দশম শ্রেনীর পথের দাবী গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF: প্রতিবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় Pather Dabi Descriptive Questions and Answers PDF থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি পথের দাবী রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF. নিচে দশম শ্রেনীর পথের দাবী গল্পের প্রশ্ন উত্তর PDF টি যত্নসহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন। পথের দাবী গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন।
পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
‘পথের দাবী’ গল্পটি প্রখ্যাত সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ উপন্যাস থেকে গৃহিত হয়েছে। আলোচ্য পোস্টে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পের গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।
পথের দাবী গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Pather Dabi Descriptive Questions and Answers
প্রশ্ন: “বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ যােলাে আনাই বজায় আছে।” – বাবুটি কে? তার সাজসজ্জার পরিচয় দাও। ১+৪ [মাধ্যমিক ২০১৭]
উঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে ‘বাবুটি’ বলতে সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে ধৃত গিরীশ মহাপাত্রের কথা বলা হয়েছে।
গিরীশ মহাপাত্রের সাজসজ্জা থানায় উপস্থিত সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তার মাথার সামনের দিকে ছিল বড়ো বড়ো চুল কিন্তু দুপাশে এবং পিছনের দিকে চুল ছিল না বললেই চলে। তার মাথায় চেরা সিঁথি এবং চুল থেকে নেবুর তেলের গন্ধ বেরোচ্ছিল। তার গায়ে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি, বুক পকেট থেকে বাঘ-আঁকা একটা রুমালের কিছু অংশ বেরিয়েছিল এবং উত্তরীয় ছিল না। তার পরনে ছিল বিলেতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি।
তার পায়ে সবুজ রঙের ফুল মোজা, সেগুলি হাটুর উপরে লাল ফিতে দিয়ে বাঁধা এবং দু’পায়ে বার্নিশ করা পাম্প শু। জুতোর তলাটা মজবুত ও টেকসই করার জন্য আগাগোড়া লোহার নাল বাঁধানো ছিল। এছাড়া, তার হাতে ছিল হরিণের শিং-এর হাতল দেওয়া এক গাছি বেতের ছড়ি, যেগুলি গত কয়েকদিনের জাহাজের ধকলে নোংরা হয়ে গিয়েছিল।
প্রশ্ন: “তাহার পরিচ্ছদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া মুখ ফিরাইয়া হাসি গােপন করিল”— কে হাসি গােপন করল? তার হাসি পাওয়ার কারণ কী? ১+৪ [মাধ্যমিক ২০২০]
উত্তরঃ অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব মুখ ফিরিয়ে হাসি গোপন করেছিল।
গিরীশ মহাপাত্রের অদ্ভুত সাজসজ্জা দেখে অপূর্বের মনে হাসির উদ্রেক ঘটেছিল। আসলে, শুধু অপূর্ব নয়, গিরীশ মহাপাত্রের বেশভূষা থানায় উপস্থিত সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
তার মাথার সামনের দিকে ছিল বড়ো বড়ো চুল কিন্তু দুপাশে এবং পিছনের দিকে চুল ছিল না বললেই চলে। সেই চুল থেকে নেবুর তেলের যে উৎকট গন্ধ বেরোচ্ছিল তাতে সকলের মাথা ধরে গিয়েছিল। তার গায়ে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি, পরনে ছিল বিলেতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি। পাঞ্জাবির বুক পকেট থেকে বাঘ-আঁকা একটা রুমালের কিছু অংশ বেরিয়েছিল এবং উত্তরীয় ছিল না।
তার পায়ে সবুজ রঙের ফুল মোজা, সেগুলি হাটুর উপরে লাল ফিতে দিয়ে বাঁধা এবং দু’পায়ে বার্নিশ করা পাম্প শু। জুতোর তলাটা মজবুত ও টেকসই করার জন্য আগাগোড়া লোহার নাল বাঁধানো ছিল। এছাড়া, তার হাতে ছিল হরিণের শিং-এর হাতল দেওয়া এক গাছি বেতের ছড়ি, যেগুলি গত কয়েকদিনের জাহাজের ধকলে নোংরা হয়ে গিয়েছিল।
প্রশ্ন: ‘কই এ ঘটনা তো আমাকে বলেন নি’- বক্তা কে? উক্ত ঘটনার বিবরণ দাও। ১+৪
উত্তরঃ অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে রামদাস তলোয়ারকর অপূর্বকে এই কথা বলেছিল।
অপূর্ব একবার ব্রিটিশদের হাতে চূড়ান্তভাবে অপমানিত হয়েছিল। কিন্তু সেইসময় রামদাসকে ওই ঘটনার কথা জানায়নি। তারপর একদিন কথাপ্রসঙ্গে অপূর্ব সেই লাঞ্ছনার কথা রামদাসের সামনে তুলে ধরেছিল। উদ্ধৃত অংশে যে ঘটনার কথা বলা হয়েছে তা হল এইরকম-
কয়েকজন ফিরিঙ্গি যুবক অপূর্বকে বিনা দোষে লাথি মেরে প্লাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে অপূর্ব স্টেশন মাস্টারের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু অন্যায়ের প্রতিকার করা দূরের কথা, সাহেব স্টেশন মাস্টার অপূর্বকে স্টেশন থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। অপূর্বর অপরাধ এটাই ছিল যে সে একজন ভারতীয়। তাই বিদেশি স্টেশন মাস্টার অপূর্বর সঙ্গে কুকুরের মতো ব্যবহার করেছিল।
সেইসময় স্টেশনে বহুসংখ্যক ভারতীয় উপস্থিত ছিল কিন্তু তারা কেউ ব্রিটিশদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসেনি। বরং তারা এই ভেবে ধন্য হয়েছিল যে, সাহেবদের লাথির চোটে অপূর্বর হাড়-পাঁজরা সব ভেঙে যায়নি। তবে, এই ঘটনা অপূর্বর মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল।
প্রশ্ন: ‘পথের দাবী’ রচনা অবলম্বনে অপূর্বের চারিত্রিক বিশ্লেষণ করো। ৫
উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অন্যতম প্রধান চরিত্র হলো অপূর্ব। সে একজন সৎ, শিক্ষিত এবং আদর্শবান যুবক। আলোচ্য পাঠ্যাংশে অপূর্ব চরিত্রের যে দিকগুলি ফুটে উঠেছে হয়েছে সেগুলি হল-
প্রতিবাদী: অপূর্ব রামদাসের মতো সাহসী ছিল না কিন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মতো সৎ সাহসটুকু তার ছিল। সেইজন্য কয়েকজন ব্রিটিশ যুবক তাকে বিনা দোষে লাথি মেরে প্লাটফর্ম থেকে বের করে দিলে সে স্টেশন মাস্টারের কাছে প্রতিবাদ জানাতে ছুটে গিয়েছিল।
দেশপ্রেমী: নিজের দেশের প্রতি তার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ছিল। সেইজন্য রাজদ্রোহী বলে ঘোষিত সব্যসাচী মল্লিকের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন ছিল। সে একথা জানত যে ব্রিটিশ রাজশক্তির বিরুদ্ধাচরণ করার পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে। কিন্তু যে মানুষটি তার মা, ভাইবোনদের ঔপনিবেশিক শক্তির নির্মমতা থেকে রক্ষা করতে চায় সেই সব্যসাচী মল্লিককেই তার সবথেকে আপন মনে হয়েছিল।
বিনয়ী: তার বাবার বন্ধু নিমাইবাবু ব্রিটিশ সরকারের অজ্ঞাবাহী একজন পুলিশ অফিসার। অপূর্ব ব্যক্তিগতভাবে ইংরেজদের ঘৃণা করত ঠিকই কিন্তু তার পিতৃতুল্য নিমাইবাবুর প্রতি সে শ্রদ্ধাবনত ছিল।
আত্মসম্মানবোধ: অপূর্ব যেদিন রেল স্টেশনে হেনস্থার শিকার হয়েছিল সেদিন অনেক ভারতীয় সেখানে উপস্থিত ছিল। কিন্তু কারো মনে সেই ঘটনা রেখাপাত করেনি কারণ ভারতীয়দের প্রতি এরকম অত্যাচার প্রায়ই ঘটত। তবে, সেই লাঞ্ছনা অপূর্বর আত্মসম্মানে আঘাত হেনেছিল। লজ্জায় সেই ঘটনার কথা রামদাসকেও বলতে পারেনি সে।
প্রশ্ন: “যাকে খুঁজছেন সে যে এ নয় তার আমি জামিন হতে পারি”- কে কার সম্পর্কে এই উক্তি করেছিল? বক্তার এরূপ উক্তির কারণ কী?
উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব গিরীশ মহাপাত্র সম্পর্কে এই উক্তি করেছিল।
রাজদ্রোহী সব্যসাচী মল্লিককে ধরার জন্য বাংলা দেশের পুলিশ বর্মা মুলুকে হাজির হয়েছিল। নিমাইবাবুর নেতৃত্বে পুলিশের লোক রেঙ্গুন বন্দর থেকে জনা ছ’য়েক বাঙালি শ্রমিককে সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে আটক করেছিল। তাদের মধ্যে সবথেকে সন্দেহভাজন যে লোকটি, তারই নাম গিরীশ মহাপাত্র।
কিন্তু এই গিরীশ মহাপাত্রের সঙ্গে পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিকের কোনোরূপ সাদৃশ্য অপূর্বর চোখে পড়েনি। একদিকে সব্যসাচী মল্লিক, যার প্রতাপে ব্রিটিশ পুলিশ ভীতসন্ত্রস্ত; আরেকদিকে গিরীশ মহাপাত্র, যে সামান্য কাশির পরিশ্রমেই হাঁপাতে শুরু করেছিল। বিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্রে বিশেষ পারদর্শী এবং বিলেতফেরত ডাক্তার সব্যসাচী মল্লিকের সঙ্গে নেবুর তেলের গন্ধবিলাসী গিরীশ মহাপাত্রের সত্যিই কোনো মিল ছিল না।
এইজন্য অপূর্ব নিশ্চিতভাবে বলেছিল যে পুলিশ যাকে খুঁজছিল সেই ব্যক্তি গিরীশ মহাপাত্র নয়।
প্রশ্ন: “তিনি আমাদের আত্মীয়, শুভাকাঙ্ক্ষী … দেশের চেয়ে তো আপনার নন”- কে কার সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছিল? এই উক্তির আলোকে বক্তার মনোভাব ব্যক্ত কর।
উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব নিমাইবাবু সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছিল।
অপূর্ব একজন সৎ, শিক্ষিত এবং নির্বিরোধী প্রকৃতির যুবক। ব্রিটিশ রাজশক্তির সঙ্গে তার কোনো বিবাদ ছিল না বরং তার পরিবার ইংরেজদের ঘনিষ্ঠ ছিল বলেই মনে হয়। তবে, সে নিজে একবার ব্রিটিশদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিল। একবার কয়েকজন ইংরেজ যুবক বিনা কারণে তাকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল এবং সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে সাহেব স্টেশন মাস্টার তাকে কুকুরের মতো স্টেশন থেকে বের করে দিয়েছিল। অপূর্বর সংবেদনশীল মনে এই ঘটনা রেখাপাত করেছিল এবং সে অত্যাচারী ব্রিটিশ রাজশক্তির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিল।
আলোচ্য অংশে অপূর্ব রামদাসকে জানিয়েছিল যে নিমাইবাবু তাদের পারিবারিক বন্ধু হলেও তার কাছে প্রথমে তার দেশ। আর সেই দেশের নিরীহ মানুষকে ব্রিটিশদের নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে যিনি জীবন পণ করেছিলেন, সেই সব্যসাচী মল্লিককেই সে মনে মনে সমর্থন করেছিল। এই কথার মাধ্যমে তার নিঃস্বার্থ দেশপ্রেম-ভাবনা উজ্জ্বলরূপে প্রকাশিত হয়ে উঠেছে।
Google News এ আমাদের ফলো করুন
ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুক, WhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।
Please do not share any spam link in the comment box