গাছ বাংলা প্রবন্ধ রচনা মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক স্পেশাল
📌পরিবেশ সংরক্ষণে গাছ || একটি গাছ, একটি প্রাণ || পরিবেশ ও মানুষের জীবনে বনভূমির প্রয়োজনীয়তা
“উদ্যানের মাঝে স্রষ্টার নৈকট্য যত
ধরনীর মাঝে আর কোথা নেই তত”
বৃক্ষ মানুষের পরম বন্ধু। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নানা কর্মকান্ডে বৃক্ষ অবদান রেখে চলেছে। পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র রক্ষার জন্য বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের দেশে গাছপালা, সবুজ-শ্যামলে ভরা। চারিদিকে শুধু অপরুপ সবুজ আর সবুজ। কিন্তু সেই অপরুপ সবুজের সমারোহ আর নেই। গত কয়েক দশক ধরে নির্বিচারে বনাঞ্চল কেটে উজাড় করা হচ্ছে। জলাভূমি, সমভূমি, চাষাবাদ ভূমি ভরাট করে বসতি স্থাপন চলছে। কখনও ব্যক্তি স্বার্থে, কখনও প্রকল্প বাস্তবায়নে, আবার কখনও ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে কাটা হচ্ছে গাছ। প্রতিবছর যে পরিমাণ গাছ কাটা হয় সে তুলনায় লাগানো হয় কম। এর ফলে গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যানবাহন কলকারখানা, প্রজ্বলিত আগুন,মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে নির্গত কার্বনডাই-অক্সাইড প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণ করেছে। গাছ বাতাস থেকে কার্বনডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে আর অক্সিজেন ত্যাগ করে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমান বাড়িয়ে দেয়। এতে পরিবেশ সুস্থ ও নির্মল রাখে। আর এ অক্সিজেন মানুষের বেচে থাকার জন্য খুবই জরুরী। কিন্তু গাছ কাটার তুলনায় নতুন গাছ লাগানো হচ্ছে কম। এতে পরিবেশ উষ্ণ হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। এর ফলে অসময় অনাবৃষ্টি, খরা, অতিবৃষ্টি, প্রচন্ড তাপদাহ,ঘূর্ণিঝড়, বণ্যা, জলোচ্ছাস সহ নানা দুর্যোগ ঘটে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। একমাত্র বৃক্ষই প্রকৃতিক পরিবেশ সুস্থ ও নির্মল রাখতে পারে।
ফলদ বৃক্ষ পরিবেশ রক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। গবেষণায় জানাগেছে, ৫০ বছর বয়স্ক একটি ফল গাছ তার সারা জীবনে আমাদের যে উপকার করে তার আর্থিক মূল্য ৩০-৪০ লাখ টাকায় যেয়ে দাঁড়ায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, অক্সিজেন, কাঠের যোগান,প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধসহ মানুষের খাদ্য, পুষ্টি,পশুপাখির খাবার, খাদ্য নিরাপত্তা এবং রপ্তানি আয়বৃদ্ধিসহ নানা সুবিধা আমরা বৃক্ষ থেকে পেয়ে থাকি। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, সু-স্বাস্থের জন্য একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ১১৫ গ্রাম ফল খাওয়া দরকার। কিন্তু প্রয়োজন ও প্রাপ্তির ব্যবধানে আমরা খেতে পারছি মাত্র ৩৫-৪০ গ্রাম। আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থায় চড়াদামে বিদেশী ফল আমদানি করে এ চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। তাই স্বাদে, গন্ধে ও পুষ্টিতে সেরা আমাদের দেশীয় ফলগুলোর উৎপাদন দেশব্যাপী বাড়াতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৭০ প্রকারের দেশীয় ফল জন্মে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০০৫-৬ সালে দেশের প্রধান ফলগুলো যেমন আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, পেঁপে ও তরমুজ চাষের আওতায় ছিল ১ লাখ ২১ হাজার তিন শত হেক্টর জমি। এর থেকে ফলের মোট উৎপাদন হয় ২৯ লাখ ৫১ হাজার ৭’শ মেট্রিক টন। এসব ফলের শতকরা ৬০.৯০ ভাগ উৎপাদন হয় ৪-৫ মাসে আর বাকি ৩৯.১০ ভাগ উৎপাদন হয় অন্য ৭/৮ মাসে। হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০-৩০ মেট্রিক টন তাজা ফলমুল, শাকসবজি ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে রপ্তানী হয়ে থাকে।
বর্ষাকালে বৃক্ষ রোপণের উপযুক্ত সময়। এ সময় প্রচন্ড বৃষ্টি হয় এবং মাটি উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়। বর্ষাকালে শুধু বনজ ও ফলদ বৃক্ষরোপণ করলেই চলবে না, একই সাথে ভেষজ গাছের চারা রোপণ কারাও প্রয়োজন। ঔষধ তৈরীর জন্য ভেষজ গাছ প্রয়োজন আর এসব ভেষজ গাছ খুবই মূল্যবান। বনজ ও ফলদ বৃক্ষের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নানা ধরনের ভেষজ গাছ লাগিয়ে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছে।
পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র রক্ষায় বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে একটি দেশের মোট আয়তনের প্রায় ২৫ ভাগ বনভূমি প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় মোট বনভূমির পরিমাণ খুব কম। দেশের প্রয়োজনের তুলনায় বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় বৃক্ষরোপণকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। বৃক্ষ সম্পদ বৃদ্ধি, সুস্থ নির্মল পরিবেশ ও সংরক্ষনের ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ব্যক্তিস্বার্থে, জাতীয়স্বার্থে এবং আমাদের অস্তিত্ব রক্ষায় সুস্থ সুন্দর পরিবেশ পেতে দেশের প্রতিটি নাগরিককে বেশি করে বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে। কাজেই-
“বৃক্ষ নিধন আর নয়
দেশকে কর বৃক্ষময়”
Please do not share any spam link in the comment box