কাজী নজরুল ইসলামের প্রলয়োল্লাস প্রশ্ন ও উত্তর: প্রতিবছর মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন (Praloyollas by Kazi Najrul Islam Questions and Answers Madhyamik Bengali Suggestion) থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মাধ্যমিক বাংলা সিলেবাসের কাজী নজরুল ইসলামের "প্রলয়োল্লাস" র সমস্ত প্রশ্নোত্তর।
এখানে মাধ্যমিক বাংলা ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার প্রশ্ন উত্তর যেমন বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল। যে গুলি পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন। নিচে Praloyollas by Kazi Najrul Islam Questions and Answers ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার MCQ, SAQ প্রশ্ন উত্তর গুলি যত্ন সহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
মাধ্যমিকের বাংলা কাজী নজরুল ইসলামের প্রলয়োল্লাস প্রশ্ন ও উত্তর - Praloyollas by Kazi Najrul Islam Questions and Answers
প্রলয়োল্লাস - কাজী নজরুল ইসলাম
‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটি প্রখ্যাত সাহিত্যিক কাজী নজরুল ইসলামের ‘অগ্নিবীণা’ কাব্য থেকে গৃহিত হয়েছে। আলোচ্য পোস্টে কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।
প্রলয়োল্লাস MCQ প্রশ্নোত্তর - প্রলয়োল্লাস কবিতার MCQ প্রশ্নোত্তর (বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর) - Praloyollas MCQ Questions and Answers
১. ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটি কোন কাব্যের অন্তর্গত? –
(ক) ভাঙার গান
(খ) প্রলয়শিখা
(গ) অগ্নিবীণা
(ঘ) ছায়ানট
উত্তরঃ (গ) অগ্নিবীণা
২. “আসছে এবার অনাগত প্রলয়-নেশার নৃত্য –
(ক) রত
(খ) দূত
(গ) পাগল
(ঘ) মাতন
উত্তরঃ (গ) পাগল
৩. “বজ্ৰশিখার মশাল জ্বেলে আসছে –
(ক) নতুন
(খ) দুর্নিবার
(গ) শকট’
(ঘ) ভয়ংকর
উত্তরঃ (ঘ) ভয়ংকর
৪. “ঝামর তাহার কেশের দোলায় ঝাপটা মেরে গগন –
(ক) মাতায়
(খ) জ্বালায়
(গ) দুলায়
(ঘ) নাচায়
উত্তরঃ (গ) দুলায়
৫. “সর্বনাশী জ্বালামুখী ধুমকেতু তার চামর –
(ক) দোলায়
(খ) বুলায়
(গ) ঢুলায়
(ঘ) নাচায়
উত্তরঃ (গ) ঢুলায়
৬. “অট্টরোলের হট্টগোলে স্তন্ধ –
(ক) বরাকর
(খ) চরাচর
(গ) গগন
(ঘ) অনন্তর
উত্তরঃ (খ) চরাচর
৭. “জগৎ জুড়ে কী ঘনিয়ে আসে? –
(ক) ঝঞা
(খ) প্রলয়
(গ) মেঘ
(ঘ) বৃষ্টি
উত্তরঃ (খ) প্রলয়
৮. “আসবে ঊষা অরুণ হেসে –
(ক) দারুণ বেশে
(খ) মোহন বেশে
(গ) করুণ বেশে
(ঘ) নবীন বেশে
উত্তরঃ (গ) করুণ বেশে
৯. দিগম্বরের জটায় কে হাসে?
(ক) শিশু চাঁদের কর
(খ) পূর্ণ চাঁদের কর
(গ) অর্ধ চাদের কর।
(ঘ) ক্ষয়িত চাঁদের কর
উত্তরঃ (ক) শিশু চাঁদের কর
১০. কবি সবাইকে কী করতে আহ্বান জানিয়েছেন?
(ক) বিপ্লব করতে
(খ) বিদ্রোহ করতে
(গ) প্রতিবাদ করতে
(ঘ) জয়ধ্বনি করতে
উত্তরঃ (ঘ) জয়ধ্বনি করতে
১১. কবিতায় ব্যবহৃত ‘কেতন’ শব্দের অর্থ কী?
(ক) পতাকা
(খ) ঘর
(গ) নিবাস
(ঘ) ব্যজন
উত্তরঃ (ক) পতাকা
১২. প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কোন্ ঝড়ের কথা বলা হয়েছে? _
(ক) টর্নেডো
(খ) ঘূর্ণি
(গ) কালবৈশাখী
(ঘ) ফাপি
উত্তরঃ (গ) কালবৈশাখী
১৩. কীসের দোলায় ঝামর ঝাপটা মেরে গগন দুলায়?
(ক) হাওয়ার
(খ) কেশের
(গ) মেঘের
(ঘ) জটার
উত্তরঃ (খ) কেশের
১৪. চামর চুলায় কে?
(ক) চন্দ্র
(খ) সূর্য
(গ) নক্ষত্র
(ঘ) ধূমকেতু
উত্তরঃ (খ) সূর্য
১৫. বিশ্বপাতার বক্ষ-কোলে কী ঝোলে? –
(ক) ফল
(খ) ফুল
(গ) মুণ্ডু
(ঘ) কৃপাণ
উত্তরঃ (ঘ) কৃপাণ
১৬. পিল এস্ত জটায় কী লুটায়? –
(ক) হাসি
(খ) আনন্দ
(গ) কাঁদন
(ঘ) বেদন
উত্তরঃ (গ) কাঁদন
১৭. কপোল’ শব্দের অর্থ কী? –
(ক) কপাল
(খ) গণ্ডদেশ
(গ) কাঠের পোল
(ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তরঃ (খ) গণ্ডদেশ
১৮. জীবনহারা অ-সুন্দরকে ছেদন করতে আসছে –
(ক) নবীন
(খ) প্রবীণ
(গ) যুবা
(ঘ) শিশু
উত্তরঃ (ক) নবীন
১৯. প্রলয় কোথায় উদ্ধা ছুটায়? –
(ক) নীল খিলানে
(খ) জগৎজুড়ে
(গ) লাল খিলানে
(ঘ) দিগন্তে
উত্তরঃ (ক) নীল খিলানে
প্রলয়োল্লাস অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর - প্রলয়োল্লাস কবিতার SAQ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর - Praloyollas SAQ Question Answer
১. “তোরা সব জয়ধ্বনি কর!”—কে, কাদের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন?
উত্তরঃ মুক্তিকামী কবি নজরুল ইসলাম সমগ্র স্বদেশবাসীকে জয়ধ্বনি করতে বলেছেন।
২. “সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল।”—উদ্ধৃতাংশটিতে ‘সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তরঃ কবি শব্দবন্ধটি দ্বারা দেশবাসীকে সমুদ্রপারের ইংরেজ রাজশক্তির রাজপ্রাসাদের অবরুদ্ধ দরজাকে নির্দেশ করতে চেয়েছেন।
৩. “বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর!”—উদ্ধৃতাংশটিতে কবি ‘ভয়ংকর অভিধায় কাকে নির্দেশ করতে চেয়েছেন?
উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটিতে কবি অনাগত সুদিন তথা নতুন মহাকালের বেশে পুরাতনকে ধ্বংস করতে যেভাবে আসছে, তাকে ‘ভয়ংকর’অভিধায় অভিহিত করতে চেয়েছেন।
৪. “সর্বনাশী জ্বালামুখী ধূমকেতু তার চামর ঢুলায়!”—উদ্ধৃতাংশটিতে ‘ধূমকেতু’ ও ‘চামর’ শব্দ দুটির অর্থ কী?
উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটিতে ‘ধূমকেতু’ শব্দটি দিয়ে সৌরজগতের জ্যোতির্ময় পদার্থ বিশেষকে এবং ‘চামর’ শব্দটি দিয়ে চমরী গোরুর পুচ্ছ নির্মিত ব্যজন বা পাখাকে নির্দেশ করা হয়েছে।
৫. “দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায়,”—উদ্ধৃতাংশটিতে যে দ্বাদশ রবির কথা বলা হয়েছে, তাদের নাম উল্লেখ করো।
উত্তরঃ কবি উদ্ধৃতাংশে যে পুরাণ কথিত দ্বাদশ রবির কথা উল্লেখ করেছেন তারা হলেন—বিবস্বান, অৰ্যমা, পুষা, ত্বষ্টা, সবিদা, ভগ, ধাতা, বিধাতা, বরুণ, মিত্র, শত্রু, উরুক্রম নামধারী সূর্য।
৬. “দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু-চাদের কর”—উদ্ধৃতাংশে কোন্ দেবতার অস্তিত্ব কল্পনা করা হয়েছে?
উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশে দিগম্বর অর্থাৎ দেবাদিদেব মহাদেবের অস্তিত্ব কল্পনা করা হয়েছে যার শিরচুড়ায় উদীয়মান চাঁদের কল্পনা করা হয়েছে।
৭. “ক্ষুরের দাপট তারায় লেগে উল্কা ছুটায় নীল খিলানে!”—উদ্ধৃতাংশে উল্লিখিত ‘উল্কা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশে কবি ‘উল্কা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন মহাকালের যুদ্ধেদ্ধত স্বরূপের তীব্রতা বোঝানোর জন্য। বিজ্ঞানের ভাষায় উল্কা বলতে বোঝায় আকাশের বুকে ভ্রাম্যমাণ অগ্নিপিণ্ড যার মাঝেমধ্যে ভূপৃষ্ঠে পতন ঘটে।
৮. “ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর ?” —ধ্বংস দেখেও তাকে ভয় না-করার কথা বলা হয়েছে কেন?
উত্তরঃ কবি যে ধ্বংসের কথা বলেছেন, সেই মহাকালের ভয়ংকর ধ্বংসলীলার মধ্যেও নবসৃষ্টির বীজ নিহিত থাকে। সেইজন্যই কবি এই ধ্বংস দেখে তাকে ভয় না-করার কথা বলেছেন।
৯. “বধূরা প্রদীপ তুলে ধর।”—কীসের জন্য বন্ধুদের প্রদীপ তুলে ধরার কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ মহাকাল ভয়ংকর বেশে অ-সুন্দরকে ধ্বংস করে সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করতে আসছে। তাই তার আগমনকে বরণ করে নেওয়ার জন্য বন্ধুদের প্রদীপ তুলে ধরার কথা বলা হয়েছে।
১০. “আসবে উষা অরুণ হেসে”—উষা কখন আসবে?
উত্তরঃ কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ নামক কবিতায় তারুণ হেসে ঊষা আসবে মহানিশার শেষে তথা মহারাত্রির পর।
১১. দিগন্তরের কাঁদন কোথায় লুটায়?
উত্তরঃ কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় দিগন্তরের কাঁদন পিঙ্গল ত্রস্ত জটায় লুটায়।
১২. রক্তমাখা কৃপাণ কোথায় ঝোলে ?
উত্তরঃ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রলয়োল্লাস’নামক কবিতায় রক্তমাখা কৃপাণ বিশ্বপাতার বক্ষকোলে দোলে।
১৩. কালবৈশাখির ঝড় কীরূপে আসে?
উত্তরঃ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রলয়োল্লাস’কবিতায় কালবৈশাখির ঝড় মহাকালের চণ্ডরুপে আসে। ধোঁয়ায় ধূপের রূপেও আসে।
১৪. ‘হাঁকে ওই’- কী বলে হাঁক দেয়?
উত্তরঃ “জয় প্রলয়ংকর” বলে হাঁক দেয়।
১৫. ‘আসছে ভয়ংকর!’ – ভয়ংকর কীভাবে আসছে?
উত্তরঃ কবি বলেছেন, বজ্রশিখার মশাল জেলে আসছে ভয়ংকর।
১৬. ‘এবার মহানিশার শেষে’ উষা কীভাবে আসবে?
উত্তরঃ মহানিশা সমাপ্ত হলে ঊষা আসবে অরুণ হেসে।
১৭. ‘দিগম্বরের জটায়’ কী হাসে?
উত্তরঃ দিগম্বরের জটায় হাসে ‘শিশু-চাঁদের কর’ বা সদ্য উদিত চাঁদের কিরণ।
১৮. ‘রণিয়ে ওঠে’ – কোথায় কী রণিয়ে ওঠে?
উত্তরঃ বজ্ররূপ গানে এবং ঝড় তুফানে রণিয়ে ওঠে হ্রেষার কাঁদন।
১৯. ‘…সে চিরসুন্দর!’- কেন তাকে চিরসুন্দর বলা হয়েছে?
উত্তরঃ সে ভাঙে আর গড়ে, তাই সে চিরসুন্দর।
২০. ‘…এবার ওই আসে সুন্দর!’ – কোন বেশে সুন্দর আসছেন?
উত্তরঃ কাল ভয়ংকরের বেশে সুন্দর আসছেন।
২১. ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি কীসের মধ্যে ‘নূতনের কেতন’ দেখেছেন?
উত্তরঃ ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি কালবৈশাখীর ঝড়ের মধ্যে ‘নূতনের কেতন’ দেখেছেন
২২. ‘স্তব্ধ চরাচর’- চরাচর স্তব্ধ কেন?
উত্তরঃ প্রলয়নেশার নৃত্য-পাগল ‘ভয়ঙ্কর’-এর ‘অট্টরোলের হট্টগোলে’ চরাচর স্তব্ধ হয়েছিল।
২৩. ‘আসছে নবীন’ – কী করতে আসছে?
উত্তরঃ জীবনহীন অসুন্দরকে চিরতরে ছেদ করতে আসছে নবীন।
প্রলয়োল্লাস কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর - Praloyollas Short Type Question and Answer
প্রশ্নঃ “আসছে নবীন- জীবনহারা অ-সুন্দরে করতে ছেদন?”- উক্তিটির তাৎপর্য লেখাে। ১+২
উত্তরঃ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় প্রলয়ের দেবতা রুদ্রদেবকে আহ্বান জানানো হয়েছে। কবির কল্পনায়, দেশের নবীন প্রজন্মই হল নবযুগের বার্তাবাহী সেই রুদ্রদেব। দেশমাতৃকার মুক্তিসাধনার ব্রতে ব্রতী তরুণ বিপ্লবীরা প্রথমেই জরাজীর্ণ পুরাতন মানসিকতার উপর আঘাত হানবে। যাকিছু জীবনীশক্তিহীন তথা অসুন্দর, সেই সবকিছুর বিনাশ করবে তারা। এইভাবে একটি মৃতপ্রায় সমাজব্যবস্থার ধ্বংসের মধ্য দিয়ে তারা নতুন যুগের সূচনা করবে। (শব্দসংখ্যা- ৫৮)
প্রশ্নঃ “প্রলয় বয়েও আসছে হেসে”- উদ্ধৃত অংশের তাৎপর্য লেখ। ৩
উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় প্রলয়ের দেবতা রুদ্রদেবকে আহ্বান জানানো হয়েছে। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, ধ্বংসের দেবতা রুদ্রদেব পুরাতন যুগের অবসান ঘটিয়ে নতুন যুগের সূচনা করেন। শুধু পুরাণে নয়, ইতিহাসেও দেখা গেছে যে, পুরাতন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থেকে নতুন সভ্যতার জন্ম হয়। কালের নিয়ম এটাই যে, পুরাতনকে বিদায় নিতে হয় এবং নতুনের আবির্ভাব ঘটে। অর্থাৎ, ধ্বংসের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে নতুন সৃষ্টির সম্ভাবনা। এইজন্য প্রলয়ঙ্কর প্রলয় বয়ে আনলেও মুখে তার হাসি। (শব্দসংখ্যা- ৬৫)
প্রশ্নঃ “ ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চিরসুন্দর। ” সে কে ? ভেঙে আবার গড়ার বিষয়টি বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতার উল্লিখিত অংশে ‘ সে ’ বলতে দেবাদিদেব মহাদেবের প্রতীকে দেশের তরুণ বিপ্লবীদের কথা বলা হয়েছে।
মহাদেব তার রুদ্র মূর্তিতে অসুন্দরের বিনাশ ঘটিয়ে সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করেন। একইভাবে দেশের তরুণ বিপ্লবীরাও ধ্বংসের প্রচণ্ডতা নিয়ে আবির্ভূত হয়। সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ সরকারকে আঘাত করাই তাদের লক্ষ্য। তবে অনেকেই সমাজ পরিবর্তনের জন্য যে ‘ বিপ্লব ’ তাকে ধ্বংসাত্মক বলে মনে করেন , কিন্তু কবির মতে অসুন্দরকে ধ্বংস করেই নবরূপে সমাজ গড়ার মধ্য দিয়ে সত্য – সুন্দরের প্রতিষ্ঠা হয়।
প্রশ্নঃ “ ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়। ” ‘ নূতনের কেতন ’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?
উত্তরঃ প্রলয়োল্লাস কবিতাংশে উল্লিখিত ‘ কেতন ‘ – এর অর্থ হলো পতাকা। কবিতায় ‘ নূতনের কেতন ’ নতুন দিকের সূচনা করার ইঙ্গিত বহন করেছে। ভারতে ইংরেজদের শাসন – শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য কবি নতুনের জয়গানে মুখরিত হয়ে উঠেছেন। তারা কালবৈশাখী ঝড়ের মতো , প্রলয়রূপী শিবের মতো সর্বধ্বংসী প্রলয়ের আগমন বার্তা নিয়ে উপস্থিত।
প্রশ্নঃ এবার মহানিশার শেষে / আসবে ঊষা অরুণ হেসে ” — ‘ ‘ মহানিশা ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতায় ‘ মহানিশা ’ বলতে কবি রাজনৈতিক , সামাজিক শোষণ ও পরাধীনতার জন্য বিশ্বব্যাপী যে অন্ধকারময় অবস্থা তাকে বুঝিয়েছেন। আশাবাদী কবি মনে করেন পরাধীনতা এবং সামাজিক শোষণ – বঞ্চনার মধ্য দিয়ে যে অন্ধকার নেমে এসেছে তার অবসান ঘটে নতুন সূর্যোদয় হবে। মহাদেব ধ্বংসের দেবতা হলেও তার মাথায় থাকে শিশু চাঁদে। তাই ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে যে সৃষ্টি সূচিত হবে তাতে সেই চাঁদের আলোয় ঘর ভরে যাবে।
প্রলয়োল্লাস রচনাধর্মী প্রশ্ন - প্রলয়োল্লাস কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Praloyollas Descriptive Questions and Answers
প্রশ্নঃ “ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর? প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন”- কোন ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে? প্রলয়কে কেন ‘নূতন সৃজন-বেদন’ বলা হয়েছে?
উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি পুরাতন, ক্ষয়িষ্ণু সমাজব্যবস্থা তথা পুরাতন মানসিকতার ধ্বংসের কথা বলেছেন।
আলোচ্য কবিতায় কবি এই সত্যকেই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন যে, ধ্বংসের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সৃষ্টির বীজ। যেমন, ধ্বংসাত্মক কালবৈশাখী ঝড়ে অনেক গাছপালা ভেঙে পড়ে, বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়। কিন্তু ঝড়ের ফলে একদিকে যেমন গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, তেমনি বায়ুবাহিত বীজের মাধ্যমে অনেক নতুন চারাগাছের জন্ম হয়।
কবি পরাধীন ভারতবাসীকে ব্রিটিশদের অপশাসনের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য ধ্বংসের দেবতাকেই আহ্বান করেছেন। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, ধ্বংসের দেবতা হলেন রুদ্রদেব। তবে, বাস্তবে কবি দেশের তরুণ বিপ্লবীদের আহ্বান জানিয়েছেন। এই তরুণ বিপ্লবীরা দেশকে পরাধীনতার বন্ধন থেকে মুক্ত করবে বলে কবি আশা পোষণ করেছেন। তবে, স্বাধীনতা লাভের পথ এতটা মসৃণ নয়। বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত দেশের নবীন প্রজন্মকে প্রথমেই হীনবল ভারতবাসীর দীনহীন মানসিকতাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে হবে, তারপরেই তারা ব্রিটিশ রাজশক্তিকে ভারত থেকে উৎখাত করতে পারবে।
কবির মতে, তরুণ বিপ্লবীদের ভূমিকা আপাতদৃষ্টিতে ধ্বংসাত্মক মনে হতে পারে। তাদের কর্মকান্ডে সমাজের স্থিতাবস্থা সাময়িকভাবে বিঘ্নিত হলেও সেটা নতুন সৃষ্টির প্রতিক্রিয়া ছাড়া আর কিছু নয়। সন্তানের জন্ম দেওয়ার সময় জননী যেমন প্রসব-বেদনা অনুভব করে, তেমনি বিল্পবীদের ক্রিয়াকলাপের মধ্যেও থাকবে নতুনের ‘সৃজন-বেদনা’।
প্রশ্নঃ ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় একদিকে ধ্বংসের চিত্র, আরেকদিকে নতুন আশার বাণী কীভাবে ফুটে উঠেছে, তা কবিতা অবলম্বনে লেখ। ৫
উত্তর– বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় একদিকে রয়েছে ধ্বংসের চিত্র, আরেকদিকে রয়েছে নতুন আশার বাণী। ধ্বংস সব অর্থেই নেতিবাচক, কিন্তু আলোচ্য কবিতায় কবি ধ্বংসের ভয়াবহতার মধ্যে আশার আলোর সন্ধান পেয়েছেন।
কবিতার শুরুতেই ধ্বংসাত্মক কালবৈশাখী ঝড়ের উল্লেখ রয়েছে। তবে, সেই কালবৈশাখী কবির কাছে শুধু ধ্বংসের প্রতীক নয়, ঝড়ের তান্ডবের মধ্যেই কবি নবযুগের কেতন উড়তে দেখেছেন।
ভারতকে পরাধীনতার বন্ধন থেকে মুক্ত করার জন্য কবি যাকে আহ্বান করেছেন, তিনিও ধ্বংসের প্রতীক। তার পরিচয় দিতে গিয়ে কবি বলেছেন, “প্রলয়-নেশার নৃত্য পাগল”। ‘সর্বনাশী জ্বালামূখী ধুমকেতু’ আজ্ঞাবাহী দাসের মতো তার সেবা করে। তার রক্তমাখা তরবারি এবং বজ্রশিখার মশাল দেখে সমস্ত চরাচর যেন স্তব্ধ। জগৎজুড়ে প্রলয় ঘনিয়ে আসছে দেখেও কবি আশা প্রকাশ করেছেন, “জরায়-মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ-লুকানো ওই বিনাশে!” ওই প্রলয়ের পরেই যেন দীর্ঘ অমাবস্যার সমাপ্তি ঘটবে এবং নতুন দিনের সূচনা হবে।
আবার, মহাকালের সারথি হিসেবে প্রলয়ঙ্করের আগমনের মধ্যেও ধ্বংসের ছায়া চোখে পড়ে। কিন্তু প্রলয়ঙ্করের আগমনের কারণটা ইতিবাচক। এতদিন ধরে যেসব দেবতাদের ‘অন্ধ কারার বন্ধ কূপে’ বন্দি করে রাখা হয়েছিল, তাদের উদ্ধার করার জন্যই মহাকালের সারথি প্রলয়ঙ্কর এগিয়ে আসছেন। অন্যভাবে বললে, কারারুদ্ধ স্বাধীনতাকামী তরুণ বিপ্লবীদের মুক্ত করার জন্যই ধ্বংসের দেবতা রুদ্রদেব আসছেন।
এভাবেই সমগ্র কবিতা জুড়ে কবি একদিকে ধ্বংসের চিত্র তুলে ধরেছেন, আরেকদিকে নতুন আশার বাণী শুনিয়েছেন।
প্রশ্নঃ “তোরা সব জয়ধ্বনি কর”- কাদের উদ্দেশ্য কবির এই আহ্বান? কবিতার ভাববস্তু বিশ্লেষণ করে এই জয়ধ্বনির যৌক্তিকতা বিচার কর।
উত্তরঃ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় পরাধীনতার শৃঙ্খলায় আবদ্ধ ভারতবাসীর উদ্দেশ্য এই আহ্বান করেছেন।
আলোচ্য কবিতায় কবি ব্রিটিশদের অত্যাচারে জর্জরিত ভারতবাসীর দুর্দশা মোচনের জন্য এমন একজনকে আহ্বান জানিয়েছেন, যিনি আগে কখনো আসেন নি। সেই ‘অনাগত’ হলেন ‘প্রলয়-নেশার নৃত্য পাগল’। প্রচণ্ড কালবৈশাখী ঝড়ের মত তিনিও তাণ্ডব করবেন। তার তাণ্ডবের মধ্যেই কবি নতুন যুগের নিশান দেখতে পেয়েছেন। কালবৈশাখী ঝড় যেমন ধ্বংসের মধ্য দিয়ে নতুন সৃষ্টির বীজ বপন করে, প্রলয়ঙ্কর তেমনি নতুন সমাজের ভিত্তি স্থাপন করবে। এইজন্য কবি সকলকে জয়ধ্বনি করতে করতে বলেছেন।
যিনি আসছেন তিনি ভয়ঙ্কর, তিনি প্রলয়ঙ্কর। জগৎ জুড়ে তিনি ধ্বংসলীলা চালাবেন। কিন্তু ওই ধ্বংসের মধ্যেই ‘জরায়-মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ’ লুকিয়ে আছে। পুরাতন সমাজব্যবস্থার ধ্বংস করে নতুন যুগের সূচনা করবেন বলেই কবি সকল দেশবাসীকে তার উদ্দেশ্যে জয়ধ্বনি করতে বলেছেন।
তিনি ভারতবাসীকে পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করবেন এবং নতুন আলোর সন্ধান দেবেন। এইজন্য কবি সকলকে জয়ধ্বনি করতে বলেছেন।
ব্রিটিশ রাজশক্তি স্বাধীনতাকামী তরুণ বিপ্লবীদের অন্ধকার কারাগারে নিক্ষেপ করেছিল। কবি আক্ষেপ করে বলেছেন, “অন্ধ কারার বন্ধ কূপে/ দেবতা বাধা যজ্ঞ-যুপে”। এইসব দেবতা-সম বিপ্লবীদের উদ্ধার করবেন তিনি। এইজন্য কবি তাকে স্বাগত জানিয়ে সকল দেশবাসীকে তার উদ্দেশ্যে জয়ধ্বনি করতে বলেছেন।
প্রশ্নঃ ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় কবি প্রলয়ের মধ্যে দিয়ে যে উল্লাস অনুভব করেছেন তা উল্লেখ করো। অথবা , ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতায় প্রলয় ও আশাবাদের সুর কীভাবে ব্যক্ত হয়েছে। তা বুঝিয়ে লেখো। অথবা , ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতার মূলবক্তব্য সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তরঃ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ অগ্নিবীণা ‘ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতাটি আসলে কবির জীবন উল্লাসের কবিতা। কবিতায় মোট উনিশ বার ‘ তোরা সব জয়ধ্বনি কর ’ এই আহ্বানসূচক পঙ্ক্তিটি উচ্চারিত হয়েছে , যা বুঝিয়ে দেয় এই পত্তিটিকেই কবি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন।
শোষণ – বঞ্চনা , পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে জীবনের যে জাগরণ ঘটে , স্বাধীনতা ও সাম্যের দ্বারা যার প্রতিষ্ঠা হয় , তাকেই কবি স্বাগত জানিে ন। গ্রন্থাকারে যে বছর প্রলয়োল্লাস কবিতাটি প্রকাশ পায় ওই একই বছরে ‘ ধূমকেতু ‘ পত্রিকার একটি সংখ্যায় নজরুল লেখেন , “ পূর্ণ স্বাধীনতা পেতে হলে সকলের আগে আমাদের বিদ্রোহ করতে হবে। সকল কিছু নিয়ম – কানুন , বাঁধন – শৃঙ্খল ও মানা – নিষেধের বিরুদ্ধে। ” প্রলয়োল্লাস কবিতায় দেখা যায়
“ সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল। ” অর্থাৎ এই পঙ্ক্তিটি থেকে বোঝা যায় কবি স্পষ্টই বিদ্রোহের কথা বলেছেন। প্রবল তেজ , বিপর্যয় নিয়ে যে বিপ্লবী শক্তির আগমন ঘটে তা প্রাথমিকভাবে শঙ্কিত করতে পারে , কিন্তু বিশ্বমায়ের আসন সে – ই পাতে। কবি দেখেছেন—
“ অন্ধকারার বন্ধ কূপে
দেবতা বাধা যজ্ঞ – যূপে ”
এই দেবতা এখানে স্বাধীনতার প্রতীক। এখান থেকে মুক্ত হয়ে তার আগমনের সময় হয়ে গিয়েছে। তাই ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতায় কবি বলেছেন , ধ্বংস দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আসলে প্রাণহীন অসুন্দরকে বিনাশ করতেই এই ধ্বংস। এর পরেই চিরসুন্দরের প্রতিষ্ঠা ঘটবে। তাকেই স্বাগত জানানোর জন্য সকলকে আহ্বান করেছেন কবি।
প্রশ্নঃ “ কাল ভয়ংকরের বেশে এবার ওই আসে সুন্দর ” – কবি কাল ভয়ংকর কাকে বলেছেন ? উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘ অগ্নিবীণা ‘ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত প্রলয়োল্লাস শীর্ষক কবিতা থেকে গৃহীত হয়েছে।
কাল ভয়ংকর: কবিতায় ‘ কাল ভয়ংকর ‘ বলতে কবি রুদ্ররূপী মহাকাল দেবাদিদেব শিবকে বুঝিয়েছেন। কবির আরও ইঙ্গিত এখানে রয়েছে যাতে বোঝা যায় কবি এক্ষেত্রে জন্মভূমির মৃত্যুভয়হীন নির্ভীক ও মুক্তিকামী তরুণ বিপ্লবীদেরও বুঝিয়েছেন।
তাৎপর্য: সমাজ সচেতন কবি সদাজাগ্রত দৃষ্টিতে সমাজের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন – বিদেশি শাসক ইংরেজদের হাতে দেশের মানুষ অত্যাচারিত , কত স্বদেশি প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠার জন্য অন্ধকূপ কারাগারে বন্দি। এসব দেখে কবির বিদ্রোহী মন প্রতিবাদী হয়ে দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করতে চেয়েছে। তাই কবি আহ্বান জানালেন প্রলয় নেশার নৃত্য পাগল মহাকালকে। তার ভয়ংকর রূপে , মলিন কেশের দোলায় , রক্তমাখা কৃপাণের দোলে , অট্টরোলের হট্টগোলে যে মহাপ্রলয় ঘটবে তা মহাকালের জন্যই সংঘটিত হবে। তবে কবি এই প্রলয় আহ্বান করে বিস্মিত না হয়ে বলেছেন— A “ মাভৈঃ মাভৈঃ ! জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে জরায় মরা মুমুর্যুদের প্রাণ – লুকানো এই বিনাশে ! ” আর কবির বিশ্বাস ধ্বংসের পর আসে সৃষ্টির মহালগ্ন। তাই তো কবির কণ্ঠে শোনা যায়—
“ এবার মহানিশার শেষে
আসবে ঊষা অরুণ হেসে। ”
কবির বিশ্বাস , মানুষের আশা দীর্ঘ বৎসর পর পুরণ হবে। তাই ‘ কাল – ভয়ংকরকে ’ দেখে ভয় পেতে কবি নিষেধ করেছেন। কারণ তিনি জানেন ভয়ংকর ভয়ংকর নয় , বরং এক চিরসুন্দর নবরূপে দেখা দেবে। তাই আলোচ্য প্রলয়োল্লাস কবিতায় তারই জয়ধ্বনি করে কবি সবাইকে নব আনন্দে মেতে উঠতে বলেছেন।
প্রশ্নঃ “ তোরা সব জয়ধ্বনি কর ” –কাদের উদ্দেশে , কেন কবি জয়ধ্বনি করতে বলেছেন ? অথবা , প্রলয়োল্লাস কবিতায় একদিকে ধ্বংসের চিত্র আঁকা হয়েছে আবার অন্যদিকে নতুন আশার বাণী ধ্বনিত হয়েছে — কবিতা অবলম্বনে বিষয়টি আলোচনা করো।
উত্তরঃ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ অগ্নিবীণা ‘ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতায় কবি পরাধীন ভারতবর্ষের শোষিত – বঞ্ছিত , অত্যাচারিত – উৎপীড়িত , অপমানিত , মুক্তিকামী মানুষদের উদ্দেশে এই আহ্বান জানিয়েছেন।
যৌবনের পূজারি কবি কাজী নজরুল ইসলাম পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ দেশমাতার শৃঙ্খল মোচনের আন্দোলনে শামিল করতে চেয়েছেন দেশবাসীকে। তিনি অনুভব করেছেন ঔপনিবেশিক শোষণ – বঞ্ছনা , অত্যাচার – উৎপীড়ন , অপমান – অবজ্ঞা , ধর্মান্ধতা , কুসংস্কার ভারতবাসীকে মেরুদণ্ডহীন করে তুলেছে।
প্রলয়োল্লাস কবিতায় মোট উনিশ বার “ তোরা সব জয়ধ্বনি কর ” এই আহ্বানসূচক পঙ্ক্তিটি উচ্চারিত হয়েছে , যা বুঝিয়ে দেয় এই পুক্তিটিকে কবি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। আসলে ‘ প্রলয়োল্লাস ’ হলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সৃষ্টির বন্দনা। স্বাধীনতা প্রিয় যে তরুণের দল তাদের সুজয় সাহস আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে পরাধীনতা এবং সামাজিক বৈষম্যের অবসান ঘটাতে চায় , কবি তাদেরই জয়ধ্বনি করতে বলেছেন। এই যুবশক্তির মধ্যে রয়েছে আপাত ধ্বংসের উন্মাদনা।
কবির কথায় তারা হলো— “ অনাগত প্রলয় নেশার নৃত্য পাগল ” , শক্তির প্রচণ্ডতা আর অদম্য স্পৃহায় তারা সমাজের যাবতীয় অসুন্দরকে দূর করতে নিজেরা ভয়ংকরের বেশ ধরে। এর মধ্যে দিয়ে পৃথিবীতে নবপ্রাণের প্রতিষ্ঠা ঘটে , প্রাণহীনতার বিনাশ ঘটে—
‘ … জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে / জরায় মরা মুমুর্যুদের প্রাণ লুকানো ওই বিনাশ ! ” তাই সমাজকে সুন্দর করে তুলতে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাতে হবে। কারণ তারাই হবে ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে সৃষ্টির কারিগর। এই কারণেই কবি নজরুল ইসলাম “ তোরা সব জয়ধ্বনি কর ” পঙ্ক্তিটি বার বার ব্যবহার করেছেন।
Google News এ আমাদের ফলো করুন
ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুক, WhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।
Please do not share any spam link in the comment box