নিখিল সরকারের হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রশ্ন ও উত্তর: প্রতিবছর মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন (Hariye Jaoa Kali Kolom by Nikhil Sarkar Questions and Answers Madhyamik Bengali Suggestion) থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মাধ্যমিক বাংলা সিলেবাসের নিখিল সরকারের "হারিয়ে যাওয়া কালি কলম" র সমস্ত প্রশ্নোত্তর।
এখানে মাধ্যমিক বাংলা ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর যেমন বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল। যে গুলি পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন। নিচে Hariye Jaoa Kali Kolom by Nikhil Sarkar Questions and Answers ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধের MCQ, SAQ প্রশ্ন উত্তর গুলি যত্ন সহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
মাধ্যমিকের বাংলা নিখিল সরকারের হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রশ্ন ও উত্তর - Hariye Jaoa Kali Kolom by Nikhil Sarkar Questions and Answers
হারিয়ে যাওয়া কালি কলম - নিখিল সরকার
‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধটি প্রখ্যাত সাহিত্যিক নিখিল সরকারের ‘কালি আছে কলম নেই, কাগজ আছে মন নেই’ গ্রন্থ থেকে গৃহিত হয়েছে। আলোচ্য পোস্টে নিখিল সরকারের ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধের গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।
হারিয়ে যাওয়া কালি কলম MCQ প্রশ্নোত্তর - হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের MCQ প্রশ্নোত্তর (বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর) - Hariye Jaoa Kali Kolom MCQ Questions and Answers
1. ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ রচনাটি যে গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে, সেটি হল—
(A) যখন ছাপাখানা এলো
(B) কালি আছে কাগজ নেই, কলম আছে মন নেই
(C) আজব নগরী
(D) বটতলা
উত্তরঃ (B) কালি আছে কাগজ নেই, কলম আছে মন নেই
2. যে লেখকের ছদ্মনাম ‘গ্রীপান্থ’, তিনি হলেন—
(A) শরৎচন্দ্র
(B) নিখিল সরকার
(C) পূর্ণেন্দু পত্রী
(D) মুজতবা আলী
উত্তরঃ (B) নিখিল সরকার
3. নিখিল সরকার ওরফে ‘শ্রীপান্থ’-র জন্ম হয়—
(A) 1930 সালে
(B) 1931 সালে
(C) 1932 সালে
(D) 1933 সালে
উত্তরঃ (C) 1932 সালে
4. নিখিল সরকার রচিত একটি গ্রন্থ হল—
(A) মেটিয়াবুরুজের নবাব
(B) কঙ্কাবতী
(C) আমরা বাঙালি
(D) রামায়ণ
উত্তরঃ (A) মেটিয়াবুরুজের নবাব
5. কথায় আছে, কালি কলম মন, লেখে ______ জন?
(A) এক
(B) দুই
(C) তিন
(D) চার
উত্তরঃ (C) তিন
6. লেখক যেখানে কাজ করেন, সেটা হল—
(A) ছাপাখানা
(B) পুথি লেখার কারখানা
(C) লেখালেখির অফিস
(D) গল্প লেখার আসর
উত্তরঃ (C) লেখালেখির অফিস
7. লেখক যেখানে কাজ করেন সেখানে সবাই —
(A) লেখক
(B) পুলিশ
(C) আড্ডাবাজ
(D) চাকর
উত্তরঃ (A) লেখক
8. লেখক তাঁর অফিসে কোন জিনিসের কথা বলেছেন যা শুধু তাঁরই আছে?
(A) একটি অভিধান
(B) একটি কম্পিউটার
(C) কলম
(D) বই
উত্তরঃ (C) কলম
9. লেখকের হাতে কলম এবং বাকিদের সামনে কী?
(A) টাইপরাইটার
(B) কম্পিউটার
(C) প্রচুর বই
(D) দোয়াত ও পেন
উত্তরঃ (B) কম্পিউটার
10. ‘আমি যা লিখি ওঁরা ভালোবেসে আমার লেখাকেও এভাবে ছাপার জন্য তৈরি করে দেন।’ ‘ওঁরা’ বলতে লেখকের –
(A) বন্ধুরা
(B) শিক্ষক-শিক্ষিকারা
(C) সহপাঠীরা
(D) সহকর্মীরা
উত্তরঃ (D) সহকর্মীরা
11. লেখক একদিন কলম নিয়ে যেতে ভুলে গেলেই বিপদ কেন?
(A) কারও কলমে কালি নেই
(B) কারও সঙ্গে কলম নেই
(C) সবার সঙ্গে কথা বন্ধ
(D) কলম চাওয়া নিষেধ
উত্তরঃ (B) কারও সঙ্গে কলম নেই
12. তবে তাকে লিখে আমার সুখ নেই’- কেন? –
(A) গলা শুকনো ভোতামুখের কলম
(B) অনেক দামি পেন
(C) পেন দিয়ে কালি ঝরে না
(D) ভালো মনে কেউ দেয় না
উত্তরঃ (A) গলা শুকনো ভোতামুখের কলম
13. লেখকের কাছে তাঁর অফিস তাঁর –
(A) জন্মস্থান
(B) কারখানা
(C) মৃত্যুস্থান
(D) রান্নাঘর
উত্তরঃ (B) কারখানা
14. বাংলায় প্রচলিত কথা কালি নেই, কলম নেই বলে আমি ______।
(A) কবি
(B) লেখক
(C) মুনশি
(D) কলমবিদ
উত্তরঃ (C) মুনশি
15. ‘কালগুণে বুঝিবা আজ আমরাও তা-ই।’ আমরাও কী? –
(A) লেখক
(B) মুনশি
(C) কবি
(D) পণ্ডিত
উত্তরঃ (B) মুনশি
16. হারিয়ে যাওয়া কালি কলম রচনায় লেখকের বয়স কত বলে ধারণা হয়েছে? –
(A) 40-50 বছর
(B) 50-60 বছর
(C) 60-70 বছর
(D) 70-80 বছর
উত্তরঃ (B) 50- 60 বছর
17. লেখক ছেলেবেলায় কলম তৈরি করতেন। –
(A) কাশফুলের খড় দিয়ে
(B) রোগা বাঁশের কঞ্চি কেটে
(C) পেয়ারা ডাল কেটে
(D) শ্যাওড়া ডাল কেটে
উত্তরঃ (B) রোগা বাঁশের কঞ্চি কেটে
18. কলম তৈরির সময় বড়োরা শিখিয়েছিলেন—
(A) কলমের মুখটা চিরে দেওয়া চাই
(B) কলমের মাথাটা ভোতা হতে হবে
(C) কলমের মাথার দুটো অংশ থাকবে
(D) কলমের মুখ চেরা চলবে না
উত্তরঃ (A) কলমের মুখটা চিরে দেওয়া চাই
19. লেখার পাতা বলতে শৈশবে লেখকদের কী ছিল? –
(A) কলাপাতা
(B) লাউপাতা
(C) তালপাতা
(D) শালপাতা
উত্তরঃ (A) কলাপাতা
20. ‘আমরা তাতে হোমটাস্ক করতাম।’ ‘তাতে’ বলতে? –
(A) বড়ো খাতায়
(B) ব্ল্যাকবোর্ডে
(C) কলাপাতায়
(D) লাউপাতায়
উত্তরঃ (C) কলাপাতায়
21. কলাপাতায় হোমটাস্ক করে লেখক কোথায় নিয়ে যেতেন?
(A) অফিসে
(B) স্কুলে
(C) গুরুমশায়ের কাছে
(D) বাবার কাছে
উত্তরঃ (B) স্কুলে
22. হোমটাস্ক করা কলাপাতাগুলি মাস্টারমশাইকে দেখানোর পর লেখকরা কী করতেন?
(A) বাড়িতে রেখে দিতেন
(B) বাবা-মাকে দেখাতেন
(C) স্কুলে রেখে আসতেন
(D) পুকুরে ফেলে দিতেন
উত্তরঃ (D) পুকুরে ফেলে দিতেন
23. বাইরে না ফেলে লেখক কেন হোমটাস্কের কলাপাতাগুলি পুকুরেই ফেলতেন, কারণ বাইরে ফেললে,
(A) গোরু খেলে অমঙ্গল
(B) রাস্তার লোকে পা দিলে পাপ
(C) বাইরের লোকে দেখে ফেলবে
(D) সরস্বতী খুশি হবেন
উত্তরঃ (A) গোরু খেলে অমঙ্গল
24. অক্ষরজ্ঞানহীনকে লোকে বলে,
(A) ওর কাছে সব অন্ধকার
(B) ওর কাছে ক’অক্ষর গোমাংস
(C) ও একটা গোরু
(D) ও একটা বোকা গাধা
উত্তরঃ (B) ওর কাছে ক’অক্ষর গোমাংস
25. ‘ছিড়ে পত্র না ছাড়ে মসি’—এখানে ‘মসি’ শব্দের অর্থ—
(A) লোহা
(B) ধুলো
(C) কালি
(D) পেন
উত্তরঃ (C) কালি
26. কালি তৈরি করতে লাগে—
(A) আলু
(B) ত্রিফলা চুন
(D) মিছরি
উত্তরঃ (B) ত্রিফলা
27. লেখক যখন ছোটো তখন তাদের বাড়িতে রান্না হত-
(A) গোবর গ্যাসে
(B) কাঠের উনুনে
(C) স্টোভে
(D) গ্যাস ওভেনে
উত্তরঃ (B) কাঠের উনুনে
28. কড়াইয়ের তলায় কালি জমার কথা বলা হয়েছে। কারণ—
(A) গোবর গ্যাসে রান্না হত
(B) কাঠের উনুনে রান্না হত
(C) স্টোভে রান্না হত
(D) মাটি লেপে দেওয়া হত
উত্তরঃ (B) কাঠের উনুনে রান্না হত
29. কড়াইয়ের তলায় জমা কালি কী দিয়ে ঘষে তোলা হত?
(A) কলাপাতা
(B) লাউ পাতা
(C) শালপাতা
(D) পেয়ারাপাতা
উত্তরঃ (B) লাউ পাতা
30. লেখকের ছোটোবেলায় লেখালেখির প্রথম সঙ্গী হিসেবে ছিল –
(A) বাঁশের কলম
(B) মাটির দোয়াত
(C) ঘরে তৈরি কালি
(D) সবগুলি
উত্তরঃ (D) সবগুলি
31. পঞ্চাশ-ষাট বছর বয়সে লেখকের কষ্ট হয়েছে কী নিয়ে?
(A) কলম হাতছাড়া হতে চলেছে
(B) দোয়াত কালি নেই
(C) ফাউন্টেন পেনের দাম বেড়েছে
(D) বাঁশ গাছ কমে গেছে
উত্তরঃ (A) কলম হাতছাড়া হতে চলেছে
32. নীল নদীর তীর থেকে লেখক কী নিয়ে আসতেন?
(A) নল-খাগড়া
(B) স্টাইলাস
(C) জ্ঞানাঞ্জন শলাকা
(D) ব্রোঞ্জের শলাকা
উত্তরঃ (A) নল-খাগড়া
33. লেখক কী হলে বনপ্রান্ত থেকে কুড়িয়ে নিতেন একটা হার?
(A) মিশরীয়
(B) ফিনিসীয়
(C) ভারতীয়
(D) ইরানীয়
উত্তরঃ (B) ফিনিসীয়
হারিয়ে যাওয়া কালি কলম অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর - হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের SAQ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর - Hariye Jaoa Kali Kolom SAQ Question Answer
১. ‘সবাই এখানে লেখক। কিন্তু আমি ছাড়া কারও হাতে কলম নেই।’ – এমন উক্তির কারণ কী?
উত্তরঃ কারণ লেখকদের অফিসে লেখালেখির কাজটা হত কম্পিউটারে।
২. ‘বাংলায় একটা কথা চালু ছিল’ – কথাটি কী?
উত্তরঃ কথাটি হল, ‘কালি নেই, কলম নেই, বলে আমি মুনশি।’
৩. ‘বড়ােরা শিখিয়ে দিয়েছিলেন’- কী শিখিয়েছিলেন?
উত্তরঃ বড়রা শিখিয়েছিলেন যে, কলম শুধু সুঁচলো হলে চলবে না, কালি যাতে একসঙ্গে গড়িয়ে না পড়ে তার জন্য মুখটা চিরে দেওয়া প্রয়োজন।
৪. ‘পুকুরে তা ফেলে দিয়ে আসতাম।’ – কেন তা পুকুরে ফেলা হত?
উত্তরঃ ছোটোবেলায় লেখক বাড়ি ফেরার পথে হোমটাস্কের কলাপাতা পুকুরে ফেলে দিয়ে আসতেন। কারণ, গোরুতে তা খেয়ে নিলে অমঙ্গল হবে।
৫. ‘প্রাচীনেরা বলতেন’ – কী বলতেন?
উত্তরঃ প্রাচীনেরা বলতেন- “তিল ত্রিফলা সিমুল ছালা/ ছাগদুগ্ধে করি মেলা/ লৌহপাত্রে লোহায় ঘসি/ ছিঁড়ে পত্র না ছাড়ে মসি।”
৬. ‘তাই নিয়ে আমাদের প্রথম লেখালেখি,’ – কী নিয়ে প্রথম লেখালেখি?
উত্তরঃ বাঁশের কলম, মাটির দোয়াত, ঘরে তৈরি কালি আর কলাপাতা নিয়ে লেখকদের প্রথম লেখালেখি।
৭. ‘আমি যদি বাঙালি না হয়ে হতাম প্রাচীন সুমেরিয়ান বা ফিনিসিয়ান’- তাহলে তিনি কী করতেন?
উত্তরঃ লেখক যদি বাঙালি না হয়ে প্রাচীন সুমেরিয়ান বা ফিনিসিয়ান হতেন, তবে হয়তো তিনি নীল নদের তীর থেকে একটা নল-খাগড়া ভেঙে নিয়ে এসে সেটিকে ভোঁতা করে তুলি বানিয়ে লিখতেন।
৮. লেখক স্বয়ং জুলিয়াস সিজার হলে কী করতেন?
উত্তরঃ লেখক স্বয়ং জুলিয়াস সিজার হলে লেখনি হিসাবে ব্যবহার করতেন একটি ব্রোঞ্জের শলাকা, যার পোশাকি নাম স্টাইলাস।
৯. লর্ড কার্জন বাঙালি সাংবাদিকদের ইংরেজি লেখা দেখে কী বলতেন?
উত্তরঃ লর্ড কার্জন বাঙালি সাংবাদিকদের ইংরেজি লেখা দেখে বলতেন ‘বাবু কুইল ড্রাইভারস’।
১০. ‘একজন বিদেশি সাংবাদিক লিখেছিলেন’ – কী লিখেছিলেন?
উত্তরঃ বিদেশি সাংবাদিক লিখেছিলেন যে কলকাতার চৌরঙ্গীর পথে গিজগিজ করছে ফেরিওয়ালা যাদের এক-তৃতীয়াংশের পেশা কলম বিক্রি।
১১. ‘কলম তাদের কাছে আজ অস্পৃশ্য।’ – কাদের কাছে?
উত্তরঃ পকেটমারদের কাছে কলম আজ অস্পৃশ্য।
১২. ‘আবার তিনি ছুটলেন কালির সন্ধানে’- কেন?
উত্তরঃ তিনি অর্থাৎ লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান কালির সন্ধানে ছুটলেন কারণ তার চুক্তিপত্র লেখা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই তার কালির দোয়াত উপুড় হয়ে গিয়ে সব কালি পড়ে গিয়েছিল।
১৩. আদিতে ফাউন্টেন পেনের কী নাম ছিল?
উত্তরঃ আদিতে ফাউন্টেন পেনের নাম ছিল রিজার্ভার পেন।
১৪. কলমকে দামি ও পােক্ত করার জন্য কী করা হত?
উত্তরঃ কলমকে দামি ও পোক্ত করার জন্য প্লাটিনাম, সোনা ইত্যাদি দিয়ে মুড়ে দেওয়া হতো।
১৫. ‘সব মিলিয়ে লেখালেখি রীতিমত ছােটোখাটো একটা অনুষ্ঠান।’ – এমন মন্তব্যের কারণ কী?
উত্তরঃ আগেকার দিনে লেখার জন্য অনেকগুলি উপকরণ সঙ্গে নিয়ে বসতে হত। লেখার পত্র, কলম, দোয়াতভর্তি কালি এবং লেখা শুকানোর বালি বা ব্লটিং পেপার। এজন্য এমন মন্তব্য করা হয়েছে।
১৬. বিভিন্ন রকম দোয়াতের নাম উল্লেখ করাে।
উত্তরঃ বিভিন্ন রকম দোয়াতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- কাচের, পোর্সেলিনের, শ্বেতপাথরের, পিতলের, ব্রোঞ্জের, ভেড়ার সিংয়ের, সোনার দোয়াত ইত্যাদি।
১৭. গ্রামে দু’একটা পাশ দিতে পারলে বুড়াে-বুড়িরা কী বলে আশীর্বাদ করতেন?
উত্তরঃ গ্রামে দু’একটা পাশ দিতে পারলে বুড়াে-বুড়িরা এই বলে আশীর্বাদ করতেন- ‘বেঁচে থাকো বাবা, তোমার সোনার দোয়াত কলম হোক’।
১৮. ‘সমানি সম শীর্ষাণি ঘনানি বিরলানি চ’- অর্থ লেখাে।
উত্তরঃ এর অর্থ হল- সব অক্ষর সমান, প্রতিটি ছত্র সুশৃঙ্খল পরিচ্ছন্ন।
১৯. অষ্টাদশ শতকে চারখণ্ড রামায়ণ কপি করে একজন লেখক কী কী পেতেন?
উত্তরঃ নগদ সাত টাকা, কিছু কাপড় আর মিঠাই।
২০. টাইপ-রাইটারে লিখেছেন এমন দু’জন লেখকের নাম উল্লেখ করাে।
উত্তরঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায় এবং অন্নদাশঙ্কর রায়।
২১. মনে মনে ফরাসি কবির মতাে লেখক কী বলেছিলেন?
উত্তরঃ মনে মনে ফরাসি কবির মতাে লেখক বলেছিলেন, “তুমি সবল, আমি দুর্বল। তুমি সাহসী, আমি ভীরু। তবু যদি আমাকে হত্যা করতে চাও, আচ্ছা, তবে তাই হোক। ধরে নাও আমি মৃত।”
২২. নিবের কলম কীভাবে ঘাতকের ভূমিকা নিয়েছিল?
উত্তরঃ স্বনামধন্য বাঙালি লেখক ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের কলম অসাবধানতাবশত বুকে ফুটে গিয়েছিল এবং সেই আঘাতের ফলেই নাকি তাঁর মৃত্যু হয়েছিল।
২৩. ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’-এ বর্ণিত সবচেয়ে দামি কলমটির দাম কত?
উত্তরঃ ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’-এ বর্ণিত সবচেয়ে দামি কলমটির দাম আড়াই হাজার পাউন্ড।
২৪. ‘’হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে উল্লেখিত যেকোনো দুটি প্রবাদ লেখো।
উত্তরঃ ‘কালি নেই, কলম নেই, বলে আমি মুনশি’ এবং ‘কলমে কায়স্থ চিনি, গোঁফেতে রাজপুত’।
২৫. ‘ছেলেবেলায় একজন দারোগাবাবুকে দেখেছিলাম’- সেই দারোগাবাবুর বিশেষত্ব কী ছিল?
উত্তরঃ সেই দারোগাবাবুর কলম ছিল পায়ের মোজায় গোঁজা।
২৬. দার্শনিক কোথায় কলম গুঁজে রাখেন?
উত্তরঃ দার্শনিক কানে কলম গুঁজে রাখেন।
২৭. পালকের কলমের ইংরেজি নাম কী?
উত্তরঃ পালকের কলমের ইংরেজি নাম কুইল।
২৮. কোন সাহিত্যিক শেষ পর্যন্ত নিবের কলমের মর্যাদা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন?
উত্তরঃ সত্যজিৎ রায় শেষ পর্যন্ত নিবের কলমের মর্যাদা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।
২৯. ফাউন্টেন পেনের কোন অনুষঙ্গের নামে যুদ্ধের গন্ধ পাওয়া যায়?
উত্তরঃ ব্যারেল, কার্টিজ ইত্যাদি শব্দে।
৩০. উনিশ শতকে বারো আনায় কত অক্ষর লেখানো যেত?
উত্তরঃ উনিশ শতকে বারো আনায় বত্রিশ হাজার অক্ষর লেখানো যেত।
হারিয়ে যাওয়া কালি কলম রচনাধর্মী প্রশ্ন - হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Hariye Jaoa Kali Kolom Descriptive Questions and Answers
প্রশ্নঃ “আমার মনে পড়ে প্রথম ফাউন্টেন কেনার কথা”- বক্তার আসল নাম কী ? তাঁর ফাউন্টেন কেনার ঘটনাটি সংক্ষেপে বিবৃত করাে। ১+৪ [মাধ্যমিক ২০২০]
উত্তরঃ ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধের রচনাকার শ্রীপান্থ একথা বলেছেন। তাঁর আসল নাম নিখিল সরকার।
আলোচ্য প্রবন্ধে শ্রীপান্থ তাঁর প্রথম ফাউন্টেন পেন কেনার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েক বছর পরের ঘটনা। লেখক কলেজ স্ট্রিটের একটা নামী দোকানে গিয়েছিলেন একটা ফাউন্টেন পেন কেনার জন্য। কিন্তু দোকানকার যখন লেখকের কাছে কলমের নাম জানতে চায়, তখন তিনি রীতিমতো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান। দোকানদার নিজে থেকেই তখন ‘পার্কার’, ‘শেফার্ড’, ‘ওয়াটারম্যান’, ‘সোয়ান’ ইত্যাদি কলমের নাম এবং দাম মুখস্ত বলে যায়। কিন্তু লেখকের পকেটের অবস্থা আন্দাজ করে দোকানদার লেখককে ‘শস্তার একটা পাইলট’ পেন কেনার পরামর্শ দেয়।
এরপর দোকানদার, সার্কাসে খেলা দেখানোর ভঙ্গিতে, কলমের খাপটা সরিয়ে ধাঁ করে ছুড়ে দেন কাঠবোর্ডের উপর এবং লেখককে অবাক করিয়ে সে দেখায় যে কলমটি সম্পূর্ণ অক্ষত ছিল। লেখক সেদিন খুশিমনে সেই জাপানি পাইলট নিয়ে বাড়ি ফেরেন এবং বহুদিন পর্যন্ত তিনি সেটিকে সযত্নে রক্ষা করেছিলেন।
প্রশ্নঃ “আমরা কালিও তৈরি করতাম নিজেরাই।”- কারা কালি তৈরি করতেন? তারা কীভাবে কালি তৈরি করতেন ? ১+৪ [মাধ্যমিক ২০১৯]
উত্তরঃ প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে তাদের শৈশবকালের কিছু টুকরো স্মৃতি পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে ‘আমরা’ বলতে প্রাবন্ধিক এবং তার সমবয়সী ছেলেদের কথা বলা হয়েছে।
ছোটবেলায় লেখক এবং তাঁরা সমবয়সী ছেলেরা নিজেরাই তাদের লেখার কালি তৈরি করতেন। আলোচ্য প্রবন্ধে কালি তৈরি সম্পর্কে একটি ছড়ারও উল্লেখ রয়েছে- “তিল ত্রিফলা শিমুল ছালা/ ছাগ দুগ্ধে করি মেলা/ লৌহপাত্রে লোহায় ঘষি/ ছিঁড়ে পত্র না ছাড়ে মসি।” এই ছিল কালি তৈরি করার আদর্শ পদ্ধতি।
তবে, লেখকদের এত আয়োজন ছিল না। তাঁরা কালি তৈরি করতেন সহজ পদ্ধতিতে। কাঠের উনুনে রান্নার পর কড়াইয়ের তলায় যে কালি জমা হতো, সেই কালি লাউপাতা দিয়ে ঘষে তুলে পাথরের বাটিতে গুলে দিতেন। যারা একটু ওস্তাদ গোছের, তারা ওই কালো জলে হরিতকী ঘষত, কেউ আবার আতপ চাল ভেজে পুড়িয়ে সেটা বেটে জলে মেশাত। এবার সেই জলে লাল টকটকে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেওয়া হতো এবং জল টগবগ করে ফোটার পর ন্যাকড়ায় ছেঁকে মাটির দোয়াতে ভরা হত।
প্রশ্নঃ “আশ্চর্য, সবই আজ অবলুপ্তির পথে।”- কোন্ জিনিস আজ অবলুপ্তির পথে? এই অবলুপ্তির কারণ কী? এ বিষয়ে লেখকের মতামত কী? ১+১+৩ [মাধ্যমিক ২০১৮]
উত্তরঃ প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ তাঁর ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে কলম এবং লেখালেখির অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিস যেমন, নিব, কালি, দোয়াত ইত্যাদির অবলুপ্তির কথা বলেছেন।
লেখনী-যন্ত্র হিসেবে কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহারই এই অবলুপ্তির কারণ।
কলমের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়াতে লেখক বিপন্ন বোধ করেছেন। আসলে, তিনি সেই প্রজন্মের মানুষ যখন লেখার সরঞ্জামাদি ঘরেই প্রস্তুত করা হত। বাঁশের কঞ্চির কলম এবং বাড়িতে তৈরি করা কালি নিয়েই তাঁর শৈশব কেটেছে। পরে ফাউন্টেন পেন এবং বল পেনের ব্যবহারও তিনি করেছেন। তবে, ব্যক্তিগতভাবে তিনি ছিলেন ‘কালি-খেকো’ কলমের ভক্ত। যাইহোক, কর্মসূত্রেও কলমের সঙ্গে লেখকের বিশেষ যোগ ছিল কারণ তিনি যেখানে কাজ করতেন সেটা ছিল লেখালেখির অফিস। সেই অফিসেও এখন স্বমহিমায় জায়গা করে নিয়েছে কম্পিউটার। লেখক সেই অফিসে বসে যা লেখেন সেসব লেখাও তার সহকর্মীরা সাদরে টাইপ করে দেন। আর এইভাবে কলমের গুরুত্ব কমে যাওয়াতে লেখক মর্মাহত হয়েছেন। মানুষের হাত থেকে যদি কলম ছিনিয়ে নেওয়া হয়, মানুষের হাতের লেখা যদি চিরকালের মতো মুছে দেওয়া হয়, তাহলে তো দুঃখ লাগারই কথা।
প্রশ্নঃ ‘ফাউন্টেন পেন’ বাংলায় কী নামে পরিচিত? নামটি কার দেওয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে? ফাউন্টেন পেনের জন্ম ইতিহাস লেখাে। ১+১+৩ [মাধ্যমিক ২০১৭]
উত্তরঃ বিশিষ্ট প্রবন্ধকার শ্রীপান্থ রচিত ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, ‘ফাউন্টেন পেন’ বাংলায় ‘ঝরনা কলম’ নামে পরিচিত।
প্রবন্ধিকের মতে, এই নামটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া হতে পারে।
‘ফাউন্টেন পেন’-এর পূর্বনাম ছিল ‘রিজার্ভার পেন’। একেই উন্নত করে ‘ফাউন্টেন পেন’-এর রূপদান করা হয়েছিল। ‘ফাউন্টেন পেন’- এর স্রষ্টা ছিলেন লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান নামে জনৈক ব্যবসায়ী। কথিত আছে যে, তিনি একবার অন্য আরেক জন ব্যবসায়ীর সাথে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করতে যান। কিন্তু চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করাকালীন দোয়াতে রাখা কালি কাগজের উপর উল্টে পড়ে যায়। এর ফলে ওয়াটারম্যানকে কালি সংগ্রহের জন্য পুনরায় বাইরে যেতে হয়। কিন্তু তিনি ফিরে এসে শােনেন যে, ইতিমধ্যে অন্য এক তৎপর ব্যবসায়ী চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে চলে গিয়েছেন।
বিমর্ষ ওয়াটারম্যান সেদিনই এর একটা বিহিত করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। দোয়াতে রাখা কালির জন্য ঘটা এই দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেই উদ্দেশ্যে ওয়াটারম্যান রিজার্ভার পেন নিয়ে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং পূর্বোক্ত কলমের উন্নত সংস্করণ ‘ফাউন্টেন পেন’-এর আবিষ্কার করেন। এইভাবে লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যানের হাত ধরে ফাউন্টেন পেন জন্মলাভ করেছিল।
প্রশ্নঃ “মুঘল দরবারে একদিন তাদের কতনা খাতির, কতনা সম্মান।”- আলোচ্য অংশে কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের খাতির ও সম্মানের পরিচয় দাও। ১+৪
উত্তরঃ বিশিষ্ট প্রবন্ধকার নিখিল সরকারের লেখা ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে ক্যালিগ্রাফিস্ট বা লিপিকুশলীদের খাতিরের কথা বলা হয়েছে।
যারা দক্ষ কলমবাজ তাদেরকে বলা হয় ক্যালিগ্রাফিস্ট বা লিপিকুশলী। মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত শিক্ষিত সমাজে লিপিকুশলীদের বিশেষ কদর ছিল। আলোচ্য প্রবন্ধে সংক্ষিপ্ত পরিসরে তাদের খাতির ও সম্মানের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
একসময় মুঘল দরবারে লিপিকুশলীদের অনেক খাতির ও সম্মান ছিল। শুধু মুঘল দরবারে নয়, প্রাবন্ধিকের মতে, বিশ্বের সকল রাজদরবারেই তাদের বিশেষ মর্যাদা ছিল। এমনকি প্রাচীন বাংলাতেও রাজা-জমিদাররা লিপিকুশলীদের ‘গুণী’ বলে সম্মান করতেন এবং তাদের পৃষ্টপোষকতা করতেন। অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারেও লিপিকরদের দিয়ে পুথি নকল করানো হত। তাদের সুন্দর হস্তাক্ষর সম্পর্কে প্রাবন্ধিক বলেছেন, “সমানি সম শীর্ষাণি ঘনানি বিরলানি চ।”
তবে, খ্যাতি থাকলেও লিপিকুশলীদের রোজগার খুব বেশি ছিল না। অষ্টাদশ শতকে চারখন্ড রামায়ণ কপি করে একজন লিপিকর নগদ সাত টাকা, কিছু কাপড় ও মিঠাই পেয়েছিলেন। জনৈক সাহেবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উনিশ শতকে বারো আনা খরচ বত্রিশ হাজার অক্ষর লেখানো যেত।
প্রশ্নঃ ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধ অনুসরণে বিভিন্ন সভ্যতার মানুষের লেখনি সামগ্রীর পরিচয় দাও।
উত্তরঃ নিখিল সরকারের ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে কলমের বিবর্তনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসটি তুলে ধরা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে উঠে এসেছে প্রাচীন বিশ্বের বিভিন্ন সভ্যতার মানুষের বিচিত্র লেখনি সামগ্রীর কথা।
প্রাচীন মিশরীয়রা নলখাগড়া দিয়ে লেখালেখির কাজ করত। তারা নলখাগড়ার মুখটা ভোঁতা করে তুলি বানিয়ে তা দিয়ে লিখত, অথবা সেটিকে সুঁচালো করে কলম তৈরি করত। প্রাচীন ফিনিসিয়রা আবার লেখার জন্য পশুর হাড় ব্যবহার করত। আর, রোমানদের লেখার সামগ্রী ছিল ব্রোঞ্জের শলাকা, যার পোশাকি নাম স্টাইলাস। প্রাবন্ধিক জানিয়েছেন, রোমান সম্রাজ্যের অধীশ্বর স্বয়ং জুলিয়াস সিজারও তাই দিয়ে লিখতেন। তবে চিনারা প্রথম থেকেই তুলি দিয়ে লিখে এসেছে।
এছাড়া লেখনী সামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত হতো পাখির পালক, বাঁশের কঞ্চি অথবা খাগের কলম। ফাউন্টেন পেন আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত মোটামুটি এই ছিল লেখার সামগ্রী।
প্রশ্নঃ ‘কলমকে বলা হয় তলোয়ারের চেয়েও শক্তিধর’ – কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর। ৫
উত্তরঃ বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে কলমের মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে কলমকে ‘তলোয়ারের চেয়েও শক্তিধর’ বলেছেন।
ইংরেজিতে বলা হয়, “Pen is mightier than sword”। আপাতদৃষ্টিতে এই কথাটিকে নেহাতই কথার কথা বলে মনে হতে পারে কিন্তু এই প্রবাদবাক্যটি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। লেখক অবশ্য বলেছেন যে, ফাউন্টেন পেনের অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত ‘ব্যারেল’, ‘কার্টিজ’ শব্দের মধ্যে বারুদের গন্ধ কানে আসে। এমনকি ইতিহাসেও দেখা গেছে যে কোনো পালকের কলমধারী সত্যই তলোয়ারধারী ক্রুর বা মিথ্যাচারী প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করে গেছেন।
তলোয়ারের সাহায্যে অনায়াসে প্রতিপক্ষের মুন্ডপাত করা যায়। অতীতে এমন ঘটনা বহু ঘটেছে। কিন্তু কলমের এক আঁচড়ে পরাক্রমী রাজার সিংহাসনও টলিয়ে দেওয়া যায়, ইতিহাসে এমন নজিরও আছে। তলোয়ার যেমন স্বৈরাচারী শাসকের অস্ত্র তেমনি কলম হল বুদ্ধিজীবীদের হাতিয়ার। তলোয়ারের শাসন একটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে কিন্তু কলমের মাধ্যমে সারা বিশ্বের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে জাগিয়ে তোলা যায় এবং অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা যায়। এইজন্য বলা হয় কলম তলোয়ারের চেয়েও বেশি শক্তিধর।
প্রশ্নঃ “ সব মিলিয়ে লেখালেখি রীতিমতো ছোটোখাটো একটা অনুষ্ঠান। ” লেখালেখি ব্যাপারটিকে ছোটোখাটো অনুষ্ঠান বলা হয়েছে কেন তা বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ মননশীল প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থের লেখা ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ‘ প্রবন্ধে প্রশ্নোধৃত মন্তব্যটির বক্তা হলেন স্বয়ং শ্রীপান্থ।
কালি ও কলমের বিবর্তনের ইতিহাসটিকে আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। শৈশবে ছিল লেখকের নিজের হাতে বাঁশের কঞ্চি কেটে তৈরি করা কলম , তারপর বাজারে এল পালকের কলম , শেষে আসে ফাউন্টেন পেন। কালির ক্ষেত্রে ছিল দোয়াতের কালি , আর এরপর যুগের আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এল কম্পিউটার।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দোয়াত – কলম হয়ে গেল ঘর সাজানো আসবাব। একসময় লেখা শুকানো হতো বালিতে , পরে ব্লটিং পেপারে। সেসব এখন ইতিহাস। তখন কালি তৈরির প্রক্রিয়া ছিল সব মিলিয়ে বিশাল এক আয়োজন। সে একপ্রকার সাধ্যসাধনার বিষয়। সেজন্য লেখক প্রশ্নোধৃত মন্তব্যটি করেছেন।
প্রশ্নঃ “ দোয়াত যে কত রকমের হতে পারে , না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত ” —কত রকমের দোয়াতের কথা বলেছেন বক্তা ?
উত্তরঃ প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ তাঁর ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ‘ প্রবন্ধে দোয়াত ও কলমের এক বিপুল বৈচিত্র্যের সন্ধান দিয়েছেন।
প্রাবন্ধিক কালি ও কলমের তথ্যানুসন্ধান করতে গিয়ে বিস্ময়ের সঙ্গে নানা রকমের দোয়াত দেখেছিলেন। দোয়াতগুলির অবয়ব কাচ , কাট গ্লাস , পোর্সেলিন , শ্বেতপাথর , জেড , পিতল , ব্রোঞ্জ , ভেড়ার শিং দিয়ে নির্মিত ছিল। আবার কখনো কখনো দোয়াত তৈরি হতো মূল্যবান সোনা দিয়ে। প্রাবন্ধিক স্বচক্ষে সোনার দোয়াত দেখেছিলেন সুভো ঠাকুরের দোয়াত সংগ্রহশালায়। প্রাবন্ধিক এইসব দোয়াতের কালি দিয়ে সৃষ্টি রচনাসম্ভার দেখে অভিভূত হয়েছিলেন।
প্রশ্নঃ “ সবাই এখানে লেখক। কিন্তু আমি ছাড়া কারও হাতে কলম নেই। ” “ এখানে ’ বলতে কোথাকার কথা বলা হয়েছে ? লেখক হওয়া সত্ত্বেও হাতে কলম নেই। কেন ?
উত্তরঃ ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ‘ প্রবন্ধে উল্লিখিত অংশে ‘ এখানে ’ বলতে যে সংবাদপত্রের অফিসে লেখক কাজ করতেন সেখানকার কথা বলা হয়েছে। সংবাদপত্রের অফিস আসলে ‘ লেখালেখির ’ অফিস। সবাই সেখানে লেখালেখির কাজই করে থাকেন। ইদানীং লেখালেখির অফিসে কালি – কলমের পরিবর্তে কম্পিউটারের প্রচলন হয়েছে। লেখার জন্য কেউ আর কলমের উপর ভরসা করে না বরং নির্ভর করে কম্পিউটারের কি – বোর্ড আর মনিটরের পর্দার ওপর। অথচ শ্রীপান্থ সেসবে দক্ষ নন , তাই তিনি কলমের ওপরেই ভরসা করে থাকেন। কিন্তু লেখকের সহকর্মীরা অনবরত কি – বোর্ডের সাহায্যেই লিখে চলেছেন। তাই লেখক প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন।
প্রশ্নঃ ” কলম তাদের কাছে আজ অস্পৃশ্য। ” প্রাবন্ধিকের কাদের প্রতি এই উক্তি ? কলম সম্পর্কে তিনি কেন এমন মন্তব্য করেছেন ?
উত্তরঃ প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ‘ প্রবন্ধে বলেছেন , কলম একসময় অতিমূল্যবান বস্তু ছিল এবং সহজে পাওয়া যেত না। কিন্তু এখন কলম বস্তুটি এতই সস্তার হয়েছে যে পথের ফেরিওয়ালা থেকে শুরু করে পকেটমারের হাতেও কলম দেখা যায়। প্রাবন্ধিকের মতে এসব মানুষের কাছেও কলম আজ অস্পৃশ্য।
প্রাবন্ধিক আলোচ্য প্রবন্ধটিতে কলমের দুনিয়ায় অভাবনীয় পরিবর্তনের কথা বলেছেন। প্রাবন্ধিকরা শৈশবে নিজেরাই বাঁশের কঞ্চির কলম তৈরি করতেন। তাঁদের শৈশবে | ফাউন্টেন পেন বা বলপেন ছিল না। ক্রমে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন ঘটে। বাজারে ফাউন্টেন বলপেন ছাড়াও বিভিন্ন পেন এল , যেগুলি কঞ্চির কলমের জায়গা দখল করে নিল। অতীতে যে পালকের কলম এবং দোয়াত , কলমের ব্যবহার ছিল আজ সেগুলি ঘর – সাজানোর উপকরণে পরিণত হয়েছে। যে কলম একদিন হাতের নাগালের বাইরে ছিল , সেই কলম নিয়ে রাস্তার ফেরিওয়ালারাও ব্যাবসা শুরু করল। পণ্ডিতমশাইদের কাছে কলম হয়ে উঠল কানে গুঁজে রাখার বস্তু। প্রাবন্ধিক বলেছেন , এখনকার অতি আধুনিক ছেলেরা কলম বুকপকেটে রাখে না , কঁাধের ছোটো পকেটে সাজিয়ে রাখে। এমনকী মহিলাদের ভিড় ট্রামে – বাসে যাতায়াতের সময় খোপায় কলম গুঁজে রাখতে দেখা যায়। এসব কথার নিরিখে খুব সহজেই বলা যায় — কলম এখন সর্বজনীন হয়ে গেছে। কলম অতিসস্তা এবং সর্বভোগ্য হওয়ার কারণে কলম নিয়ে পকেটমাররাও হাতসাফাইয়ের খেলা খেলে না। কলম আজ এদের কাছেও অস্পৃশ্য হয়ে গেছে।
প্রশ্নঃ “ কলমকে বলা হয় তলোয়ারের চেয়ে শক্তিধর ” – প্রবন্ধ অনুসারে মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ‘ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ অনেকটা ঠাট্টার ছলে কথাটি বলেছেন। এই কথাটি প্রথমে সাহিত্যে ব্যবহার করেছিলেন ইংরেজ নাট্যকার এডওয়ার্ড বুলওয়ার লিটন তার ‘ Richelieu or The Conspiracy ‘ নাটকে। ফাউন্টেন পেনের অংশগুলি কিন্তু তারই ইঙ্গিতবাহী। কারণ ফাউন্টেন পেনের অংশ হলো কর্টেজ ব্যারেল। এগুলির সঙ্গে কিন্তু গোলাবারুদ ইত্যাদির একটা সম্পর্ক আছে। একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে — ‘ অসির চেয়ে মসি বড়ো ‘। ইতিহাস যেমন বলে গোলাবারুদ , বন্দুকের নলের জোরে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করা যায় , তেমনি কোনো মিথ্যাচার , স্বৈরাচার , সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একমাত্র অস্ত্র হলো লেখকের হাতের লেখনী। অস্ত্র যেমন আঘাত হানে দেহে , তেমনি কলম চেতনায় আঘাত নিয়ে আসে।
প্রশ্নঃ কালি – কলমের প্রতি ভালোবাসা হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ‘ প্রবন্ধে কীভাবে ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো। অথবা , “ কম্পিউটার তাদের জাদুঘরে পাঠাবে বলে যেন প্রতিজ্ঞা করেছে। ” ‘ তাদের ’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ? তাদের ঐতিহ্যের প্রতি লেখক শ্রদ্ধাশীল কেন ?
উত্তরঃ শ্রীপান্থের লেখা ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ‘ প্রবন্ধ থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত। তাদের বলতে এখানে আগেকার নানা ধরনের কলম , কালি ও দোয়াত সহ ফাউন্টেন পেন এবং বলপেনের কথা বলা হয়েছে।
লেখক শ্রীপান্থের কালি , কলমের শখ থাকায় ছোটোবেলায় নানা ধরনের কলম তিনি ব্যবহার করতেন। তারপর সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাজারে আসতে থাকে নানা ধরনের ফাউন্টেন পেন। কিন্তু পুরাতন দিনের সেই কালি , কলম এবং দোয়াত এখন সে অবলুপ্তির পথে। তার জায়গা দখল করে নিয়েছে কম্পিউটার। লেখকের মতে , এই পদ্ধতি তো যান্ত্রিক। বোতামে চাপ দিয়ে অক্ষর বিন্যাসে মনের যোগ খুব কম থাকে। হাতের লেখার একটা আলাদা গৌরব আছে। এটা কম্পিউটার কখনোই হ্রাস করতে পারে না। এইভাবে লেখক কলমে প্রতি তার দুর্বলতা ও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
প্রশ্নঃ “ কালি নেই কলম নেই বলে আমি মুনশি ” – কথাটির সাধারণ অর্থ কী ? বক্তা কেন একথা বলেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো ?
উত্তরঃ শ্রীপান্থ রচিত ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ‘ প্রবন্ধে এই কথাটির সাধারণ অর্থ হলো — যিনি কলম পেষেন বা কেরানি তাদের কাছে কালি – কলম না থাকাটা হাস্যকর ব্যাপার বলে মনে হয়।
বক্তা লেখক নিজেই একটা সংবাদপত্রের অফিসে চাকরি করেন। সেখানে তাঁর লেখালেখিই একমাত্র কাজ কিন্তু কোনো কারণে কলম নিয়ে যেতে ভুলে গেলে লেখক কলম চাইতে গেলে সেখানে কলম পান না। এখানে লেখালেখির কাজ চলে কম্পিউটারের কী বোর্ডের সাহায্যে। লেখক কারোর কাছে কলম পেলেও কলম ভোঁতা , শুকনো তা দিয়েই কোনোক্রমে কাজ চালাতে হয় , তা দিয়ে লেখা গেলেও কলম পেষণ যাদের পেশা তাদের কাছে কলমের এরকম ব্যবহার দেখে লেখক এমন মন্তব্যটি করেছেন।
Google News এ আমাদের ফলো করুন
ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুক, WhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।
Please do not share any spam link in the comment box