ্বনির উদাহরন:

স্নান=স্+ন্+আ+ন্ (এখানে ‘স্ন’ হল যুক্ত ধ্বনি)

ম্লান=ম্+ল+আ+ন্ (এখানে ‘ম্ল’ হল যুক্তধ্বনি)।


প্রশ্ন: কোনো ধ্বনি ধ্বনিমূল না সহধ্বনি কীভাবে সনাক্ত করবে।

Ans: ধ্বনিতত্ত্বের প্রধান কাজ হল কোনো ভাষায় ধ্বনিমূল ও সহধনিগুলিকে সনাক্ত করা। একটি ধ্বনি ধ্বনিমূল নাকি সহধ্বনি তা নির্ণয় করার বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে; বেশ কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ধ্বনিমূল ও সহধ্বনি সনাক্ত করা সম্ভব।

প্রথমত: একটি ভাষার অভিধানে আছে এমন বেশ কিছু ন্যূনতম শব্দজোড় নির্বাচন করতে হয়। ন্যূনতম শব্দজোড় হল উচ্চারণে মিল আছে কিন্তু সামান্য পার্থক্য আছে এমন এক জোড়া শব্দ। যেমন- নরম-গরম, জাল-কাল ইত্যাদি। নুন্যতম শব্দজোড়ের যে ধ্বনিটির জন্য দুটি শব্দের অর্থপার্থক্য হয় সেটিকে পৃথক ধ্বনিমূল বলা যেতে পারে। সুতরাং উপরের নুন্যতম শব্দজোড়দুটি থেকে বলা যেতে পারে বাংলা ভাষায় /ন/, /গ/, /জ/, /ক/ এগুলি এক একটি ধ্বনিমূল।

দ্বিতীয়ত: অনেক সময় দেখা যায় একটি ধ্বনির একাধিক উচ্চারণবৈচিত্র্য রয়েছে। যেমন- বাংলা /ল/ ধ্বনিমূলটির তিন রকমের উচ্চারণবৈচিত্র্য রয়েছে যেগুলি পাওয়া যায় যথাক্রমে –‘লঙ্কা’, ‘উল্টো’ এবং ‘আলতা’ শব্দ উচ্চারণ করে। এই তিনটি /ল/ একে অপরের জায়গায় উচ্চারিত হতে পারে না। কোন ধ্বনির নির্দিষ্ট প্রতিবেশে এই উচ্চারণকে পরিপুরক অবস্থান বলে। যে দুটি ধ্বনির মধ্যে পরিপুরক অবস্থান থাকে সেগুলিকে একই ধ্বনির সহধ্বনি বলা হয়।

তৃতীয়ত: উচ্চারণ বিকৃতির জন্য একই ধ্বনি দু’রকম উচ্চারিত হতে পারে। যেমন-‘গাঢ়’ এই শব্দটি বেশিরভাগ মানুষ উচ্চারণ করে ‘গাড়’। কিন্তু ‘গাঢ়’ আর ‘গাড়’ এই দুটি ন্যূনতম শব্দজোড় নয়। এইরূপ শব্দজোড়ে প্রাপ্ত ধ্বনিগুলিকে ধ্বনিতত্ত্বের আলোচনায় মুক্তবৈচিত্র্য বলা হয়। এই মুক্তবৈচিত্র্যের ধ্বনিগুলিও সহধ্বনি রূপে বিবেচিত হয়।


প্রশ্ন: ধ্বনিমূল ও সহধ্বনির পার্থক্য লেখ ।

Ans: ধ্বনিতত্ত্বের মূল আলোচ্য বিষয় হল- বাকধ্বনি অর্থাৎ মানুষ কথা বলার জন্য যে ধ্বনি উচ্চারন করে। ধ্বনিতাত্ত্বিকেরা সেগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন- ধ্বনিমূল এবং সহধ্বনি।

ধ্বনিমূল এবং সহধ্বনির সম্পর্ক নিম্নরূপ-

প্রথমত: বাংলায় উচ্চারিত ৩০টি ব্যাঞ্জনধ্বনি এবং ৭টি স্বরধ্বনি সব একেকটি ধ্বনিমূল। আর, কোনো কোনো ধ্বনির যে উচ্চারন-বৈচিত্র্য রয়েছে, সেগুলি হল সহধ্বনি। ধ্বনিমূল এবং সহধবনি মিলে একেকটি পরিবার। ধ্বনিমূল সেই ধ্বনি-পরিবারের প্রধান। কোনো ধ্বনি-পরিবারের সদস্য অর্থাৎ সহধ্বনির সংখ্যা বেশি এবং কোন পরিবারের সদস্য সংখ্যা কম।

দ্বিতীয়ত: ধ্বনিমূল একটি কল্পনামাত্র, সহধ্বনির সাহায্যে আমরা ধ্বনিমুলে পৌঁছানর চেষ্টা করি। সেই অর্থে সহধ্বনি হল ধনিমুলের ব্যাবহারিক রূপ।

তৃতীয়ত: ধ্বনিমূলের পার্থক্যের জন্য শব্দের অর্থপার্থক্য হয় কিন্তু সহধ্বনি পালটে দিলে শব্দের অর্থ পরিবর্তিত হয় না। যেমন- ‘জাম’ শব্দটিকে যদি ‘নাম’ উচ্চারণ করি অর্থাৎ /জ/ পরিবর্তে /ন/ লেখি বা উচ্চারণ করি তাহলে অর্থ পুরোপুরি পাল্টে যাচ্ছে।


Google News এ আমাদের ফলো করুন


Gksolves Google News


ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুকWhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Ads Area