মাধ্যমিকের বাংলা পাবলো নেরুদার অসুখী একজন প্রশ্ন ও উত্তর - Asukhi Ekjon by Pablo Neruda Questions and Answers

পাবলো নেরুদার অসুখী একজন প্রশ্ন ও উত্তর: প্রতিবছর মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন (Asukhi Ekjon by Pablo Neruda Questions and Answers Madhyamik Bengali Suggestion) থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মাধ্যমিক বাংলা সিলেবাসের পাবলো নেরুদার "অসুখী একজন" র সমস্ত প্রশ্নোত্তর। 

এখানে মাধ্যমিক বাংলা ‘অসুখী একজন’ কবিতার প্রশ্ন উত্তর যেমন বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল। যে গুলি পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন। নিচে Asukhi Ekjon by Pablo Neruda Questions and Answers ‘অসুখী একজন’ কবিতার MCQ, SAQ প্রশ্ন উত্তর গুলি যত্ন সহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।

মাধ্যমিকের বাংলা পাবলো নেরুদার অসুখী একজন প্রশ্ন ও উত্তর - Asukhi Ekjon by Pablo Neruda Questions and Answers




মাধ্যমিকের বাংলা পাবলো নেরুদার অসুখী একজন প্রশ্ন ও উত্তর - Asukhi Ekjon by Pablo Neruda Questions and Answers



অসুখী একজন - পাবলো নেরুদা

‘অসুখী একজন’ কবিতাটি আসলে পাবলো নেরুদার লেখা স্প্যানিশ কাব্যগ্রন্থ ‘Estravagario’-এর La Desdichada শীর্ষক কবিতাটি যেটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন নবারুণ ভট্টাচার্য। মূল কাব্যগ্রন্থের নাম ‘বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে’। আলোচ্য পোস্টে পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতার গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।



কবি পরিচিতি পাবলো নেরুদা

পাবলো নেরুদা ছিলেন একজন চিলিয়ান কবি ও রাজনীতিবিদ। তাঁর জন্ম চিলির সীমান্ত শহর পারলেতে ১৯০৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল নেকতালি রিকার্দো রেয়েন্স বাসোয়ালতো। পাবলো নেরুদা তার ছদ্মনাম হলেও পরে নামটি আইনি বৈধতা লাভ করে। 

মানুষের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে তিনি যেমন কবিতা লিখেছেন তেমনই লিখেছেন ঐতিহাসিক মহাকাব্য, প্রকাশ্য রাজনৈতিক ইস্তাহার। ১৯২৭ সালে চিলির সরকার তাঁকে রাষ্ট্রদূত করে রেঙ্গুনে পাঠায় । এ পদে  থেকে তিনি চিন, জাপান, কলম্বোসহ ভারতেও আসেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি পরলোকগমন করেন।

পাবলো নেরুদার লেখা বিখ্যাত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

The Captain's Verses, Residence on Earth, Extravagaria, Twenty Love Poems and a Song of Despair, Still Another Day, The Separate Rose, Winter Garden, The Yellow Heart, Stones of the Sky etc.



অনুবাদক পরিচিতি নবারুণ ভট্টাচার্য (১৯৪৮ - ২০১৪)

নবারুণ ভট্টাচার্য মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বিখ্যাত নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্য এবং মাতা স্বনামধন্যা সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী। স্কুল জীবনে বালিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হল -  'এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না',  'রাতের সার্কাস' প্রভৃতি।  উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে  'হারবার্ট' 'কাঙাল মালসাট' প্রভৃতি।

তরজমা: নবারুণ ভট্টাচার্য

ইংরেজি অনুবাদ:  The unhappy one .

মূলগ্রন্থ: বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে


"অসুখী একজন" কবিতার ভাববস্তু

বিশ্বখ্যাত কবি পাবলো নেরুদার রচিত 'অসুখী একজন' কবিতাটি আত্মকথনের আদলে রচিত। কথকের জবানিতে কবিতাটি শুরু হয় । তাঁর প্রিয়তমাকে দুয়ারে অপেক্ষায় রেখে বহুদূরে চলে যায়। প্রিয়তম ফিরে আসবে এই সরল বিশ্বাসে অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকে কথকের প্রিয়তমা । সে জানতো না যে তার প্রিয়তম আর কখনো ফিরে আসবে না । সময় বহমান। তাই সপ্তাহ মাস বছর কেটে যায়।কথক আর ফিরে আসেন না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফিকে হয়ে আসে কথকের স্মৃতি।কথকের পায়ের চিহ্ন বৃষ্টিতে ধুয়ে যায়। রাস্তায় ঘাস জন্মায়। অপেক্ষমান মেয়েটির মাথায় পাথরের মতো একটির একটি বছর নেমে আসে। তারপর আসে বীভৎস এক  প্রাণঘাতী যুদ্ধ।  রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো যুদ্ধ, যার নিষ্ঠুরতায় বাদ যায়নি বাড়ির শিশুরাও। সমস্ত স্মৃতি মুছে গেলেও বেঁচে থাকে কবির সেই প্রিয়তমা মেয়েটি। কারন প্রেম শ্বাশত , তার মৃত্যু নেই। চিরন্তন প্রেম মানুষকে মরতে মরতে বাঁচতে শেখায়। যুদ্ধের আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে ।বাদ যায়না দেবালয়ও । শান্ত হলুদ ধ্যানমগ্ন দেবতারা টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ে মন্দির থেকে। এই দুঃসময়ে দেবতারা মানুষকে বাঁচাতে ও স্বপ্ন দেখাতে ব্যর্থ হন। যুদ্ধের রোষানলে কবির ফেলে আসা বাড়ি,বারান্দা, ঝুলন্ত বিছানা, চিমনি, জলতরঙ্গ সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংসের  তীব্রতাকে আরো স্পষ্ট করে রক্তের কালো দাগ। আর এই ধ্বংসের মধ্যে জেগে থাকে মৃত্যুহীন ভালোবাসা; যে ভালোবাসা নিয়ে কবির জন্য অপেক্ষা করে থাকে তার প্রিয়তমা।



অসুখী একজন কবিতার MCQ প্রশ্নোত্তর (বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর) - Asukhi Ekjon MCQ Questions and Answers

প্রশ্নঃ ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি তর্জমা করেছেন— 

(A) সুকান্ত ভট্টাচার্য 

(B) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

(C) কাজী নজরুল ইসলাম 

(D) নবারুণ ভট্টাচার্য 

Ans: (D) নবারুণ ভট্টাচার্য


প্রশ্নঃ “ নেমে এল তার মাথার উপর ” — কী নেমে এল ? 

(A) মেঘ 

(B) বছর 

(C) দিন 

(D) মাস 

Ans: (B) বছর


প্রশ্নঃ ‘ আমি ’ কোথায় ঘুমিয়েছিলাম ? 

(A) ঝুলন্ত বিছানায় 

(B) নাটমন্দিরে 

(C) গাছের ছায়ায়

(D) রাস্তায়

Ans: (A) ঝুলন্ত বিছানায়


প্রশ্নঃ “ তারপর যুদ্ধ এল ” –এখানে কোন যুদ্ধের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন কবি ? 

(A) প্রথম বিশ্বযুদ্ধ

(B) ভারত – চিন যুদ্ধ 

(C) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

(D) স্পেনের গৃহযুদ্ধ

Ans: (D) স্পেনের গৃহযুদ্ধ


প্রশ্নঃ “ হেঁটে গেল গির্জার এক – । ” ( শূন্যস্থান পূরণ ) 

(A) মৌলবি 

(B) নান 

(C) সন্ন্যাসী 

(D) পুরোহিত 

Ans: (B) নান 


প্রশ্নঃ “ অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে ” – কোথায় দাঁড় করিয়ে রাখে ? 

(A) দরজায় 

(B) রাস্তায় 

(C) বাড়িতে 

(D) লাইব্রেরিতে

Ans: (A) দরজায় 


প্রশ্নঃ ‘ অসুখী একজন ’ কবিতায় কবি কোথায় চলে গেছেন ? 

(A) কাছে 

(B) বাইরে

(C) বারান্দায় 

(D) দূরে 

Ans: (D) দূরে



অসুখী একজন অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর - অসুখী একজন কবিতার SAQ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর - Asukhi Ekjon SAQ Question Answer

১. কবি কাকে অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে চলে গিয়েছিলেন?

উত্তরঃ কবি তার প্রিয়তমাকে অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে চলে গিয়েছিলেন। 

২. ‘বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল আমার পায়ের দাগ’ – এর দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তরঃ এর দ্বারা কবি সময়ের প্রবাহমানতাকে বুঝিয়েছেন।

৩. ‘তারপর যুদ্ধ এল’ – যুদ্ধ কেমনভাবে এসেছিল?

উত্তরঃ কবির বিবরণ অনুযায়ী, যুদ্ধ এসেছিল ‘রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো’ বীভৎস রূপ নিয়ে।

৪. যুদ্ধের ফলে কাদের মৃত্যু হয়েছিল?

উত্তরঃ যুদ্ধের ফলে শিশু এবং বাড়িদের মৃত্যু হয়েছিল।

৫. “তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।’ – কারা স্বপ্ন দেখাতে পারল না?

উত্তরঃ শান্ত হলুদ দেবতারা আর স্বপ্ন দেখাতে পারল না।

৬. কবির মিষ্টি বাড়িটির পরিচয় দাও।

উত্তরঃ কবির সেই মিষ্টি বাড়ির বারান্দায় একটা ঝুলন্ত বিছানা ছিল, আর ছিল ছড়ানো করতলের মতো পাতাযুক্ত একটা গোলাপি গাছ, চিমনি এবং প্রাচীন জলতরঙ্গ।

৭. ‘সব চূর্ণ হয়ে গেল, – কী কী চূর্ণ হয়েছিল?

উত্তরঃ যুদ্ধের ফলে কবির সেই মিষ্টি বাড়ি এবং তার প্রিয় জিনিসগুলি যেমন, ঝুলন্ত বিছানা ছিল, ছড়ানো করতলের মতো পাতাযুক্ত একটা গোলাপি গাছ, চিমনি এবং প্রাচীন জলতরঙ্গ চুর্ণ হয়েছিল।

৮. ‘যেখানে ছিল শহর’ – সেখানে কী হয়েছিল?

উত্তরঃ যেখানে শহর ছিল, যুদ্ধের পরে সেখানে অবশিষ্ট ছিল কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা এবং রক্তের একটা কালো দাগ।

৯. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটির কবির প্রকৃত নাম কী?

উত্তরঃ ‘অসুখী একজন’ কবিতাটির কবি পাবলো নেরুদা যার আসল নাম নেফতালি রিকার্ডো রেইয়েস বাসোয়ালতো।

১০. ‘শিশু আর বাড়িরা খুন হলাে’- ‘শিশু আর বাড়িরা’ খুন হয়েছিল কেন?

উত্তরঃ যুদ্ধের অনিবার্য ফল হিসেবে শিশু আর বাড়িরা খুন হয়েছিল।



অসুখী একজন কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর - Asukhi Ekjon Short Type Question and Answer


১) “সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে।” কোন্ কোন্ জিনিসের কথা বলা হয়েছে? এই পরিণতির কারণ কী? ১+২ [মাধ্যমিক ২০১৮]

উত্তরঃ পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যেসব জিনিস আগুনে নষ্ট হয়েছিল সেগুলি হল- কথকের মিষ্টি বাড়ি, বারান্দায় থাকা ঝুলন্ত বিছানা, চিমনি, জলতরঙ্গ এবং সেই গোলাপি গাছ যার পাতাগুলি ছিল ছড়ানো করতলের মত।

এই পরিণতির কারণ ছিল একটি যুদ্ধ। কবির মতে, সেই যুদ্ধ ছিল ‘রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো’। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে যেমন বহু জনপদ ধ্বংস হয়ে যায় তেমনই সেই ভয়াবহ যুদ্ধের ফলে শহরের করুণ পরিণতি হয়েছিল।


২) “সে জানত না আমি আর কখনাে ফিরে আসব না।”- ‘সে’ কে? ‘আমি আর কখনাে ফিরে আসব না’ বলার কারণ কী? ১+২ [মাধ্যমিক ২০২০]

উত্তরঃ পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতার শুরুতেই একটি মেয়ের উল্লেখ রয়েছে। উদ্ধৃত অংশে ‘সে’ বলতে কথকের প্রিয় সেই নারীর কথা বলা হয়েছে।

আলোচ্য কবিতাটি স্পেনের গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছিল। কবিতার কথক সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলা না হলেও এটা অনুমান করা যায় যে তিনি একজন যোদ্ধা অথবা একজন বিপ্লবী। দেশের প্রয়োজনেই তাকে তার পরিবার তথা প্রেয়সীকে ছেড়ে যেতে হচ্ছে। যেহেতু যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সৈনিকের ফিরে আসার সম্ভাবনা কম থাকে, তাই কথক ফিরে না আসার বলেছেন।


৩) “তারপর যুদ্ধ এল”- যুদ্ধ কীভাবে এসেছিল? ফল কী হয়েছিল? ১+২

উত্তরঃ পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি একটি যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে। কবির মতে, সেই যুদ্ধ এসেছিল ‘রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো’।

আগ্নেয়পাহাড় থেকে লাভা নিঃসরণের ফলে যেমন মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, কবিতায় উল্লেখিত যুদ্ধের প্রকৃতি ছিল তেমনি ভয়াবহ, তেমনি সর্বগ্রাসী। যুদ্ধের ফলে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, এমনকি শিশুরাও এর হাত থেকে রেহাই পায়নি। কথকের শহর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। শুধু তাই নয়, যুদ্ধের ফলে শান্ত, হলুদ দেবতারাও ভূপাতিত হয়েছিল।


৪) “তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।” – কারা কী কারণে স্বপ্ন দেখতে পারল না? ১+২

উত্তরঃ পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতায় দেবতাদের সম্পর্কে একথা বলা হয়েছে। কবি বলেছেন তারা (অর্থাৎ, দেবতারা) আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।

শান্ত, হলুদ দেবতারা হাজার হাজার বছর ধরে ধ্যানে ডুবে ছিল। মানুষে মানুষে বিবাদ বাঁধলেও দেবতারা সবসময় নির্বিরোধ প্রকৃতির হয়। তাই সারাক্ষণ তারা স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকত। তারপর হঠাৎ একদিন শহরজুড়ে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠল। সেই সর্বগ্রাসী যুদ্ধের আগুনে বহু মানুষের মৃত্যু হল, ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ল এবং দেবতারাও ভূপতিত হল। এইজন্য তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।



অসুখী একজন রচনাধর্মী প্রশ্ন - অসুখী একজন কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Asukhi Ekjon Descriptive Questions and Answers

১) “যেখানে ছিল শহর/ সেখানে ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা।”- ‘অসুখী একজন’ কবিতা অবলম্বনে শহরের এই পরিণতি কীভাবে হল লেখাে। [মাধ্যমিক ২০১৭]

অথবা, ” তারপর যুদ্ধ এলো”- যুদ্ধ আসার আগের প্রেক্ষাপট এবং যুদ্ধের পরবর্তী অবস্থা কবিতা অনুসারে লেখো।

উত্তরঃ পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত একটি অসাধারণ কবিতা। যুদ্ধকে বলা হয় মানবতার শত্রু। আলোচ্য কবিতাতে সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয়েছে। যুদ্ধের নির্মম আঘাতে একটি প্রাণবন্ত শহর কীভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল, কবি সেই কথাই তুলে ধরেছেন।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে শহরের অবস্থা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিল। এক জায়গায় উল্লেখ আছে- “একটা কুকুর চলে গেল, হেঁটে গেল গির্জার এক নান”। আরেক জায়গায় বলা হয়েছে- “ঘাস জন্মাল রাস্তায়”। এইসব দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে শহরে শান্তিপূর্ণ নীরবতা বজায় ছিল। কিন্তু যুদ্ধের পরে চেনা শহরের ছবিটা পাল্টে গিয়েছিল।

কবি যুদ্ধটাকে রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে যেমন মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু পুড়ে ছারখার হয়ে যায়, তেমনি যুদ্ধের ফলে সমস্ত সমতলে আগুন ধরে গেল, বহু নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাল, এমনকি দেবতারাও টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ল মন্দির থেকে। আর, কথকের সেই মিষ্টি বাড়ি এবং তার প্রিয় জিনিসগুলি সব চূর্ণ হয়ে গেল। শহর জুড়ে ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা এবং পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শহরের বুকে দগদগে ক্ষতের মতো ‘রক্তের একটা কালো দাগ’ এঁকে দিয়ে গেল।


২) ‘অসুখী একজন’ কবিতার নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো।

উত্তরঃ চিলিয়ান কবি পাবলো নেরুদার লেখা একটি অনবদ্য কবিতা হল ‘অসুখী একজন’। স্প্যানিশ ভাষায় লিখিত কবিতাটির নাম ‘La Desdichada’। ইংরেজি অনুবাদে কবিতাটির নাম ছিল ‘Unhappy One’। কবিতাটি বাংলায় তরজমা করেছেন নবারুণ ভট্টাচার্য এবং বাংলায় নামকরণ করা হয়েছে ‘অসুখী একজন’। এখন প্রশ্ন হতে পারে এই নামকরণ কতখানি সার্থক হয়েছে?

আলোচ্য কবিতাটি জনৈক কথকের জবানিতে বিবৃত হয়েছে। কবিতার শুরুতেই একটি মেয়ের কথা বলা হয়েছে। সে কথকের প্রেয়সী। কথক তাকে অপেক্ষায় রেখে বহুদূরে চলে যায়। মেয়েটি জানতো না যে তার প্রিয়তম আর কোনোদিন ফিরবে না। তাই সে অপেক্ষা করতে থাকে। বহতা নদীর মতো সময় পেরিয়ে যায় এবং অপেক্ষারত মেয়েটির হৃদয় দুঃখে-বেদনায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তারপর একদিন যুদ্ধ শুরু হয়। সমস্ত ঘরবাড়ি ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, মন্দিরে স্থাপিত দেবমূর্তি ভূপতিত হয় এবং অসংখ্য নিরীহ মানুষ মারা যায়। কিন্তু সেই মেয়েটির মৃত্যু হয় না। শাশ্বত প্রেমের আলোকবর্তিকা নিয়ে বেঁচে থাকে সেই অপেক্ষারত মেয়েটি। অতএব বলা যায়, এই মেয়েটিই হল কবিতার প্রধান চরিত্র। তাকেই বলা হয়েছে অসুখী একজন এবং তার দুঃখের কথাই আলোচ্য কবিতার মূল উপজীব্য। এবার নামকরণ প্রসঙ্গে আসা যাক।

যেকোনো সাহিত্যিক রচনার নামকরণের বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। নামকরণের কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি নেই। নামকরণ হতে পারে প্রধান চরিত্রকেন্দ্রিক, নাহয় প্রধান ঘটনাকেন্দ্রিক, নতুবা ব্যঞ্জনাধর্মী। আমাদের পাঠ্য ‘অসুখী একজন’ কবিতার নামকরণের ক্ষেত্রে প্রধান চরিত্রের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এবং এই নামকরণ সম্পূর্ণ সার্থক হয়েছে।


৩) “সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না”- মেয়েটি কে? তার মৃত্যু না হওয়ার কারণ কী? ১+৪

অথবা, 

“শিশু আর বাড়িরা খুন হলো।/ সেই মেয়েটির মৃত্যু হলো না”- ‘শিশু আর বাড়িরা’ খুন হলো কেন? মেয়েটি কে? তার মৃত্যু না হওয়ার কারণ কী? ১+১+৩

উত্তরঃ চিলির কবি পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যে যুদ্ধের উল্লেখ রয়েছে, সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে শিশু এবং বাড়ির (অর্থাৎ, বাড়ির সকল লোকজন) মারা গিয়েছিল, কেবল একটি মেয়ের মৃত্যু হয়নি।

উদ্ধৃত অংশে উল্লেখিত ‘মেয়েটি’ হলো কথকের প্রিয় নারী।

কবিতার শুরুতেই দেখা যায় যে কথক তার প্রিয় নারীকে ছেড়ে বহুদূরে চলে যাচ্ছেন। এই কথক সম্পর্কে কবিতায় বিশেষ কিছু বলা হয়নি তবে অনুমান করা যায় যে তিনি একজন যোদ্ধা অথবা একজন বিপ্লবী। কর্তব্যের আহ্বানে তিনি তার প্রিয় মানুষকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তিনি নিজে জানতেন যে তার আর ফেরা হবে না কিন্তু সেই মেয়েটি তা জানত না। মেয়েটি তার প্রিয়জনের ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন গুনতে শুরু করে। দিন ফুরোয়, সপ্তাহ পার হয়ে বছর কেটে যায়। কিন্তু, মেয়েটির প্রতীক্ষার অবসান হয় না।

এদিকে, রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো ভয়ঙ্কর যুদ্ধ নেমে আসে। সমস্ত সমতলে আগুন লেগে যায়। নিষ্পাপ শিশু এবং সাধারণ মানুষ খুন হয়। শান্ত, নিরীহ দেবতারাও যুদ্ধের করালগ্রাস থেকে বাঁচতে পারেনি। শহরের সব ঘরবাড়ি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। কিন্তু সেই মেয়েটির মৃত্যু হয় না। কারণ, এই মেয়েটি হলো শাশ্বত প্রেমের প্রতীক। যুদ্ধ আর সবকিছু ধ্বংস করতে পারলেও ভালোবাসার মৃত্যু হয় না। হিংসা বনাম প্রেমের লড়াইয়ে সবসময় প্রেমেরই জয় হয় এবং হিংসার পরাজয় ঘটে। তাই যুদ্ধের পরেও সেই মেয়েটির মৃত্যু হয়নি।



Google News এ আমাদের ফলো করুন


Gksolves Google News

ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুক, WhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Ads Area