আমি দেখি রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Aami Dekhi Descriptive Question Answer

আমি দেখি রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF: প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় Aami Dekhi Descriptive Question Answer PDF থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি আমি দেখি রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF

আমি দেখি রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Aami Dekhi Descriptive Question Answer

নিচে আমি দেখি রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF টি যত্নসহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন। Aami Dekhi Descriptive Question Answer PDF পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন।



আমি দেখি - শক্তি চট্টোপাধ্যায়


‘আমি দেখি’ কবিতাটি প্রখ্যাত সাহিত্যিক শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘অঙ্গুরী তোর হিরণ্যজল’ কাব্যগ্রন্থ থেকে গৃহিত হয়েছে। আলোচ্য পোস্টে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি দেখি’ কবিতার গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।


আমি দেখি রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Aami Dekhi Descriptive Question Answer


1. ..ঐ সবুজের ভীষণ দরকার”–‘ঐ সবুজ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? তার দরকার কেন? 

Ans: সবুজ প্রকৃতি মানুষের রোগমুক্ত জীবনযাপনের প্রধান সহায়ক। গাছের সবুজ অংশে সঞিত ক্লোরোফিলের সহায়তায় উদ্ভিদ সূর্যালোকের উপস্থিতিতে যে শর্করাজাতীয় খাদ্য তৈরি করে, মানুষ তথা সমগ্র প্রাণীকুল তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গ্রহণ করে শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। আবার, সবুজ উদ্ভিদ মানুষকে নিশ্বাস-প্রশ্বাসের উপযোগী অক্সিজেন সরবরাহ করে। শহরের কলুষিত পরিবেশে দূষণজনিত কারণে যে রোগ-ভোগের প্রসার ঘটে চলেছে তা থেকে মুক্তিলাভের জন্য গাছের ওই সবুজ অংশই দরকার। ‘ঐ সবুজ’ বলতে কবি তাই নিঃসন্দেহে গাছের সবুজ অংশকেই চিহ্নিত করেছেন।

মানবজীবনে সুস্থতার জন্য, বেঁচে থাকার প্রয়োজনে অরণ্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই ভূমিকা বহুবিধ—

প্রথমত, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা কমিয়ে অক্সিজেনের জোগান দেয় গাছ, বায়ুমণ্ডল হয়ে ওঠে মানুষের শ্বাসগ্রহণের উপযোগী। দ্বিতীয়ত, গাছ তার শিকড় দিয়ে মাটি আঁকড়ে ধরে রেখে ভূমিক্ষয় প্রতিহত করে ও বন্যার করাল গ্রাস থেকে মানুষকে বাঁচায়। তৃতীয়ত, জীবজগতের খাদ্যের প্রধান জোগানদাতা হল গাছ। চতুর্থত, গাছের অন্তর্নিহিত সঞ্চিত শক্তি যেমন—কাঠ, কয়লা, পেট্রোলিয়াম প্রভৃতি আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনের চাহিদা মেটায়। পঞ্চমত, আরোগ্যের জন্য মানব জীবনের সমস্ত ওষুধ প্রাচীনকাল থেকে গাছই সরবরাহ করে আসছে। ভেষজ অর্থাৎ কবিরাজি চিকিৎসা পদ্ধতি পুরোপুরি অরণ্যকেন্দ্রিক। ষষ্ঠত, অরণ্য ধ্বংসের ফলে বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরের (O3) ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় সূর্য থেকে অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের গায়ে সরাসরি এসে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। যার ফলে বহুবিধ চর্মরোগ ছাড়াও ক্যানসারের মতো মারণব্যাধি দেখা দিতে পারে।

অর্থাৎ, প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে প্রকৃতির বুকে সবুজের আবরণ তথা আভরণ গড়ে তুলতে হবে। কবি সেই প্রত্যয়ভূমি থেকে মানুষের মঙ্গলের জন্য সবুজকে আহ্বান করেছেন-

“গাছের সবুজটুকু শরীরে দরকার

আরোগ্যের জন্যে ওই সবুজের ভীষণ দরকার ”


2. “শহরের অসুখ হাঁ করে কেবল সবুজ খায় সবুজের অনটন ঘটে…”–‘শহরের অসুখ’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? সবুজের অনটন কীভাবে ঘটে?

Ans: নগরসভ্যতার পত্তনের অর্থই সবুজকে ধ্বংস করা। সর্বোপরি, আধুনিক নগরজীবন যন্ত্রযুগের উদগ্র লালসায় সবুজ ধ্বংসের হোলি খেলার মত্ত। ফলে একদিন যেখানে পৃথিবীর মোট ভূভাগের পঞ্চাশ শতাংশ অরণ্য ছিল বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র পঁয়ত্রিশ শতাংশে। দৈনন্দিন কাজকর্মে, কারখানার শ্রীবৃদ্ধিতেও অরণ্য ধ্বংস হচ্ছে। উন্নততর সভ্যতা বিকশিত হয় নগরকে কেন্দ্র করে, বর্তমান আণবিক যুগের প্রভাবও সেখানে বিদ্যমান। নতুন নতুন অট্টালিকা, রাস্তাঘাট, শপিংমল প্রভৃতি তৈরি করার জন্য কার্যত সবুজ ধ্বংস হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর ফলে বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায় যা পরিবেশে অক্সিজেনের মাত্রাকে কমিয়ে দিচ্ছে, এমনকি প্রতিদিন বাড়ছে গ্রিনহাউস দূষণ। তা ছাড়া জলদূষণ, বায়ুদূষণ, আলোদূষণ, মৃত্তিকা দূষণ, সর্বোপরি অস্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধিও সবুজ ধ্বংসের অন্যতম কারণ রূপে দেখা দিচ্ছে। শহরজীবনের গতিকে ত্বরান্বিত করতে অরণ্য ধ্বংস করা হচ্ছে নির্বিচারে। কবির দৃষ্টিতে নগরায়ণ হল একটা অসুখের মতো যা কেবলমাত্র অরণ্যকে ধ্বংস করে সবুজকে গিলে ফেলতে চায়।

ভারতের মতো দেশে বৃহৎ বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১/৬ শতাংশ। অথচ মোট রাজস্বের প্রায় ৬০০ কোটি আসে বনজ সম্পদ থেকে। এ দেশের জ্বালানির ৬০ শতাংশ বনজসম্পদ কেন্দ্রিক, অথচ তাকেই নির্বিচারে ধ্বংস করা হচ্ছে। অন্যদিকে পরোক্ষে এ দেশে যত না বনসৃজন ঘটে তার চেয়ে অনেক বেশি বন নষ্ট করা হয়। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। অরণ্য যে মানুষের পরম বন্ধু এ ভাবনা বিনষ্ট হয়ে পড়ছে। শহরের জন্য যুগোপযোগী পরিবেশ রচনা করার তাগিদেই সবুজের অভাব ঘটতেই থাকবে যা আধুনিক সভ্যতাকে বেপথু করে তুলবে।


3. ‘আমি দেখি’ কবিতায় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় মানুষ ও প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক সম্বন্ধে যে আলোচনা করেছেন তা লিপিবদ্ধ করো।

Ans: প্রকৃতি নিরন্তর যাদের হৃদয়ে দোলা লাগিয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। কেউ প্রেমিক হৃদয় নিয়ে প্রকৃতির রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধে অবগাহন করেছেন, আবার কেউ-বা বৈজ্ঞানিক চেতনা যোগে প্রকৃতি সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করেছেন। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে এই দুই শ্রেণিরই বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। ‘আমি দেখি’ কবিতায় বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে কবি মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির প্রাণের সম্পর্ক রচনা করতে চেয়েছেন। কবি তাঁর জীবনের এক দীর্ঘ সময় প্রকৃতির কোল থেকে দূরে শহরের ইট-কাঠ-পাথরের রুক্ষ-কঠোর পরিবেশের মাঝে অবস্থান করেছেন বলে অনুভব করেছেন সুস্থ জীবন লাভের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সবুজের সমারোহ। তাই কবি শহরের প্রান্তদেশে কিংবা পথপ্রান্তে পড়ে থাকা অবহেলিত গাছগুলোকে পরম যত্নে তুলে আনতে বলেছেন-

“গাছগুলো তুলে আনো, বাগানে বসাও

আমার দরকার শুধু গাছ দেখা”


কবি দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে জানিয়েছেন গাছের সবুজ অংশ মানবশরীরে আরোগ্যের জন্য প্রভূত মাত্রায় প্রয়োজন। কারণ, অরণ্যজননীই পারে শহরের বুক থেকে দূষণের কলঙ্ক গ্রাস করে নিয়ে সুস্থ-বিশুদ্ধ পরিবেশ সৃজন করতে। অর্থাৎ, মানবজীবন বহুলাংশেই সবুজ প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। এই কারণেই কবি আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন-

“বহুদিন জঙ্গলে কাটেনি দিন

 বহুদিন জঙ্গলে যাইনি”


নগর পত্তনের জন্য সবুজ ধ্বংস করায় প্রকৃতিতে সবুজের অনটন ঘটছে। তাই সভ্যতার সংকট দূর করার জন্য কবি আহ্বান জানিয়েছেন—

“গাছ আনো, বাগানে বসাও।”

কবির ক্লান্ত দেহমন শুধু সবুজ রং আর সবুজ প্রকৃতি চায়। সবুজ ব্যতীত কবির জীবন বিবর্ণ। তাই কবি সর্বান্তকরণে প্রার্থনা করেছেন, সবুজের সমারোহে চতুপ্রান্ত ভরে উঠুক।


4. “আমার দরকার শুধু গাছ দেখা/গাছ দেখে যাওয়া” –কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ‘শুধু’ শব্দটি কেন ব্যবহার করেছেন? কবি অনন্তকাল ধরে কেবল গাছই দেখে যেতে চান কেন?

Ans: আধুনিকতার প্রলেপ সারা গায়ে মেখেও কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাঁর হৃদয় থেকে প্রকৃতির প্রতি অমোঘ প্রেমকে বিতাড়িত করতে পারেননি। তাই প্রকৃতির প্রতি প্রগাঢ় প্রেমের বশবর্তী হয়ে শহরের কবি শহরের ক্লেদাক্ত পরিবেশে সবুজের অভিযানের আকাঙ্ক্ষায় অপেক্ষমান। শহরের যাবতীয় সুখস্বাচ্ছন্দ্য উপভোগ করা সত্ত্বেও তিনি মানবজীবনে সবুজ প্রকৃতির প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে হতজ্ঞান হননি। দূষণমুক্ত, পরিশ্রুত জল-বায়ুর কামনায় কবি তাঁর পরিপার্শ্বে সবুজের সুনিবিড় স্পর্শ কামনা করেছেন। আর সবুজের স্পর্শ লাভের কবির এই সুতীব্র আর্তি প্রকাশের জন্যই ‘শুধু’ শব্দটির অবতারণা করা হয়েছে।

মানবসভ্যতা আজ উন্নতির চরম শিখরে উন্নীত হলেও নগরজীবনের মেকি ঔজ্জ্বল্য কবিমনে প্রতিনিয়ত শূন্যতা সৃষ্টি করে চলেছে। তা ছাড়া কবি প্রত্যক্ষ করেছেন আধুনিক জীবনের চাহিদা মেটাতে এবং ব্যাবসায়িক স্বার্থে নির্বিচারে অরণ্য নিধনযজ্ঞ কার্যকরী রয়েছে। আর তাই—

 “শহরের অসুখ হাঁ করে কেবল সবুজ খায়

 সবুজের অনটন ঘটে"


অরণ্যপ্রেমী কবি তাই সমগ্র শহরবাসীর পক্ষ থেকেই শহরের এই ভীষণ অসুখের আরোগ্য লাভের কামনা করেন। কবি যখন বলেন ‘আমার দরকার’ তখন তা অচিরেই ব্যষ্টি থেকে সমষ্টির মনোবাসনায় পরিণত হয়। কবি জানেন কবিসহ সমগ্র শহরবাসীর শরীর-মনের যাবতীয় ব্যাধিমুক্তির একমাত্র পথ হল বৃক্ষরোপণ। সবুজের অভাবজনিত রোগ থেকে মুক্তির জন্যই কবি একটানা গাছ দেখে যাওয়ার কথা বলেছেন। প্রকৃতপক্ষে, কবির এই অনন্তকাল যাবৎ গাছ দেখে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করার অর্থই হল গাছ লাগানোর যাচজ্ঞা প্রকাশ— “গাছ আনো, বাগানে বসাও”—যা কবিতার অন্তিম চরণ পর্যন্ত ধ্বনিত হয়েছে।


5. ’আমি দেখি’ কবিতায় কবি শন্তি চট্টোপাধ্যায়ের পরিবেশসচেতনতা কতখানি ধরা পড়েছে তা কবিতাটি অবলম্বনে লেখো।

অথবা, “গাছ আনো, বাগানে বসাও,/আমি দেখি।” গাছের প্রতি কবির এই আগ্ৰহ কী নিতান্ত শৌখিন নাকি কবির এই বক্তব্য তার পরিবেশসচেতন মনেরই প্রতিফলন তা ব্যাখ্যা করো।

Ans: কোটি কোটি বছর আগে যে সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল তার প্রধান ভিত্তি ছিল বৃক্ষ। ক্রমে মানবজাতির আগমন এবং তার যতই উন্নতি হয়েছে ততই বৃক্ষ পদদলিত হয়েছে, বিনষ্ট হয়েছে। আধুনিক কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মতে নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত মানুষ আপন স্বার্থে প্রকৃতির সঙ্গে নিজের সবুজ সম্পর্ককে ছিন্ন করেছে। কবি নিজে সেই শহুরে জীবনের প্রতিভূ হিসেবে অনুভব করেছেন দীর্ঘদিন তিনি সবুজের থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন-

“বহুদিন জঙ্গলে কাটেনি দিন

বহুদিন জঙ্গলে যাইনি”


তাই ‘একটি গাছ একটি প্রাণ’-কে কবি মানবজীবনের মূলমন্ত্র রূপে স্বীকার করে নিয়েই আমি দেখি’ কবিতায় বৃক্ষরোপণের সুপরামর্শ দিয়েছেন।

বিংশ শতাব্দীর আধুনিক মনস্ক কবি হলেও তিনি জানেন অরণ্য ছাড়া মানবজীবন বৃথা। বৈদিক যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান কালাবধি মানুষের খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের প্রাথমিক চাহিদা থেকে শুরু করে মানুষের প্রাণধারণের উপযোগী শ্বাসবায়ু—সবই বৃক্ষের দান। কর্মব্যস্ত শহুরে জীবনে ঘটে যাওয়া ‘সবুজের অনটন’-কে তাই অবিলম্বে রুখতে হবে, নতুবা মানবজীবনে শুদ্ধতার আশ্বাস ফিরে আসা সম্ভব নয়। কবি স্পষ্টতই জানিয়েছেন—

 “গাছের সবুজটুকু শরীরে দরকার

আরোগ্যের জন্যে ঐ সবুজের ভীষণ দরকার”


6. “আমার দরকার শুধু গাছ দেখা/গাছ দেখে যাওয়া"— ‘শুধু’ শব্দটি কবি ব্যবহার করেছেন কেন? কবি কেন কেবল গাছই দেখে যেতে চান? অথবা “আমার দরকার শুধু গাছ দেখা”—বক্তা কে? তাঁর গাছ দেখা দরকার কেন? [২০১৬]

Ans: কবি ও কবিতা: আলোচ্য অংশটি গৃহীত হয়েছে আধুনিক যুগের অন্যতম একজন কবি শক্তি চট্টোপাধায়্যের ‘আমি দেখি’ কবিতা থেকে। উদ্ধৃত-অংশটির বক্তা কবি স্বয়ং।

‘শুধু’ শব্দ ব্যবহারের কারণ: প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসায় কবি চিরহরিতের আকাঙ্ক্ষায় অপেক্ষা করতে থাকেন। কারণ জঙ্গলের সংস্রব থেকে কবি বহুদিন বিচ্ছিন্ন। গাছ কবির কাছে পরমাত্মীয়ের মতো। তাই গাছের নিবিড় সান্নিধ্য পেতে চান কবি। গাছ ছাড়া কবির অন্য কোনো কিছুই দেখার আকাঙ্ক্ষা নেই। কবির তীব্র আর্তি বোঝাতে ‘শুধু’ শব্দের ব্যবহার করেছেন কবি।

গাছ দেখে যাওয়ার কারণ: অরণ্যপ্রেমী কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় নাগরিক যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি পেতে চান। কবির বেদনা যেন নগরের রোগাক্রান্ত জনসমাজের সকলের যন্ত্রণার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। ‘আমার দরকার’ কবির কেবল একার থাকে না, যেন শহরের সমবেত মানুষের আকাঙ্ক্ষা। শারীরিক ও মানসিক— শহরের এই দুই ব্যাধি থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় ‘বৃক্ষ’। তাই তো কবি আদেশ দেন যেন সমগ্র নাগরিকবৃন্দকে—

‘গাছগুলো তুলে আনো, বাগানে বসাও।'

কবি গাছ দেখতে চান, গাছ তুলে এনে বাগানে বসানোর কথা বলেন। রিক্ত নগর পৃথিবীর ব্যাধিগ্রস্ত মানুষদের মধ্যেও যেন কবি দিয়ে যেতে চান সবুজের সুনিবিড় ছোঁয়া।


7. “আরোগ্যের জন্যে ওই সবুজের ভীষণ দরকার’’—‘ওই সবুজ’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? সেই সবুজকে পাওয়ার জন্য কবি কী কী নির্দেশ দিয়েছেন? [২০১৯]

Ans: প্রথম অংশ: উত্তর বাংলা আধুনিক কবিতার বিশিষ্ট কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘অঙ্গুরী তোর হিরণ্য জল’ কাব্যের ‘আমি দেখি’ কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত। ‘ওই সবুজ’ বলতে মুক্ত প্রকৃতির বুকে ছড়িয়ে থাকা গাছপালার সবুজের কথা বলা হয়েছে।

দ্বিতীয় অংশ: কবি জানেন যে, মানুষের সঙ্গে অরণ্যের এক সুগভীর যোগ আছে। কবি অনেকদিন নগরসভ্যতায় বাস করেছেন। শহুরে প্রাণহীনতা, ব্যস্ততা, ক্লান্তি কবিকে কষ্ট দেয়। ইট-কাঠ-পাথর আর কংক্রীটের এই নাগরিক সভ্যতা ক্রমশ গ্রাস করে চলেছে সবুজ অরণ্যপ্রাণকে। নির্বিচারে বৃক্ষনিধন করে নগর তার সমাধির কবর খুঁড়ে চলেছে। কবি বলেছেন—

‘শহরের অসুখ হাঁ করে কেবল সবুজ খায়

সবুজের অনটন ঘটে…’


যান্ত্রিক এই সভ্যতায় নির্বিচারে ‘বন কেটে বসত’ নির্মাণ মানুষকে ভয়ানক এক সমস্যার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। নগরসভ্যতার আগ্রাসনে সবুজের অনটন কবিকে ব্যথিত করেছে। এই কারণে কবি বাঁচার জন্য, আরোগ্যের জন্য, পরিবেশের কোমলতাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য গাছ তুলে এনে বাগানে বসানোর নির্দেশ দিয়েছেন—

‘তাই বলি, গাছ তুলে আনো

বাগানে বসাও আমি দেখি’

কবির চোখ চায় সবুজ আর মন চায় সবুজ বাগানের সমারোহ। শহরের ব্যস্ততা, নেতিবোধ, জীবনের প্রতি বিরূপতা থেকে আরোগ্যের জন্য কেবলমাত্র সবুজের সান্নিধ্য দরকার। তিনি জানেন মনের মুক্তিতে গাছের সবুজ একমাত্র ঔষধি।


8. “শহরের অসুখ হাঁ করে কেবল সবুজ খায়’”—‘শহরের অসুখ' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? বক্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

Ans: শহরের অসুখ: ‘আমি দেখি’ কবিতায় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় শহরের একটি প্রধান অসুখের কথা বলেছেন। শহর মানেই যন্ত্রসভ্যতার আগ্রাসন। ঘন জনবসতিপূর্ণ, কলকারখানা পরিবেষ্টিত শহরে মানুষ বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণেরও অবকাশ পায় না। যানবাহনের ধোঁয়ায় বাতাস দূষিত। প্রচুর জনঘনত্বের কারণে, বসতির প্রয়োজনে এবং স্বার্থান্বেষী মানুষের লোভে চলে অরণ্যনিধন। এরফলে শহরে সবুজের অভাব দেখা দেয়। শহরের আগ্রাসন, শহুরে মানুষের আগ্রাসী, লোভী মানসিকতাকে কবি ‘শহরের অসুখ’ বলতে চেয়েছেন।

তাৎপর্য: শহরে সাধারণত গাছপালা কম থাকে, চাষের জন্য বিস্তৃত শস্যক্ষেত্র, বিস্তীর্ণ জঙ্গল থাকে না। যতটুকু সবুজ শহরে থাকে তাও বায়ু ও মাটিদূষণের কারণে লুপ্ত হচ্ছে ক্রমশ। অন্যদিকে স্বার্থান্বেষী লোভী মানুষ নিজেদের স্বার্থে নির্বিচারে গাছপালা ধ্বংস করে। কৃত্রিম সুখের কারণে মানুষের এমন কার্যকলাপকে কবি শহরের চিরকালীন ‘অসুখ’ বলেছেন। এই অসুখের লক্ষণ হল সবুজকে গ্রাস করা। প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল মানুষের প্রতিনিয়ত সভ্যতার বিকাশকে দোহাই দিয়ে সবুজ-নিধনকে এই কবিতায় কবি তুলে ধরেছেন।


9. “সবুজের অনটন”—সবুজের অনটন ঘটে কী কী কারণে? কবি কীভাবে এই রোগ থেকে মুক্ত হওয়ার পথ দেখিয়েছেন? অথবা, “সবুজের অনটন ঘটে”--কোথায় সবুজের অনটন ঘটে? কী কারণে সবুজের অনটন ঘটে? সবুজের অনটন কাটাতে কী করা প্রয়োজন বলে কবি মনে করেন?

Ans: সবুজের অনটনের কারণ: আলোচ্য উদ্ধৃতিটি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি দেখি’ কবিতার অন্তর্গত। সভ্যনগর গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় ক্রমাগত শহর দূষিত হয়েছে, মানুষ আরো অমানবিক হয়ে উঠেছে। বসতির কারণে একের পর এক সবুজ অরণ্য ধ্বংস হয়েছে। শহরের যান্ত্রিক সভ্যতা অরণ্যসম্পদকে প্রতিনিয়ত ধ্বংস করে চলেছে। মানুষের অমানবিতাকেই কবি ‘অসুখ’ বলে চিহ্নিত করেছেন এবং তার ফলে অরণ্যনিধন ঘটে তাকে ‘সবুজ খায়’ বলে ইঙ্গিত করেছেন। এভাবেই সবুজের অনটন অর্থাৎ অভাব ঘটে।

মুক্তির উপায় কী: প্রকৃতিপ্রেমী ও পরিবেশ সচেতন কবি গাছ তুলে এনে বাগানে বসানোর আবেদন জানিয়েছেন। কবির প্রয়োজন বৃক্ষদর্শন। কারণ তিনি জানেন গাছের সবুজটুকু শরীরের জন্য ভীষণভাবে দরকার। রোগমুক্তির জন্য, ক্লান্তি উপশমের জন্য সবুজের একান্ত প্রয়োজন। গাছের সাহচর্যে ও সহাবস্থানে মানুষ পায় জীবনের সমৃদ্ধ নিশ্বাস। দু-চোখ ভরে তাই গাছ দেখে যেতে চান কবি।

শহরের অসুখ হাঁ করে প্রতিনিয়ত যে সবুজ গ্রাস করে চলেছে তাকে প্রতিরোধ করার জন্য কবি প্রতিজ্ঞা করেন। নাগরিক জীবনে তাই বৃক্ষকে ফিরিয়ে এনে তিনি শরীর ও মনের যাবতীয় কষ্ট দূর করবেন। নাগরিক জীবনে যে সবুজনিধন যজ্ঞ চলছে তা বন্ধ করতে চান কবি। এই কারণেই মানুষকে তিনি বৃক্ষরোপণের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। জীবনের শান্তি-তৃপ্তি ফিরিয়ে আনার জন্যই কবি বৃক্ষের আশীর্বাদ কামনা করে বৃক্ষরোপণের পরামর্শ দিয়েছেন।


10. “বহুদিন জঙ্গলে কাটেনি দিন”–কেন কবি এ কথা বলেছেন? এই অভাবপূরণের জন্য কবি কী চেয়েছেন?

Ans: প্রথম অংশ: কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় নাগরিক পরিবেশে বাস করেছেন। নগরবাসের অভিজ্ঞতা কবির মনে ক্লান্তি এনেছে। তিনি অনুভব করেছেন কংক্রিটের জগতে একান্ত সবুজহীনতা। সবুজের অভাবে কবিমন ক্লান্ত। এবং এর থেকে মুক্তির দিশা একমাত্র দিতে পারে সবুজ বনাঞ্চল, তা তিনি জানেন। একদিকে ব্যস্ত নাগরিক জীবন ও অপরদিকে অপার অরণ্যের মাঝে বিস্তর ব্যবধান। এই ব্যবধানের কারণে মানুষ আজ প্রকৃতির সুনিবিড় স্পর্শ থেকে বিচ্ছিন্ন। কবি বলেছেন—‘বহুদিন শহরেই আছি’। এই শহরবাস থেকে মুক্তি পেতে জঙ্গলযাপন একান্ত প্রয়োজন। অরণ্য তাই কবিকে আকর্ষণ করে।

দ্বিতীয় অংশ: নগরজীবনের ব্যস্ততায় কবির জঙ্গলে দিন কাটানো হয়নি। তাই কবিমনে জঙ্গলের জন্য একটা সুতীব্র অভাববোধ থেকেই যায়। আর এই অভাববোধ পূরণের জন্য তিনি গাছ তুলে এনে বাগানে বসাতে চেয়েছেন। তাঁর চোখ চায় সবুজ, দেহ চায় সবুজ বাগান৷ প্রকৃতির বিপুল অঙ্গনে যেতে না পারার বেদনা অন্তত পূরণ হোক বাগানের মধ্যে দিয়ে। কবির এই বাসনা কবিতার মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে।


11. ‘তাই বলি’ – বক্তা কী বলেছেন? কেন বলেছেন?

Ans: বক্তার বক্তব্য: প্রকৃতিপ্রেমিক কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘অঙ্গুরী তোর হিরণ্য জল’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আমি দেখি' কবিতায় গাছ তুলে বাগানে বসানোর আবেদন রাখা হয়েছে। মানুষ সহ সকল জীব প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। প্রকৃতিই হল মানুষের প্রাণের স্পন্দন। অথচ মানুষ নির্মমভাবে প্রকৃতির উপর নিপীড়ন চালাচ্ছে। ফলে নাগরিক জীবন এখন অসুস্থ, অবসাদে-ক্লান্তিতে আচ্ছন্ন। তাই প্রকৃতির নির্মলতা, কোমলতাকে ফিরিয়ে আনতে কবি মানুষকে সচেতন হতে অনুরোধ করেছেন।

আবেদনের কারণ: কবি নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংসের জন্য প্রবলভাবে ব্যথিত। সভ্যতা ও প্রযুক্তি যত বিস্তৃত হচ্ছে তত শ্যামল বনানী ক্রমশ বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। নগরায়ণের ফলে আমাদের বসুন্ধরা প্রতিনিয়ত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে, হারিয়ে যাচ্ছে 'ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়’। এই কারণেই কবি গাছগুলো তুলে এনে বাগানে বসানোর আবেদন জানিয়েছেন। গাছের স্নিগ্ধ সান্নিধ্য আরোগ্যের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়—

‘চোখ তো সবুজ চায় !

দেহ চায় সবুজ বাগান’


শহরের অসুখ প্রত্যেকদিন গ্রাস করছে সবুজ অরণ্য প্রকৃতি। কবির আরণ্যক মন তাই নাগরিক কোলাহল থেকে প্রকৃতির নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে চায়, প্রকৃতির সঙ্গে নিজের সত্তাকে জড়িয়ে রাখতে চান কবি। প্রাণদায়ী উদ্ভিদকে দূরে না রেখে কবি চোখের সামনে বাগানে রাখতে চেয়েছেন। এই ভাবনা থেকেই কবি এমন আবেদন জানিয়েছেন।


12. “চোখ তো সবুজ চায়! / দেহ চায় সবুজ বাগান”—তাৎপর্য লেখ।

Ans: সূচনা: প্রখ্যাত আধুনিক কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘অঙ্গুরী তোর হিরণ্য জল' কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া 'আমি দেখি’ কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত।

তাৎপর্য: কবি আরণ্যক প্রকৃতিকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসেন। এই প্রকৃতি কবির হৃদয়ে মধুর প্রশান্তি এনে দেয়। নাগরিক চোখের ‘সবুজ’ সভ্যতার ক্রমবিকাশের ফলে দেখা দিয়েছে অবাধ অরণ্যনিধন। কবি চেয়েছেন সুস্থভাবে বাঁচার জন্য মানুষ বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠুক।

আধুনিক সভ্যতা থেকে সবুজ আর প্রকৃতির নিবিড় স্পর্শ হারিয়ে যাচ্ছে। সবুজের স্নিগ্ধতার ছোঁয়া শরীর ও মনে কোমলতার পরশ এনে দেয়। তাই কবি মুমূর্ধ নগরীকে পুনরুজ্জীবিত করতে সবুজের সান্নিধ্য চেয়েছেন। নাগরিক জীবনের ক্লান্তিতে কবির মন বেদনাবিধুর। কবি জানেন, শহরের প্রাণহীনতা, মৃত্যুর বিবর্ণতা থেকে সবুজই একমাত্র বাঁচিয়ে তুলতে পারে।

সবুজের স্পর্শে রোগাক্রান্ত সভ্য মানবজাতি আরোগ্যলাভ করবে। তাই তিনি সবুজের স্পর্শ পেতে গাছ এনে বাগানে বসাতে বলেছেন৷ কেবল কবির জন্য নয়; সমগ্র শহরের জন্য, মানুষের সার্বিক সুস্থতার জন্য সবুজের একান্ত প্রয়োজন। কবি ভেবেছেন, জীবনের সমস্ত জড়তা আর নিষ্প্রাণতা কেটে যাবে সবুজের কোমল স্পর্শে।


13. “গাছ আনো, বাগানে বসাও।/আমি দেখি।।”--কবির এই নির্দেশ ও অনুরোধের কারণ ও তাৎপর্য আলোচনা করো।

Ans: অনুরোধের কারণ: কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি দেখি’ কবিতাতে গাছের প্রতি গাছের প্রতি কবির একান্ত আগ্রহ বা তীব্র আকর্ষণ প্রকাশিত হয়েছে। কবি নগরজীবনে বসবাস করলেও তিনি বারবার ছুটে গিয়েছেন জঙ্গলে। জঙ্গল তাঁকে উন্মাদ করে, উদাস করে। সবুজে সান্নিধ্য যেন কবির ‘প্রাণের আরাম, আত্মার শান্তি'। কবি গাছ, গাছের জঙ্গল, গাছের সবুজ অত্যন্ত ভালোবাসেন।

তাৎপর্য: অরণ্যপ্রেমী, সবুজের কাঙাল কবি দীর্ঘকাল শহরে বন্দি হয়ে আছেন। নাগরিক শ্রান্তিতে কবি ক্লান্ত। শরীর ও মন আরোগ্যের জন্য তাঁর গাছ দেখা, সবুজের সান্নিধ্য পাওয়া অত্যন্ত জরুরি।

শহরের অসুখ গ্রাস করেছে সবুজতাকে। তবু বাঁচতে হবে কবিকে, বাঁচাতে হবে শহরের মানুষদের ৷ তাই কবি বিকল্পের কথা ভেবেছেন। মঙ্গলকামী, শুভবুদ্দিসম্পন্ন মানুষের কাছে কবি আবেদন করেছেন শহরে গাছ আনতে, বাগান করতে। সবুজ গাছে ভরা বাগান শুধু কবিই দেখবেন না, সকলে দেখবে। কবি মানুষের প্রতিনিধি হয়ে গাছের কাছে নিজের ও সকলের সুস্থতা কামনা করেছেন।


14. ‘আমি দেখি’ কবিতাটির মধ্যে দিয়ে কবি কোন বার্তা দিতে চেয়েছেন তা লেখো। অথবা—আলোচ্য কবিতায় কবি কী দেখতে চান এবং কেন দেখতে চান তা ব্যক্ত করো। অথবা—কবিতাটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে লেখো।

Ans: বিশিষ্ট কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি দেখি’ মূলত বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া এক অনন্য অনুভবের কবিতা। পরিবেশের শ্রেষ্ঠ সম্পদ যে গাছ, তাকে কেন্দ্র করেই কবিতার মূলভাব ব্যক্ত হয়েছে।

বিংশ শতকের নাগরিক জীবনের গতিময়তাকে কবি প্রত্যক্ষ করেছেন। যন্ত্রসভ্যতার আবেগহীনতার প্রেক্ষাপটে ক্লান্ত কবি রচনা করেছেন এই কবিতাটি।

শহরবাসী কবির চিরকালীন আকর্ষণ অরণ্য-প্রকৃতির প্রতি। কিন্তু ক্রমাগত সবুজ ধ্বংস হয়ে কংক্রিটের শহর বর্তমানে ব্যধির শিকার। যন্ত্রসভ্যতার বিকাশ একের পর এক গাছ, একের পর এক অরণ্য যেন হাঁ করে গিলে নিচ্ছে। সমগ্র শহর জুড়ে যেন চলছে অরণ্য-নিধন যজ্ঞ।

বহুদিন শহরবাসে কবির উপলব্ধি হয়েছে সভ্যতার অপরিকল্পিত এই বিকাশ সভ্যতারই বিনাশের কারণ হয়ে উঠছে। অরণ্য ধ্বংস দেখে কবি ক্লান্ত। তিনি পুনরায় প্রকৃতির মায়ের কোলে ফিরে যেতে চান। কবির আবেদন—

‘গাছগুলো তুলে আনো, বাগানে বসাও

আমার দরকার শুধু গাছ দেখা

গাছ দেখে যাওয়া

গাছের সবুজটুকু শরীরে দরকার

আরোগ্যের জন্যে ওই সবুজের ভীষণ দরকার’।


কবি জানেন, এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি ঘটবে সবুজায়নের মধ্যে দিয়ে। তিনি তাই বলেছেন, গাছ লাগাতে। নাগরিক জীবনকে তিনি আশ্রয় নিতে বলেছেন অরণ্যের কাছে।। কারণ এভাবেই আরোগ্যলাভ সম্ভব।

কবির প্রত্যাশা শহরের বাগান একদিন সবুজ হবে। গড়ে তুলতে হবে সবুজ জঙ্গল। প্রকৃতির মুক্তাঞ্চলেই মানুষের মুক্তি ঘটবে--সবুজের পিয়াসী কবি পাঠকের দরবারে এই বার্তাই বয়ে নিয়ে এসেছেন।


Google News এ আমাদের ফলো করুন


Gksolves Google News


ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুকWhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Ads Area