দশম শ্রেনীর অসুখী একজন কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF: প্রতিবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় Asukhi Ekjon Descriptive Questions and Answers PDF থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি দশম শ্রেনীর অসুখী একজন রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF. নিচে দশম শ্রেনীর অসুখী একজন কবিতার প্রশ্ন উত্তর PDF টি যত্নসহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন। অসুখী একজন কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন।
অসুখী একজন - পাবলো নেরুদা
‘অসুখী একজন’ কবিতাটি আসলে পাবলো নেরুদার লেখা স্প্যানিশ কাব্যগ্রন্থ ‘Estravagario’-এর La Desdichada শীর্ষক কবিতাটি যেটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন নবারুণ ভট্টাচার্য। মূল কাব্যগ্রন্থের নাম ‘বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে’। আলোচ্য পোস্টে পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতার গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।
অসুখী একজন কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Asukhi Ekjon Descriptive Questions and Answers
১) “যেখানে ছিল শহর/ সেখানে ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা।”- ‘অসুখী একজন’ কবিতা অবলম্বনে শহরের এই পরিণতি কীভাবে হল লেখাে। [মাধ্যমিক ২০১৭]
অথবা, ” তারপর যুদ্ধ এলো”- যুদ্ধ আসার আগের প্রেক্ষাপট এবং যুদ্ধের পরবর্তী অবস্থা কবিতা অনুসারে লেখো।
উত্তরঃ পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত একটি অসাধারণ কবিতা। যুদ্ধকে বলা হয় মানবতার শত্রু। আলোচ্য কবিতাতে সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয়েছে। যুদ্ধের নির্মম আঘাতে একটি প্রাণবন্ত শহর কীভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল, কবি সেই কথাই তুলে ধরেছেন।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে শহরের অবস্থা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিল। এক জায়গায় উল্লেখ আছে- “একটা কুকুর চলে গেল, হেঁটে গেল গির্জার এক নান”। আরেক জায়গায় বলা হয়েছে- “ঘাস জন্মাল রাস্তায়”। এইসব দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে শহরে শান্তিপূর্ণ নীরবতা বজায় ছিল। কিন্তু যুদ্ধের পরে চেনা শহরের ছবিটা পাল্টে গিয়েছিল।
কবি যুদ্ধটাকে রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে যেমন মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু পুড়ে ছারখার হয়ে যায়, তেমনি যুদ্ধের ফলে সমস্ত সমতলে আগুন ধরে গেল, বহু নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাল, এমনকি দেবতারাও টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ল মন্দির থেকে। আর, কথকের সেই মিষ্টি বাড়ি এবং তার প্রিয় জিনিসগুলি সব চূর্ণ হয়ে গেল। শহর জুড়ে ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা এবং পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শহরের বুকে দগদগে ক্ষতের মতো ‘রক্তের একটা কালো দাগ’ এঁকে দিয়ে গেল।
২) ‘অসুখী একজন’ কবিতার নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো।
উত্তরঃ চিলিয়ান কবি পাবলো নেরুদার লেখা একটি অনবদ্য কবিতা হল ‘অসুখী একজন’। স্প্যানিশ ভাষায় লিখিত কবিতাটির নাম ‘La Desdichada’। ইংরেজি অনুবাদে কবিতাটির নাম ছিল ‘Unhappy One’। কবিতাটি বাংলায় তরজমা করেছেন নবারুণ ভট্টাচার্য এবং বাংলায় নামকরণ করা হয়েছে ‘অসুখী একজন’। এখন প্রশ্ন হতে পারে এই নামকরণ কতখানি সার্থক হয়েছে?
আলোচ্য কবিতাটি জনৈক কথকের জবানিতে বিবৃত হয়েছে। কবিতার শুরুতেই একটি মেয়ের কথা বলা হয়েছে। সে কথকের প্রেয়সী। কথক তাকে অপেক্ষায় রেখে বহুদূরে চলে যায়। মেয়েটি জানতো না যে তার প্রিয়তম আর কোনোদিন ফিরবে না। তাই সে অপেক্ষা করতে থাকে। বহতা নদীর মতো সময় পেরিয়ে যায় এবং অপেক্ষারত মেয়েটির হৃদয় দুঃখে-বেদনায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তারপর একদিন যুদ্ধ শুরু হয়। সমস্ত ঘরবাড়ি ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, মন্দিরে স্থাপিত দেবমূর্তি ভূপতিত হয় এবং অসংখ্য নিরীহ মানুষ মারা যায়। কিন্তু সেই মেয়েটির মৃত্যু হয় না। শাশ্বত প্রেমের আলোকবর্তিকা নিয়ে বেঁচে থাকে সেই অপেক্ষারত মেয়েটি। অতএব বলা যায়, এই মেয়েটিই হল কবিতার প্রধান চরিত্র। তাকেই বলা হয়েছে অসুখী একজন এবং তার দুঃখের কথাই আলোচ্য কবিতার মূল উপজীব্য। এবার নামকরণ প্রসঙ্গে আসা যাক।
যেকোনো সাহিত্যিক রচনার নামকরণের বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। নামকরণের কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি নেই। নামকরণ হতে পারে প্রধান চরিত্রকেন্দ্রিক, নাহয় প্রধান ঘটনাকেন্দ্রিক, নতুবা ব্যঞ্জনাধর্মী। আমাদের পাঠ্য ‘অসুখী একজন’ কবিতার নামকরণের ক্ষেত্রে প্রধান চরিত্রের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এবং এই নামকরণ সম্পূর্ণ সার্থক হয়েছে।
৩) “সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না”- মেয়েটি কে? তার মৃত্যু না হওয়ার কারণ কী? ১+৪
অথবা,
“শিশু আর বাড়িরা খুন হলো।/ সেই মেয়েটির মৃত্যু হলো না”- ‘শিশু আর বাড়িরা’ খুন হলো কেন? মেয়েটি কে? তার মৃত্যু না হওয়ার কারণ কী? ১+১+৩
উত্তরঃ চিলির কবি পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যে যুদ্ধের উল্লেখ রয়েছে, সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে শিশু এবং বাড়ির (অর্থাৎ, বাড়ির সকল লোকজন) মারা গিয়েছিল, কেবল একটি মেয়ের মৃত্যু হয়নি।
উদ্ধৃত অংশে উল্লেখিত ‘মেয়েটি’ হলো কথকের প্রিয় নারী।
কবিতার শুরুতেই দেখা যায় যে কথক তার প্রিয় নারীকে ছেড়ে বহুদূরে চলে যাচ্ছেন। এই কথক সম্পর্কে কবিতায় বিশেষ কিছু বলা হয়নি তবে অনুমান করা যায় যে তিনি একজন যোদ্ধা অথবা একজন বিপ্লবী। কর্তব্যের আহ্বানে তিনি তার প্রিয় মানুষকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তিনি নিজে জানতেন যে তার আর ফেরা হবে না কিন্তু সেই মেয়েটি তা জানত না। মেয়েটি তার প্রিয়জনের ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন গুনতে শুরু করে। দিন ফুরোয়, সপ্তাহ পার হয়ে বছর কেটে যায়। কিন্তু, মেয়েটির প্রতীক্ষার অবসান হয় না।
এদিকে, রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো ভয়ঙ্কর যুদ্ধ নেমে আসে। সমস্ত সমতলে আগুন লেগে যায়। নিষ্পাপ শিশু এবং সাধারণ মানুষ খুন হয়। শান্ত, নিরীহ দেবতারাও যুদ্ধের করালগ্রাস থেকে বাঁচতে পারেনি। শহরের সব ঘরবাড়ি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। কিন্তু সেই মেয়েটির মৃত্যু হয় না। কারণ, এই মেয়েটি হলো শাশ্বত প্রেমের প্রতীক। যুদ্ধ আর সবকিছু ধ্বংস করতে পারলেও ভালোবাসার মৃত্যু হয় না। হিংসা বনাম প্রেমের লড়াইয়ে সবসময় প্রেমেরই জয় হয় এবং হিংসার পরাজয় ঘটে। তাই যুদ্ধের পরেও সেই মেয়েটির মৃত্যু হয়নি।
Google News এ আমাদের ফলো করুন
ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুক, WhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।
Please do not share any spam link in the comment box