মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নদীর বিদ্রোহ প্রশ্ন ও উত্তর: প্রতিবছর মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন (Nadir Bidroha by Manik Bandyopadhyay Questions and Answers Madhyamik Bengali Suggestion) থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মাধ্যমিক বাংলা সিলেবাসের মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের "নদীর বিদ্রোহ" র সমস্ত প্রশ্নোত্তর।
এখানে মাধ্যমিক বাংলা ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পের প্রশ্ন উত্তর যেমন বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল। যে গুলি পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন। নিচে Nadir Bidroha by Manik Bandyopadhyay Questions and Answers ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পের MCQ, SAQ প্রশ্ন উত্তর গুলি যত্ন সহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
মাধ্যমিকের বাংলা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নদীর বিদ্রোহ প্রশ্ন ও উত্তর - Nadir Bidroha by Manik Bandyopadhyay Questions and Answers
নদীর বিদ্রোহ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পটি প্রখ্যাত সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সরীসৃপ’ গল্প সংকলন থেকে গৃহিত হয়েছে। আলোচ্য পোস্টে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পের গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কবি পরিচিতি
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূর্বপুরুষের আদি নিবাস বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকার বিক্রমপুরে। কিন্তু পরবর্তীতে তার পিতা চলে আসেন ঝাড়খন্ডে। এবং ১৯০৮ সালের ২৯ মে ঝাড়খন্ডের দুমকায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম হয়। তাঁর পিতা ছিলেন হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম নীরদা সুন্দরী দেবী। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর পিতা পেশায় একজন সরকারি কর্মচারী ছিলেন যাকে চাকরিসূত্রে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হতো। এবং সে কারণেই মানিকের শৈশব কেটেছে বাংলা-বিহারের বিভিন্ন স্থানে পিতার সাথে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় হিসেবে আমরা যাকে চিনি তাঁর প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ডাক নাম মানিক।।
১৯২৬ সালে মেদিনীপুর জেলা স্কুল থেকে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করেন প্রথম বিভাগে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে বাঁকুড়ার মুসলিম মিশন কলেজ থেকে আই এস সি পাশ করার পর তিনি ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে গণিতকে অন্যতম বিষয় হিসেবে নিয়ে। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি বাঁশি বাজানো গান গাওয়া সাহিত্য সাধনা ইত্যাদির অনুরক্ত ছিলেন।
কলেজ জীবনে "অতসীমামী" নামক একটি গল্প লিখে তিনি "বিচিত্রা" পত্রিকার অফিসে জমা দেন। এবং সর্বস্তরের লেখক ও পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে "বঙ্গশ্রী" পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে তাকে নিযুক্ত করা হয়। তিনি বহু উপন্যাস এবং ছোট গল্প রচনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস গুলি হল "পুতুলনাচের ইতিকথা" (১৯৩৬), "পদ্মা নদীর মাঝি" (১৯৩৬), "চতুষ্কোণ" (১৯৪৮), "স্বাধীনতার স্বাদ" (১৯৫১), "সোনার চেয়ে দামি" (১৯৫১), "হলুদ নদী সবুজ বন" (১৯৫৬), এছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য ছোটগল্প গুলি হল "সরীসৃপ" (১৯৩৯), "আজ কাল পরশুর গল্প" (১৯৪৬), "লাজুক লতা" (১৯৫০), "প্রাগৈতিহাসিক" (১৯৩৭)।
চিত্র রুপায়নে ও কথাসাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এক উজ্জ্বল নাম। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৩রা ডিসেম্বর নানা প্রকার অসুখে এই প্রতিভাবান সাহিত্যিক এর মৃত্যু ঘটে।
নদীর বিদ্রোহ উৎস
নদীর বিদ্রোহ নামক ছোট গল্পটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের "সরীসৃপ" মূল গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
নদীর বিদ্রোহ সারসংক্ষেপ
নদীর বিদ্রোহ গল্পটিতে নদেরচাঁদ নামক চরিত্রটির মাধ্যমে ফুটে উঠেছে নদীর প্রতি মানুষের অন্তরের আবেগ। নদী এই গল্পে চিত্রায়িত হয়েছে একেবারে প্রবাহমান জীবনের মত। আর সেই নদী নদেরচাঁদের কাছে যেন তার পরমাত্মীয়, যেখানে নদেরচাঁদ তার অন্তরের সমস্ত আকুতি প্রকাশ করতে পারে। একদিকে সে তার দেশের ক্ষীণস্রোতা ছোট নদীটিকে ভালোবেসেছে, আবার তার ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হয়নি স্টেশন মাস্টার জীবনের চেনা প্রশস্ত জলপূর্ণ টইটম্বুর নদীটিও।
ঘটনাপ্রবাহে আমরা দেখতে পাই নদেরচাঁদ একজন স্টেশন মাস্টারের চাকরি করে। এক ক্ষীণস্রোতা নদীর পাশে তার জন্ম হওয়ার কারণে ছোট থেকেই নদীর প্রতি তার একটা ঐকান্তিক টান। তার শৈশব কৈশোর ও যৌবনের সাথে নদী যেন মিলেমিশে একাত্ম হয়ে আছে। প্রচন্ড বর্ষায় সে পাঁচ দিন বের হতে পারেনি। ফলে নদীর সাথে তার সাক্ষাৎ হয়নি দিন পাঁচেক। সে ছটফট করেছে, অত্যন্ত টান অনুভব করেছে এবং এটাও ভেবেছে যে এরপর যদি সে নদীকে দেখতে না পায় তাহলে হয়তো সে আর বাঁচবে না। তাই বৃষ্টি একটু কমলেই সে ছুটে গেছে নদীর কাছে তার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কিন্তু পাঁচ দিন আগে এসে যে নদীকে সে দেখেছিল পরিপূর্ণ আনন্দের প্রকাশ, চঞ্চলতার প্রকাশ, তাকে আজ দেখে যেন ভয়াল ভয়ঙ্কর মনে হয়। নদীর জলস্রোত ফুলে-ফেঁপে গর্জে উঠছে। ব্রিজের পিলারে ধাক্কা খেয়ে সৃষ্টি হচ্ছে জলের আবর্ত। নদী যেন চাইছে প্রকৃতির বিরুদ্ধে সংঘটিত মানুষের সমস্ত জুলুম-অত্যাচার কে ধুলিস্যাৎ করে দিতে। নিষ্পলক তাকিয়ে থাকার কারণে নদেরচাঁদ কোথাও যেন আবেশ মুখর হয়ে ওঠে। আনমনা হয়ে সে ছুঁড়ে ফেলে দেয় তার স্ত্রীকে লেখা চিঠি খানি, যেটি সে লিখেছিল বড় যত্ন করে সময় নিয়ে। নদী যেন তার কাছে এক জীবন্ত বন্ধু, তার সমস্ত চাঞ্চল্যের সঙ্গী। ভয়ঙ্কর জলস্রোতে কাগজের চিঠিখানা পাক খেয়ে তলিয়ে যায়। নদেরচাঁদ ভাবতে থাকে নদী কাগজ খানিকি লুকিয়ে ফেলেছে এবং তার সাথে লুকোচুরি খেলছে। এমন চলতে চলতেই সন্ধ্যে নামে কিন্তু নদের চাঁদ খেয়াল করে উঠতে পারে না। চারিদিক অন্ধকার হয়ে যাওয়ার পরেও সে বসে বসে ভিজতে থাকে। সে ভাবে, বাঁধ দিয়ে যেখানে নদীর জলপ্রবাহে বাধা তৈরি করা হয়েছে, নদী যেন উন্মত্ত ক্ষোভে সেই সমস্ত বাধার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। যাদের মনে হয় নদীর এই ভয়াল ভয়ঙ্কর রূপ বোধহয় সেই বন্দীদশা থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্যই। সে যেন মানুষের হাতে গড়া ব্রিজ-বাঁধ ভেঙে বেরিয়ে এসে খুঁজে নিতে চাইছে নিজের স্বাভাবিক স্বাচ্ছন্দ গতি। কিন্তু নদেরচাঁদ এটাও ভাবে একদিন যদি নদী তার গতি খুঁজে পায় এই হিংস্র মানুষ তাকে ছাড়বে না। আবার বাঁধ দেবে আবার বন্দী করবে। একটা সময় এই প্রশস্ত নদীও হয়তো মজে আসবে, পরিণত হবে তার জন্ম স্থানের সেই ক্ষীণস্রোতা নদীটিতে। একজন স্টেশন মাস্টার হিসাবে কয়েকদিন আগেই তার নতুন রং করা ব্রিজটিকে দেখে গর্ব হত। আজ এই প্রশস্ত নদীর বন্ধু নদেরচাঁদ মনে করে ব্রিজের কোনো প্রয়োজনই ছিল না। যে বাঁধ কিম্বা ব্রিজ প্রকৃতির স্বাধীনতা গ্রাস করে, প্রকৃতিকে খাঁচায় বন্দী করে , সেই ব্রিজ অপ্রয়োজনীয়। আজ নদের চাঁদ নদীর পরমাত্মীয়, তাই ব্রিজের কথা না ভেবে সে আজ নদীর মুক্তি কামনা করছে। এভাবে অন্ধকারে আবেশ বিভোর হয়ে নদের চাঁদ নদীর কথা ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে যেতে থাকে স্টেশনের দিকে। তার খেয়াল থাকে না কখন সে ব্রীজ শেষ করে ফেলেছে। তাই আবেগি নদেরচাঁদ শুনতে পায়না পেছন থেকে আসা প্যাসেঞ্জার ট্রেনের হুইসেল। তখনই নদেরচাঁদের জীবনে নেমে আসে করুণ পরিণতি খানি। এক প্যাসেঞ্জার ট্রেন এসে পিষে দিয়ে চলে যায় তাকে। লেখক যেন কাহিনীর শেষ অংশে দেখিয়েছেন আধুনিক মানব সভ্যতা কিংবা যন্ত্রসভ্যতাকে নিয়ে যারা প্রশ্ন করে, যারা যন্ত্রসভ্যতার বিপরীতে গিয়ে প্রকৃতির কথা ভাবে, যন্ত্র সভ্যতা তাদের ক্ষমা করেনা। তাই আবেগি প্রকৃতিপ্রেমী নদের চাঁদের স্বার্থের এই পৃথিবীতে এমন পরিণতিই বোধহয় প্রাপ্য।
নদীর বিদ্রোহ MCQ প্রশ্নোত্তর - নদীর বিদ্রোহ গল্পের MCQ প্রশ্নোত্তর (বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর) - Nadir Bidroha MCQ Questions and Answers
1. স্ত্রীকে লেখা নদের চাঁদের চিঠির পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল-
[A] দু পৃষ্ঠা
[B] তিন পৃষ্ঠা
[D] পাঁচ পৃষ্ঠা
Answer: [D] পাঁচ পৃষ্ঠা
2. নদের চাঁদ প্রতিদিন কোথায় বসে নদীকে দেখে?
[A] নৌকোতে বসে
[B] ব্রিজের ওপর বসে
[C] ধারক স্তম্ভের শেষ প্রান্তে বসে
[D] নদীর তীরে বসে।
Answer: [C] ধারক স্তম্ভের শেষ প্রান্তে বসে
3. নদের চাঁদের মৃত্যু হয়েছিল—
[A] বাসের ধাক্কায়
[B] লরির ধাক্কায়
[C] ট্রামের ধাক্কায়
[D] ট্রেনের ধাক্কায়
Answer: [D] ট্রেনের ধাক্কায়
4. নদের চাঁদ স্টেশন মাস্টারি করেছিল—
[A] চার বছর
[B] তিন বছর
[C] দশ বছর
[D] পাঁচ বছর
Answer: [B] তিন বছর
5. কোন্ আকস্মিক আঘাত নদের চাঁদের চেতনাকে দিশাহারা করে দিয়েছিল?
[A] প্রবল বৃষ্টির ঝাপটা
[B] ব্রিজ ভাঙার শব্দ
[C] ট্রেন চলে যাওয়ার শব্দ
[D] বাতাসের প্রবল শব্দ
Answer: [B] ব্রিজ ভাঙার শব্দ
6. “কিন্তু শৈশবে, কৈশােরে আর প্রথম যৌবনে বড়াে ছােটোর হিসেব আর কে করে?”—উক্তিটি যার সম্বন্ধে করা হয়েছে
[A] নদের চাঁদের দেশের নদীটির সম্বন্ধে
[B] নদের চাঁদ সম্বন্ধে
[C] নদের চাঁদের সহকারীর সম্বন্ধে
[D] যেখানে নদের চাঁদ কাজ করত সেখানকার নদীটির সম্বন্ধে
Answer: [C] নদের চাঁদের সহকারীর সম্বন্ধে
7. নদের চাঁদের বয়স-
[A] ত্রিশ বছর
[B] পঁচিশ বছর
[C] পঁয়ত্রিশ বছর
[D] কুড়ি বছর
Answer: [A] ত্রিশ বছর
8. “…এতকাল নদের চাঁদ গর্ব অনুভব করিয়াছে”—কীসের জন্য এই গর্ব অনুভব?
[A] নতুন রং করা ব্রিজটির জন্য
[B] নিজের পেশার জন্য
[C] শৈশবের ক্ষীণস্রোতা নদীটির জন্য
[D] নদীর প্রতি তার ভালােবাসার জন্য
Answer: [A] নতুন রং করা ব্রিজটির জন্য
9, “নদের চাঁদ – ডাকিয়া বলিল।” (শূন্যস্থান পূরণ করাে)
[A] বন্ধুকে
[B] নতুন সহকারীকে
[C] পুরাতন ভৃত্যকে
[D] পুরাতন সহকারীকে
Answer:[B] নতুন সহকারীকে
10. দেশের সেই ক্ষীণ স্রোতা নির্জীব নদীটি—
[A] আত্মীয়ার মতােই তার মমতা পেয়েছিল
[B] অনাত্মীয়ার মতােই তার দুর্ব্যবহার পেয়েছিল
[C] সকলের আদর পেয়েছিল
[D] সকলের অনাদর পেয়েছিল
Answer: [A] আত্মীয়ার মতােই তার মমতা পেয়েছিল
নদীর বিদ্রোহ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর - নদীর বিদ্রোহ গল্পের SAQ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর - Nadir Bidroha SAQ Question Answer
১. ‘আমি চললাম হে!’ – নদেরচাঁদ কখন একথা বলেছিল?
উত্তরঃ চারটা পঁয়তাল্লিশের প্যাসেঞ্জার ট্রেনটিকে রওনা করিয়ে দিয়ে নদেরচাঁদ একথা বলেছিল।
২. নদেরচাঁদ লাইন ধরে কত মাইল হেঁটেছিল?
উত্তরঃ নদেরচাঁদের লাইন ধরে এক মাইল হেঁটেছিল।
৩. কী না করলে নদেরচাঁদ আর বাঁচবে না?
উত্তরঃ ব্রিজের একপাশে চুপচাপ বসে কিছুক্ষণ নদীকে না দেখলে সে আর বাঁচবে না।
৪. ‘নদীর জন্য এমনভাবে পাগল হওয়া কি তার সাজে?’- এই প্রশ্ন কেন?
উত্তরঃ কারণ তার বয়স ত্রিশ বছর এবং সে একটা স্টেশনের স্টেশনমাস্টার।।
৫. নদীকে ভালােবাসার কী কৈফিয়ত নদেরচাঁদ দিয়েছিল?
উত্তরঃ নদীকে ভালােবাসার জন্য নদেরচাঁদের কৈফিয়ত ছিল এটাই যে, সে নদীর ধারে জন্মেছে, বড়ো হয়েছে এবং চিরকাল নদীকে সে ভালোবেসেছে।
৬. ‘সে প্রায় কাঁদিয়া ফেলিয়াছিল;’ – কী দেখে সে কেঁদেছিল?
উত্তরঃ নদেরচাঁদের দেশের বাড়িতে ক্ষীণস্রোতা নদীটি একবছর অনাবৃষ্টির কারণে শুকিয়ে গিয়েছিল বলে সে কেঁদেছিল।
৭. ‘নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হইয়া গেল।’ – কেন সে স্তম্ভিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ব্রিজের কাছে এসে প্রথমবার নদীর দিকে তাকাতেই নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হয়েছিল।
৮. ‘আজ যেন সেই নদী খেপিয়া গিয়াছে।’– নদীর এমন অবস্থার কারণ কী?
উত্তরঃ নদীর জলধারাকে বেঁধে রাখার উদ্দেশ্যে যে ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল, তারই প্রতিবাদে নদী খেপে উঠেছিল।
৯. চেনা নদীকে নদেরচাঁদের আরও বেশি ভয়ংকর ও অপরিচিত মনে হয়েছিল কেন?
উত্তরঃ নদীর পঙ্কিল জল ফুলে ফেঁপে উঠেছিল বলেই চেনা নদীকে নদেরচাঁদের অপরিচিত ও ভয়ংকর মনে হচ্ছিল।
১০. ‘আজও সে সেইখানে গিয়া বসিল।– কোন্ স্থানে সে গিয়ে বসেছিল?
উত্তরঃ সে অর্থাৎ নদেরচাঁদ ব্রিজের মাঝামাঝি ইট-সুরকি আর সিমেন্টের গাঁথা ধারকস্তম্ভের শেষপ্রান্তে গিয়ে বসেছিল।
১১. ‘নদেরচাঁদের ভারী আমােদ বােধ হইতে লাগিল। – কী দেখে তার আমােদ হয়েছিল?
উত্তরঃ নদীর জল এতোটা উপরে উঠে এসেছিল যে হাত বাড়ালেই নাগাল পাওয়া যেত। সেটা দেখেই নদেরচাঁদের আমোদ হয়েছিল।
১২. ‘নদীর সঙ্গে খেলা করার লােভটা সে সামলাইতে পারিল না’ – কীভাবে সে নদীর সঙ্গে খেলা করেছিল?
উত্তরঃ নদেরচাঁদ তার স্ত্রীকে লেখা চিঠির এক-একটি পাতা ছিঁড়ে দুমড়ে-মুচড়ে জলে ফেলছিল। এইভাবে সে নদীর সঙ্গে খেলা করছিল।
১৩. ‘এই ভীষণ মধুর শব্দ শুনিতে শুনিতে সর্বাঙ্গ অবশ, অবসন্ন হইয়া আসিতেছে।’ – কোন্ শব্দ শুনে শরীর অবশ ও অবসন্ন হয়েছিল?
উত্তরঃ নদীর জলের অশ্রুতপূর্ব শব্দের সঙ্গে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ মিশে যে সংগত তৈরি হয়েছিল সেই শব্দ শুনে নদেরচাঁদের শরীর অবশ ও অবসন্ন হয়েছিল।
১৪. ‘কিছুক্ষণের জন্য নদেরচাঁদকে দিশেহারা করিয়া রাখিল’- কিছুক্ষণের জন্য কী তাকে দিশেহারা করে রেখেছিল?
উত্তরঃ ব্রিজের উপর দিয়ে একটা ট্রেন চলে যাওয়ার শব্দে হঠাৎ নিদ্রাভঙ্গ হওয়ার মতো একটা বেদনাদায়ক চেতনা তাকে দিশেহারা করে রেখেছিল।
১৫. ‘নদী এমনভাবে খেপিয়া যাইতে পারে…’ – নদী খেপে গিয়েছিল কেন?
উত্তরঃ মানুষ নদীর উপর ব্রিজ তৈরি করে নদীর জলস্রোতকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছিল। তাই নদী খেপে গিয়েছিল।
১৬. ‘কিন্তু পারিবে কি?’ – কী পারার কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ ব্রিজটা ভাসিয়ে এবং দুপাশে মানুষের তৈরি বাঁধ ভেঙে ফেলে নদীর নিজের গতিপথ করে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
১৭. “মানুষ কি তাকে রেহাই দিবে?”- কেন এই উক্তি?
উত্তরঃ নদী যদি একবার মানুষের তৈরি ব্রিজ এবং বাঁধ ভেঙে ফেলে, তারপরও মানুষ আবার সেইসব নতুন করে গড়ে ফেলবে। তাই একথা বলা হয়েছে।
১৭. ‘আজ তার মনে হইল কী প্রয়ােজন ছিল ব্রিজের?’ – কেন এমন মনে হয়েছিল?
উত্তরঃ ব্রিজ তৈরি করার ফলে নদীর গতিপথ সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল। তাই নদেরচাঁদের এমন মনে হয়েছিল।
১৮. নদেরচাঁদের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল?
উত্তরঃ নদেরচাঁদ রেললাইন ধরে অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটছিল। এমন সময় পিছন থেকে সাত নম্বর ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি তাকে পিষে দিয়ে চলে যায়।
১৯. ‘এক একখানা পাতা ছিড়িয়া দুমড়াইয়া মােচড়াইয়া জলে ফেলিয়া দিতে লাগিল।’ – উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কীসের পাতা জলে ফেলতে লাগল?
উত্তরঃ উদ্দিষ্ট ব্যক্তি অর্থাৎ নদেরচাঁদ তার স্ত্রীকে লেখা পাঁচপাতার চিঠি থেকে এক-একটা পাতা জলে ফেলতে লাগল।
২০. নদেরচাঁদ কতদিন যাবৎ স্টেশনমাস্টারের চাকরি করছিল?
উত্তরঃ চার বছর ধরে নদেরচাঁদ স্টেশন মাস্টারের চাকরি করছিল।
নদীর বিদ্রোহ গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর - Nadir Bidroha Short Type Question and Answer
প্রশ্নঃ “নদেরচাঁদ সব বোঝে।” — নদেরচাঁদ কী বোঝে?
উত্তরঃ “নদীর বিদ্রোহ” গল্পের নদেরচাঁদ জানত যে, নদীর প্রতি তার আকর্ষণ অনেকটা পাগলামির পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। কর্মক্ষেত্রে দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত একজন পরিণত মানুষের এই পাগলামি বাকিদের যে অস্বাভাবিক মনে হতে পারে, তা নদেরচাঁদ বোঝে।
প্রশ্নঃ “চিরদিন নদীকে সে ভালোবাসিয়াছে।” —কেন?
উত্তরঃ নদীমাতৃক বঙ্গদেশের সন্তান নদেরচাঁদের জন্ম নদীর ধারে, সেখানেই তার বড়ো হয়ে ওঠা। শৈশবে, দেশের ক্ষীণস্রোত নির্জীব নদীটি অসুস্থ, দুর্বল আত্মীয়ের মতো তার মমতা পেয়েছিল। নদী তার প্রানধারা, প্রাত্যহিকতার অঙ্গ। এই আজন্ম সংযোগের কারনেই নদীকে সে ভালোবেসেছিল।
প্রশ্নঃ মানিক বন্দোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম কী?
উত্তরঃ মানিক বন্দোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম প্রবোধ কুমার বন্দোপাধ্যায়।
প্রশ্নঃ “সে প্রায় কাঁদিয়া ফেলিয়াছিল।” — ‘সে’ কেঁদে ফেলছিল কেন?
উত্তরঃ নদেরচাঁদের দেশের ক্ষীণস্রোত নির্জীব নদীটি একবার তাকে খুব কষ্ট দিয়েছিল। অনাবৃষ্টির ফলে সেই নদীর ক্ষীণ স্রোতধারা প্রায় শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে ‘সে’ অর্থাৎ নদেরচাঁদ কেঁদে ফেলেছিল।
প্রশ্নঃ “নদীর দিকে দৃষ্টিপাত করিয়াই নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হইয়া গেল” কেন?
উত্তরঃ অবিরাম বৃষ্টির কারণে নদেরচাঁদ পাঁচ দিন নদীকে দেখতে যেতে পারেনি। পাঁচ দিন আগে বর্ষার জলে পরিপুষ্ট নদীতে নদেরচাঁদ আনন্দপূর্ণ চাঞ্চল্য লক্ষ্য করেছিল কিন্তু পাঁচ দিন পর সেই নদীর ক্ষিপ্ত, গাঢ়, ফেনোচ্ছাসিত ভয়ংকর রূপকে প্রথমবার দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায়।
প্রশ্নঃ বর্ষণপুষ্ট নদীকে নদেরচাঁদের অপরিচিত বলে মনে হয়েছিল কেন?
উত্তরঃ নদেরচাঁদ পাঁচ দিন আগে তার চার বছরের পরিচিত বর্ষার জলে পুষ্ঠ নদীতে দেখেছিল পরিপূর্ন আনন্দের প্রকাশ। কিন্তু পাঁচ দিনের অবিরাম বৃষ্টির পর নদীর গাঢ় ও পঙ্খিল জল ফুলে ফেঁপে উঠে যেন বিদ্রোহ করছে। পরিচিত সংকীর্ণ ক্ষীণস্রোত নদীর এই রূপ নদেরচাঁদের অপরিচিত মনে হয়েছিল।
প্রশ্নঃ কোথায় বসে নদেরচাঁদের প্রতিদিন নদীকে দেখে?
উত্তরঃ নদেরচাঁদ প্রতিদিন সেতুর মাঝামাঝি ইট, সুরকি আর সিমেন্টে গাঁথা ধারকস্তম্ভের শেষ প্রান্তে বসে নদীকে দেখে।
প্রশ্নঃ পকেট থেকে কী বার করে নদেরচাঁদ স্রোতের মধ্যে ছুড়ে দিয়েছিল?
উত্তরঃ “নদীর বিদ্রোহ” গল্পের নায়ক নদেরচাঁদ পকেট থেকে একটি পুরোনো চিঠি বার করে নদীর স্রোতের মধ্যে ছুড়ে দিয়েছিল।
প্রশ্নঃ “এক একখানি পাতা ছিঁড়িয়া দুমড়াইয়া মোচড়াইয়া মোচড়াইয়া জলে ফেলিয়া দিতে লাগিল।” —উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কীসের পাতা হলে ফেলতে লাগল?
উত্তরঃ নদেরচাঁদ তার বউকে লেখা পাঁচ পাতার একটি চিঠির এক-একটা করে পাতা ছিঁড়ে দুমড়ে-মুচড়ে জলে ফেলতে শুরু করেছিল।
প্রশ্নঃ “বড়ো ভয় করিতে লাগিল নদের চাঁদের” —নদের চাঁদের কেন ভয় করতে লাগল?
উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশ বর্ষার জলে পুষ্ট বিদ্রোহিনী নদীকে দেখে নদের চাঁদের ভয় লাগার কথা বলা হয়েছে। প্রবল বৃষ্টিতে নদী আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। সে উপলব্ধি করে রোষে-ক্ষোভে উন্মত্ত নদীর এত কাছে বসে থাকা উচিত হয়নি।
প্রশ্নঃ “নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে”—কে কীভাবে নদীর বিদ্রোহের কারণ বুঝতে পারল?
উত্তরঃ নদের চাঁদের অনুভব: পাঁচদিন টানা বৃষ্টির পর নদীর কাছে গিয়ে নদের চাঁদ দেখল নদীর পঙ্কিল জলস্রোত ফুলে ফেঁপে উদ্যম গতিতে ছুটে চলেছে। নদী যেন উন্মত্ত। নদীর জলস্রোত ব্রিজ ও বাঁধের কাছাকাছি এসেছে যে কোনাে মুহূর্তে ভেঙে দিতে চায় সব বাধাকে। নদের চাঁদের মনে হল নদী যেন মুক্তি পেতে চাইছে, ফিরে পেতে চাইছে তার স্বাভাবিক গতি। তাই তার এই ভয়াল বিদ্রোহ।
প্রশ্নঃ “নদীর ধারে তার জন্ম হইয়াছে”—কার কথা বলা হয়েছে? একথা বলার কারণ কী?
উত্তরঃ নদের চাঁদ; মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে নদের চাঁদের কথা বলা হয়েছে।
একথা বলা কারণ: নদী কেন্দ্রিক জীবনে যারা অভ্যস্ত তাদের সঙ্গে নদীর সম্পর্ক বারােমাস। নদের চাদ নদীকে না দেখে থাকতে পারে না। সে নিজেও তা বােঝে, তবু নিজেকে সংযত করতে পারে না। নদীর প্রতি তার ভালােবাসার কারণ আছে। নদীর ধারে তার জন্ম হয়েছে। নদীর ধারেই সে শৈশব, বাল্য, কৈশাের। কাটিয়েছে। তাই নদীর প্রতি ভালােবাসা তার অদম্য।
প্রশ্নঃ “চিঠি পকেটেই ছিল”—কোন চিঠির কথা বলা হয়েছে? সেই চিঠির কী পরিণতি হয়েছিল?
উত্তরঃ নদের চাঁদের বিরহপূর্ণ চিঠি: নদের চাঁদ গ্রাম থেকে বহু দূরে কর্মক্ষেত্রে বাস করত গৃহে বসবাসরত পত্নীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ সবসময় হত না। তাই চিঠিই ছিল একমাত্র ভরসা। বিশেষত বর্ষা ঋতুর আবেগপূর্ণ আবহাওয়া নদের চাঁদকে বিরহে উতলা করে তুলেছিল। তাই পাঁচদিনের বর্ষণের সুরে সুর মিলিয়ে সে একটি বিরহপূর্ণ চিঠি লিখেছিল। এখানে সেই চিঠির কথা বলা হয়েছে। নদের চাদ। আবেগপ্রবণ চিঠিতে লিখেছিল, ভয়ংকরী নদীর সঙ্গে খেলা করার তাগিদে সেই চিঠি ছিড়ে ছিড়ে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছিল।
নদীর বিদ্রোহ রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - নদীর বিদ্রোহ গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর -Nadir Bidroha Descriptive Questions and Answers
1. নদীর বিদ্রোহ গল্পে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নদীর যে রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন তা বর্ণনা করাে।
উত্তরঃ ভূমিকা: ‘নদীর বিদ্রোহ’ নামাঙ্কিত গল্পে নদের চাঁদের সঙ্গে নদীর সুগভীর সম্পর্ক রচিত হয়েছে। আলােচ্য গল্পে দুটি নদীর কথা আছে। একটি হল নদের চাঁদের গ্রামের নদী, আর একটি হল তার কর্মস্থানে নদীটি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন ৩০ বছর বয়সেও নদের চাঁদের নদীর প্রতি গভীর হৃদয়ের সমাজ তার কোথাও ঘাটতি পড়েনি। সে নিজেও জানে নদীর জন্য অদ্ভুত এক পাগলামাে। রয়েছে তার।
নদীর রূপ: নদের চাঁদ রেল লাইন ধরে এক মাইল দূরে নদীর ওপরকার সেতুর ওপর দিয়ে হাঁটতে থাকে। টানা পাঁচদিন বৃষ্টির পর আজ নদীকে দেখার সুযােগ। হয়েছে। আর সেই জন্য নদের চাঁদের আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিল। পাঁচদিনের আকাশভাটা বৃষ্টির পর নদী যেন এক অপরুপ রুপ ধারণ করেছে। দুদিকে মাঠঘাট জলে ডুবে গিয়েছে। আর নদের চাঁদ নদীর বর্ষণপুঞ্জ মূর্তি কল্পনা করে আনন্দে মাতােয়ারা হয়েছে। পাঁচদিন আগেও বর্ষার জলে পরিপুষ্ট নদীর সেই নদী ক্ষেপে গিয়েছে। কিছুক্ষণ পর মুষলধারায় আরম্ভ হলে নদেরচাদ বসে বসে ভিজতে থাকে। নদী থেকে একটা ভীষণ মধুর ধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়। নদীর রূপ দেখে নদের চাঁদ ভয় পেয়ে যায়। তার মনে হয় রাগে ক্ষোভে উন্মত্ত হয়ে উঠেছে এই নদী। তার রাগের কারণ হল তার গতিপথে অসংখ্য বাঁধ ও সেতু বসিয়ে চলার পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। ফলে নদীর ভবিষ্যত দেখতে পায় নদের চাঁদ। তার মনে হয় এই নদী একদিন ক্ষীণস্রোতা নদীতে পরিণত হবে। এভাবে নদী হারিয়ে যাবে।
2. নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে-নদীর বিদ্রোহের কারণ কী ছিল? সে কীভাবে তা বুঝিতে পারিয়াছে?
উত্তরঃ বিদ্রোহের কারণ: ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্প অনুসারে আজন্ম নদীর ধারে বেড়ে ওঠা নদের চাঁদ নদীর প্রতিটি আচরণের তাৎপর্য জানত। বর্ষার জলে উপচে পড়া নদীকে সে ক্ষিপ্ত, বিক্ষুব্ধ বলে জানত। মানুষের তৈরি বাঁধ ও সেতু নদীকে বন্দি করে ফেলেছিল। বর্ষার আগমনে সেই নদী নিজের রুপ পাল্টে ফেলে। নদেরর্চাদ তার। সংবেদনশীল অন্তজগৎকে উপলব্ধি করেছিল নদীর বিক্ষোভের ভাষায়। যুগ যুগ ধরে মানুষের প্রযুক্তির কাজে অবদমিত প্রকৃতি নদীর মাধ্যমে প্রতিশােধ নিতে চাইছে। তাই শীর্ণকায়া নদী পরিণত হয়েছে। প্রকৃতির প্রতি মানুষের অবিচার একদিন মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে। এই সমস্ত উপলব্ধি করে। নদের চাঁদ বুঝেছিল নদীর বিদ্রোহের কারণ।
নদের চাঁদের উপলব্ধি: নদের চাঁদ একজন সংবেদনশীল, শিল্পী মনের মানুষ। নদী । সম্পর্কে তার কৌতূহল আকর্ষণ পাগলামির পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। দীর্ঘদিন নদীর সান্নিধ্য কাটানাের কারণে নদীর প্রতিটি পরিবর্তনের তাৎপর্য তার জানা ছিল। নদী বর্ষার জলে তার রূপ পরিবর্তন করলে সে প্রথম অবাক হলেও পরবর্তীকালে এক সিদ্ধান্তে উপনীত হন। প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানে উন্নত মানুষ নিজের শক্তির পরিচয় দিতে গিয়ে প্রকৃতির বুকে সৃষ্টি করেছে তার নিজের কৃতিত্ব। নদীকে বাগে আনতে তার বুকে বাঁধ দিয়েছে, সেতু তৈরি করেছে। এ অন্যায়ের প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে। নদীর গর্জনে। কারণ সে সেতু ও বাঁধ ভেঙে ফেলতে চায়। প্রকৃতির এ আচরণ নদের চাঁদ উপলদ্ধি করেছে।
নদীর বিদ্রোহ অতিরিক্ত রচনাধর্মী প্রশ্ন
প্রশ্নঃ “নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে।”- কে বুঝতে পেরেছে? নদীর বিদ্রোহ বলতে সে কী বােঝাতে চেয়েছে? ১+২ [মাধ্যমিক ২০১৭]
প্রশ্নঃ “নিজের এই পাগলামিতে যেন আনন্দই উপভােগ করে।”- কার কথা বলা হয়েছে? তার ‘পাগলামিটি’ কী ? ১+২ [মাধ্যমিক ২০১৯]
প্রশ্নঃ “এমন ভাবে পাগল হওয়া কি তার সাজে?”- কার কথা বলা হয়েছে? একথা বলার কারণ কী? ১+২
প্রশ্নঃ “দুরারােগ্য ব্যাধিতে ভুগিতে ভুগিতে পরমাত্মীয়া মরিয়া যাওয়ার উপক্রম করিলে মানুষ যেমন কাঁদে।” – কী দেখে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি এমনভাবে কেঁদেছিল? এ থেকে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে কোন ধারণা পাওয়া যায়? ১+২
প্রশ্নঃ “নদেরচাঁদের ভারী আমােদ বােধ হইতে লাগিল।” – নদেরচাঁদ কে? তার আমােদের কারণ কী? ১+২
প্রশ্নঃ “মানুষ কি তাকে রেহাই দিবে?”- কার কথা বলা হয়েছে? কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি? ১+২
প্রশ্নঃ “আজ তার মনে হইল কী প্রয়ােজন ছিল ব্রিজের?”– কার মনে হয়েছিল? বক্তার এরূপ মনে হওয়ার কারণ কী? ১+২
প্রশ্নঃ “নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে।” – সে কে? নদীর বিদ্রোহের কারণ কী? ১+২
প্রশ্নঃ ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্প অবলম্বনে নদীর প্রতি নদেরচাঁদের অকৃত্রিম ভালবাসার পরিচয় দাও। [মাধ্যমিক ২০১৯]
প্রশ্নঃ “ত্রিশ বছর বয়সে নদীর জন্য … এত বেশি মায়া একটু অস্বাভাবিক।” নদীর জন্য কার মায়া? তা অস্বাভাবিক কেন? এই অস্বাভাবিকতার পরিণতি কী হয়েছিল? ১+২+২
প্রশ্নঃ ‘নদীর বিদ্রোহ’ – গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করাে।
Google News এ আমাদের ফলো করুন
ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুক, WhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।
Please do not share any spam link in the comment box