উদ্ভিদ কলাতন্ত্র - Plant tissue in Bengali
উদ্ভিদ কলাতন্ত্র - Plant tissue in Bengali
উদ্ভিদ কলাতন্ত্র কাকে বলে ?
সংজ্ঞা: উদ্ভিদ দেহে একই ধরণের কাজ করে এরুপ একই বা ভিন্ন প্রকৃতির কলার একত্রে সমাবেশকে কলাতন্ত্র বলে।
প্রকার: কলার অবস্থান ও কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে উদ্ভিদে প্রধানত তিনটি কলাতন্ত্র দেখা যায়।
যথা:
(1) ত্বক কলাতন্ত্র (Epidermal tissue system)
(2) আদি কলাতন্ত্র (Ground tissue system)
(3) সংবহন কলাতন্ত্র (Vascular tissue system)
❏ ত্বক কলাতন্ত্র:
পােটোডার্ম থেকে সৃষ্ট বিভিন্ন উদ্ভিদ অঙ্গের আবরণ সৃষ্টিকারী কলাতন্ত্রকে ত্বক কলাতন্ত্র বলে।
❏ গঠন: ত্বক কলাতন্ত্র তিনটি গঠন সহযােগে গঠিত-
1. ত্বক কোশ
2. ত্বক কোশের উপবৃদ্ধি এবং
3. বিভিন্ন প্রকার রন্ধ্র।
1. ত্বক কোশ - ইহা উদ্ভিদ দেহের অভ্যন্তরস্থ কোমল কলাগুলিকে বাইরের প্রতিকুলতা থেকে রক্ষা করে।
2. ত্বক কোশের উপবৃদ্ধি - ত্বকের উপরে কিছু ত্বকরােম বা উপবৃদ্ধি থাকে, যা জীবজন্তুর আক্রমণ থেকে গাছের অঙ্গকে রক্ষা করে।
3. বিভিন্ন প্রকার রন্ধ্র - ত্বকে অবস্থিত রন্ধ্র গুলির মাধ্যমে গ্যাসীয় পদার্থের আদান প্রদান এবং বাস্পমােচন সংঘটিত হয়।
❏ আদি কলাতন্ত্র:
ভূমি ভাজক কলা থেকে সৃষ্ট উদ্ভিদ দেহের প্রায় অধিকাংশ অংশ অর্থাৎ ত্বক এবং নালিকা বান্ডিলের অন্তর্গত সংবহন কলা ব্যতীত উদ্ভিদদেহের অন্যান্য অংশ আদি কলাতন্ত্র দ্বারা গঠিত।
❏ গঠন বা বিস্তার: আদি কলাতন্ত্র নিম্নলিখিত কয়েক প্রকারের হয়-
1. অধঃস্তক
2. সাধারণ বহিঃস্তর
3. অন্তঃস্বক বা শ্বেতসার আবরণী
4. পরিচক্র
5. মজ্জাংশু
6. মজ্জা
1. অধঃস্তক: অধঃস্তক যান্ত্রিক এবং সংরক্ষণে অংশ গ্রহণ করে।
2. সাধারণ বহিঃস্তর: সাধারণ বহিঃস্তক উদ্ভিদকে দৃঢ়তা প্রদান করে এবং সালােকসংশ্লেষে অংশগ্রহণ করে, এছাড়া খাদ্য ও জল সঞ্চয় করে।
3. মজ্জা প্রধানত: খাদ্য সঞয়ে ভূমিকা গ্রহণ করে।
❏ সংবহন কলাতন্ত্র: প্রােক্যাম্বিয়াম থেকে সৃষ্ট জাইলেম ফ্লোয়েমের সমন্বয়ে গঠিত খাদ্য ও জল পরিবহনকারী কলাতন্ত্রকে সংবহন কলাতন্ত্র বলে।
❏ গঠন: ইহা প্রধানত, জাইলেম এবং ফ্লোয়েম কলার সমন্বয়ে গঠিত।
❏ সংবহন কলা তন্ত্রের কাজ:
(1) খাদ্য উপাদান ও জল পরিবহন করে।
(2) যান্ত্রিক দৃঢ়তা প্রদান করে।
❏ উদ্ভিদ কলাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
➨উদ্ভিদের ত্বক কলার কোশে কোন কোশান্তর রন্ধ্র থাকে না।
➨পাতার এবং কাণ্ডের ত্বককে এপিডারমিস বলে।
➨মূলের ত্বককে এপিব্লেমা বলে।
➨কতকগুলি উদ্ভিদের পত্ৰত্বক কোশের বহিঃপ্রাচীরে প্লাজমােডেসমাটার অবস্থান লক্ষ্য করা যায় একে এক্টোডেসমাটা বলে।
➨কাণ্ডরােম সর্বদা বহুকোশী হয় এবং মূলরােম এককোশী হয়।
➨তুলাের তন্তু আসলে তুলাে বীজের ত্বকরােম।
➨পতঙ্গভুক উদ্ভিদের পরিপাক গ্রন্থি একপ্রকার গ্রন্থিরাম বা কোলেটারস।
➨বিছুটি এবং আলকুশি প্রভৃতি উদ্ভিদের ত্বকের গ্রন্থিময় রােমকে দংশক রােম (Stinging hair) বলে।
➨Mesembryanthemum crystallinum (মেসেমব্রায়ানথিমাম ক্রিস্টালিনীম) নামক উদ্ভিদের ত্বককোশ স্ফীত হয়ে থলির আকার ধারণ করে। এই থলিতে জল সঞ্চিত থাকে। শীতকালে এই জল বরফে পরিণত হয়। এই উদ্ভিদকে বরফ উদ্ভিদ বলে।
➨টমেটো, ঘাস প্রভৃতি উদ্ভিদের পত্রকিনারায় অবস্থিত যে বিশেষ রন্ধ্রের মাধ্যমে বিন্দু বিন্দু জল নির্গত হয় অর্থাৎ নিস্রাবন ঘটে, তাকে জলপত্ররন্দ্র বা ওয়াটার স্টোমাটা বলে।
হাইথােড়ের মধ্যে যে অসংলগ্ন প্যারেনকাইমা কোশ থাকে তাকে এপিথেম বলে।
➨মূলে মজ্জাংশুর পরিবর্তে যােজক কলা থাকে।
➨অন্তঃত্বকের ক্যাসপেরিয়ান ফিতা যুক্ত কোশগুলির সাথে কোনে কোনে স্থানে পাতলা প্রাচীর বিশিষ্ট কোশ দেখা যায়, একে পেরণ কোষ বা প্যাসেজ কোশ বলে।
➨দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের কাণ্ডের অন্তঃত্বকের কোষগুলিতে কোন ক্যাসপেরিয়ান পটি থাকে না পরিবর্তে শ্বেতসারে আবরণী বা স্টার্চ শীষ বা স্টার্চ শীদ থাকে, অর্থাৎ শ্বেতসার দানা সতি একস্তরীয় কোশস্তর দেখা যায়।
➨কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে নালিকা বান্ডিলের চারদিকে ফ্লেরেনকাইমা কলার একটি আবরণ পাওয়া যায় একে হার্ডবাস্ট বা বান্ডিলটুপি বলে।
➨মূলের নালিকাবান্ডিলে প্রােটোজাইলেম পরিধির দিকে এবং মেটাজাইলেম কেন্দ্রের দিকে বিন্যস্ত থাকে, তাকে এক্সার্ক জাইলেম বলে।
➨উদ্ভিদের কাণ্ডের নালিকাবাণ্ডিলে প্রােটোজাইলেম কেন্দ্রের দিকে এবং মেটাজাইলেম পরিধির দিকে বিন্যস্ত থাকে, তাকে এন্ডার্ক জাইলেম বলে।
➨পাতায় মেসার্ক জাইলেম দেখা যায়।
➨জাইলেম জল পরিবহন বা উর্ধ্বমুখী পরিবহনে অংশগ্রহণ করে।
➨ফ্লোয়েম খাদ্য পরিবহন বা নিম্নমুখী পরিবহনে অংশ গ্রহণ করে।
➨জাইলেমের চারটি অংশ- ট্রাকিড, ট্রাকিয়া, জাইলেম প্যারেনকাইমা এবং জাইলেম তন্তু নিয়ে গঠিত। একমাত্র জাইলেম প্যারেনকাইমা সজীব এবং অন্যান্য তিনটি মৃত। তাই জাইলেমকে মৃত কলা বলে।
➨ফ্লোয়েম কলার চারটি অংশ – সীভনল, সঙ্গীকোশ, ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা এবং ফ্লোয়েম তন্তুর সমন্বয়ে গঠিত। একমাত্র ফ্লোয়েম তন্তু মৃত এবং অন্যান্য তিনটি সজীব তাই ফ্লোয়েমকে সজীব কলা বলে।
➨ঘাস জাতীয় উদ্ভিদের পাতার ত্বকের বৃহৎ ও স্ফীত কোশসমূহকে বুলিফর্ম কোশ বা বুদবুদ কোশ বলে।
➨সরিষা গাছের ত্বকের কোশে মাইরােসিন নামক উৎসেচক।
➨জাঙ্গাল উদ্ভিদে নিবেশিত পত্ররন্ধ্র দেখা যায়।
➨রাস্না এবং অর্কিডের বায়বীয় মূলের বাইরের স্তরকে ভেলামেন বলে।
➨কাণ্ডের প্রস্থচ্ছেদে যে এককেন্দ্রীক বলয় দেখা যায় তাদের বৃদ্ধিবলয় বা বর্ষবলয় বলে। ইহা উদ্ভিদের বয়স নির্ণয়ে সাহায্য করে।
কপিরাইট: Sikkharpragati.com এর অনুমতি ছাড়া কোনো অংশ কপি করে অন্য কোনও ওয়েবসাইটে বা ব্লগে ব্যবহার করা অথবা অন্য কোনো উপায়ে প্রকাশ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদি কোনো কারনে লেখার অংশ প্রয়োজন হয় তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে, উপযুক্ত লিঙ্ক সহ সম্পূর্ন সূত্র দিয়ে কপি করার অনুরোধ করা হল। অন্যথায় আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকবো। আপনি কেবলমাত্র পড়াশোনার জন্য আপনার বন্ধু ও আত্মীয়দের হােয়াটসঅ্যাপ টেলিগ্রাম বা ফেসবুক ইত্যাদি প্লাটফর্মে শেয়ার করতে পারেন এমনকি প্রিন্ট ও করতে পারেন তাতে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই।
আমাদের কথা: যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর বা বানান ভুল থাকে, এই ভুল আমাদের অনিচ্ছাকৃত এর জন্য আমরা ক্ষমা প্রার্থী। সঠিকটা অবশ্যই কমেন্ট করে জানান আমরা পরবর্তী ক্ষেত্রে আপডেট করে দেব।
Please do not share any spam link in the comment box